‘তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার, রাবিতে যেন এক মিলনমেলা

, ক্যাম্পাস

আছিয়া খাতুন, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-08-31 21:25:39

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘আগামীর বাংলাদেশ: তারুণ্যের ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনারটি যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়েছ। যেখানে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলে নির্দ্বিধায় মতামত বিনিময় করছেন। যেখানে নেই কোনো ভেদাভেদ।

শনিবার (৩১ আগস্ট) বিকাল ৪ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে এমন দৃশ্য দেখা যায়।

রাবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই আয়োজনে অতিথি হিসেবে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মঞ্জুর আল মতিন এবং বাংলাদেশ স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার পরিষদের সদস্য সারা আহমেদ সাবন্তী।

বক্তব্যে মানজুর আল মতিন বলেন, একটা সময় ছিল যখন দেয়াল লিখন বা গ্রাফিতে আমার মন ভরতো। আমি বলতাম সেখানে ক্যালিগ্রাফি আমার ভালো নাও লাগতে পারে। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে ক্যালিগ্রাফিও সমান সুন্দর। এই আন্দোলন আমাকে শিখিয়েছে যেমন শ্যামা সংগীত সুন্দর, তেমনি সুন্দর কুরআনের তেলওয়াত। তেমনি সুন্দর মসজিদের ঘণ্টার ধ্বনি। এটাই বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এমন একটা যায়গা যেখানে এই সকল আদর্শ মিলতে পেরেছে, আমরা মিলাতে পেরেছি। এটাই আমাদের সাফল্য। এই সব ভেদাভেদ ভুলে আমরা দাঁড়িয়েছি। এই ভেদাভেদ আমার মধ্যে যেন না আসে। কারন লড়াই কেবল শুরু।

এসময় তিনি বলেন, অনেকে বলছেন, তরুণরা কি জানে? তারা উপদেষ্টা হয়ে বসছেন কেনো? আমার বক্তব্য হলো, এই তরুণরা অনেক কিছুই জানে, আমরা যা জানি না। আমরা বলি মাদরাসা, ইংরেজি মাধ্যম ও বাংলা মাধ্যমের ত্রিমুখী শিক্ষাব্যবস্থা ঠিক না করলে দেশকে একতাবদ্ধ করা যাবে না। কিন্তু তরুণরা করে দেখিয়েছে।

সারা আহমেদ সাবন্তী বলেন, আমি এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছি একজন মা হিসাবে। যখন আমাদের সন্তানদের রক্ত রাজপথে ঝরতে শুরু করলো তখন আর চুপ করে বসে থাকতো পারিনি।

থাকা আমার পক্ষে সম্ভব হয়নি। তার আগে যেদিন ঢাকা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে ঢুকে আহতদের আবার পিটানো হলো সেদিন চিকিৎসক হিসেবে আমি খুব বিপন্ন বোধ করেছি। সবকিছু মিলিয়ে আমিও আন্দোলনে যোগদান করি।

সেমিনারে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমার কাছে এ সময়টা অসম্ভব আনন্দ, বেদনা, আশংকা এবং আশার সময়। এ সব কিছু নিয়েই আমি বেঁচে আছি। আজকের এ সমাবেশটা হলো আনন্দ। আর বেদনার হলো সম্ভবত আজকেও আমরা একজন তরুণকে হারিয়েছি এবং শত শত সন্তান তারা তাদের চোখ হারিয়েছে। জানি না তারা কখনো পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে কিনা। আশঙ্কা হলো গত ১৫ গত বছরে যেই অশুভ শক্তি ও স্বৈরাশাসক জন্ম হয়েছে এবং তাদেরকে মদদ দিয়ে যারা মাথায় তুলে রেখেছে তাদের জন্য।

তিনি বলেন, স্বৈরশাসক কখনো একা একা টিকেনা। কেউ ইচ্ছায় এবং অনিচ্ছায় ভূমিকা পালন করে। ইচ্ছায় যারা ভূমিকা পালন করেছে তারা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যাদেরকে কথিত বুদ্ধিজীবী বলা হয়। একজন পুলিশ বলতে পারে সে হুকুমের চাকর, যাকে বললে সে গুলি ছুড়তে বাধ্য। কিন্তু একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোন হুকুমের  চাকর না। আমরা জানি একটা পশুকে গলায় দড়ি বাঁধলে যেমন সে চলে, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা আমাদের সাথে তেমন আচরণ করেছে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে এই অধ্যাপক বলেন, আরেকটি শ্রেণি আছে যারা সব থেকে বেশি ভূমিকা পালন করেছে, তারা হলো সাংবাদিক। কোনো পশুও স্বেচ্ছায় গলায় দড়ি পরতে চায়না। কিন্তু সাংবাদিক স্বেচ্ছায় তাদের গলায় দড়ি পরেছে।

সেমিনারটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সকল সংগঠনসহ প্রায় সহস্রাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর