ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্লাস-পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম জুলাই মাস থেকেই বন্ধ আছে। একদিকে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সংক্রান্ত আন্দোলন, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন; যার প্রভাবে জুলাই-আগস্ট গড়িয়ে সেপ্টেম্বর মাসেও শুরু হয়নি ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম।
এদিকে, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাইছেন তারা।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বরতদের সঙ্গে কথা বললে তারা বার্তা২৪.কমকে এসব কথা বলেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১৪তম ব্যাচের ৮ম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, টেলিভিশন ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা ৭ জুলাই হওয়ার কথা ছিল, ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাংগুয়েজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ৩ জুলাই হওয়ার কথা ছিল। এছাড়াও আরও অনেক বিভাগে রুটিন সময় অনুযায়ী মিডটার্ম পরীক্ষার সময় পার হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১৪ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফারিহা নওশিন বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ১৪ জুলাই। শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলনের ফলে এটি বন্ধ হয়েছে। পরবর্তীতে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন আমরাও একাডেমিক কার্যক্রমকে বয়কট করেছি। তবে এখন সবকিছু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে, তাই আমরা আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের লিখিতভাবে আমাদের কিছু দাবি জানিয়েছি। সেগুলো দ্রুত মেনে নিয়ে যেন আমাদের ক্লাস পরীক্ষা শুরু করা হয়, সেটাই আমরা চাই। দ্রুত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু না করলে সেশন জটের আশঙ্কা রয়েছে।
টেলিভিশন ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা শিক্ষকদের আন্দোলনের ফলে স্থগিত ছিল। পরবর্তীতে ছাত্র আন্দোলন থেকে সরকার পতনের আন্দোলন এবং তারপর থেকে এখন অবধি আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। এমতাবস্থায় অতি দ্রুত আমাদের পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত করার দাবি জানাই। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিলে আমরা সেশনজটের চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারব।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২০২১ সেশনের শিক্ষার্থী রাফিদ বিন ইসলাম বার্তা২৪.কম-কে জানান, আমাদের এমনিতেই করোনা মহামারির পর থেকে দেরিতে ক্লাস শুরু হয়েছিল। তারপর থেকে অন্যান্য অনেক বিভাগ দ্রুত সেমিস্টার শেষ করতে দেখেছি, কিন্তু আমাদের বিভাগ পুরো ৬ মাসেই সেমিস্টার অব্যাহত রাখে। যার ফলে আমাদেরই অন্যান্য অনেক বিভাগের ব্যাচমেটরা আমাদের চেয়ে ২-১ সেমিস্টার এগিয়ে। এখন আবার ২ মাস যাবৎ ক্লাস শুরু হচ্ছে না, রুটিন অনুযায়ী মিডটার্ম পরীক্ষার সময় হয়ে আসছে। তাই আমাদের দাবি- দ্রুত ক্লাস শুরু হোক এবং সেশন জটিলতা কাটানোর পদক্ষেপ নেয়া হোক।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ড. মোহাম্মদ ইসমাইলকে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত করা হলেও মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়োগ প্রজ্ঞাপন এখনো জারি করা হয়নি। যার ফলে পরীক্ষা শুরুসহ একাডেমিক কার্যক্রম আরম্ভ করার ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে কিছুটা অপারগ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান দায়িত্ব গ্রহণের পর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অস্থিরতা দূর করে একাডেমিক কার্যক্রম চালু করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। যত দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য নিয়োগ হবে আমার কাজ করতে সহজ হবে।’