চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের অশ্লীল গালিগালাজ, উসকনিমূলক স্ট্যাটাস ও মারধরের সাথে জড়িত ছিলেন এমন ছয় কর্মচারীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত আছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১৫ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা দুপুরের শাটল ট্রেনে একত্রিত হলে সেখান থেকে ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের নেতারা সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফিকে মারধর ও ট্রেন থেকে জোরপূর্বক বের করে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান। সেখানে দ্বিতীয় দফায় তাকে মারধরের চেষ্টা করা হয়। শিক্ষার্থীদের অন্য একটি দল রাফিকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসলে শহীদ মিনারে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মারধরের শিকার হন তারা। সেই হামলায় কয়েকজন কর্মচারীও অংশ নেন। তাদের হামলায় একজন শিক্ষার্থী মারাত্মকভাবে আহত হন। এর আগের দিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই রাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে এক কর্মচারীর নেতৃত্বে হামলা চালানো হয় শিক্ষার্থীদের ওপর।
এসব ঘটনায় ছাত্রলীগের সঙ্গে মিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় কর্মচারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা এবং উসকানি দিয়েছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে তাদের শনাক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িত এই ছয় কর্মচারী হলেন, উপাচার্য অফিসের ঊর্ধ্বতন সহকারী সালেহ আকরাম বাপ্পি, শিক্ষা ও গবেষণা অনুষদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন, অতীশ দীপঙ্কর হলের উচ্চমান সহকারী ইশতিয়াক হোসেন শামীম, মেরিন সাইন্স বিভাগের সাদ্দাম হোসেন, চবি মেডিকেলের উচ্চমান সহকারী তৌহিদুল ইসলাম জিমেল ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের উচ্চমান সহকারী সোয়াইবুল ইসলাম মাসুদ।
এর মধ্যে বাপ্পিকে শহিদ মিনারে শিক্ষার্থীদের মারধর করতে দেখা যায়, মেয়েদের অশ্লিল গালিগালাজ ও মারধর করতে দেখা যায় শরিফ উদ্দিনকে এবং শামীমকে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের জামায়াত শিবির ট্যাগ দিয়ে উসকানিমূলক স্ট্যাটাস দিতে দেখা যায়।
শরিফ উদ্দিনের কাছে মারধর ও গালিগালাজের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের নিষেধ করার সত্ত্বেও নেত্রীর বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছিল। আমরা তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেছিলাম। কাউকে মারধর করা হয়নি।
একইভাবে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন সালেহ আকরাম বাপ্পি। তার দাবি সেদিন শহিদ মিনারে ছিলেন তবে কারও সাথে সংঘর্ষ বা মারধর করেননি।
জিমেলের নামে অশ্লীল গালিগালাজ ও অভিযোগ তুলেছেন ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর দাবি, আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে চবি মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে তাদের শিবির ট্যাগ দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন। তবে জিমেলের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
এছাড়াও সাদ্দামকে প্রক্টর অফিসের সামনে রাফিকে মারধরের সময় দেখা গেছে। যদিও তার ভাষ্য তিনি রাফিকে সেইফ করতে গিয়েছেন।
শামীমের কাছে বিভিন্ন উসকানিমূলক স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, 'ওই সময় আমার আইডি হ্যাক হয়ে গিয়েছিল। আমি কোনো পোস্ট করিনি।'
এর আগে গতবছর ৯ ফেব্রুয়ারি চারুকলা ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এলাকায় আন্দোলনরত অবস্থায় বাংলার মুখ এবং ভিএক্স’র নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের বাধা প্রদান করেন। ব্যানার ফেস্টুন কেড়ে নেন ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের চড়-থাপ্পড় মারেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় একাডেমিক শাখা, রেজিস্ট্রার দপ্তর, (অস্থায়ী) ঊর্ধতন সহকারী সোয়াইবুল ইসলাম মাসুদকে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে।
তবে মাসুদের দাবি সেখানে পলিটিক্যাল গ্রুপের হয়ে গেছিলাম ওদের ফিরিয়ে নিতে কাউকে মারধর করিনি।
একজন কর্মচারী হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নুর আহমদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন কর্মচারী শিক্ষার্থীদের ওপর আঘাত হানার কোনো এখতিয়ার নেই। যদি আমাদের কাছে কেউ এটা নিয়ে অভিযোগ করে প্রমাণ থাকা সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চট্টগ্রামের সমন্বয়ক ও ভুক্তভোগী খান তালাত মাহমুদ রাফির কাছে এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, উসকানি ও হেনস্তার সাথে জড়িত কর্মকর্তা - কর্মচারীসহ যেই হোক না কেন আমারা তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নিব। আমরা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার অপেক্ষা করছি। ভিভিন্ন ফুটেজ ও ভুক্তভোগীদের বর্ণনা থেকে তাদেরকে আমরা শনাক্ত করার চেষ্টা করছি।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত ছয়জনই শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপের সাথে জড়িত ছিল। এর মধ্যে সালেহ আকরাম বাপ্পি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, শরিফ উদ্দিন সাবেক সহ সভাপতি, শামিম সাবেক উপ-আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক এছাড়াও অন্যদের ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক গ্রুপের সাথে সংযুক্ততার প্রমাণ মেলেছে। কনকর্ড গ্রুপের নেতা ছিলেন জিমেল, বাংলার মুখের কর্মী মাসুদ বিজয়(মকুর) কর্মী ছিলেন সাদ্দাম। পরে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী ও অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতারের সময় তারা বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ পায়।