জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসে এসে গণপিটুনির শিকার হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ নেতা শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ গণি মোল্লা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এ বি এম আজিজুর রহমান স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ঘটনায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য শৃঙ্খলা সংক্রান্ত অধ্যাদেশ- ২০১৮-এর ৩(২)(গ) ধারা অনুযায়ী ইতিহাস বিভাগের ৪৪ ব্যাচের জুবায়ের আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫ ব্যাচের রাজু আহাম্মদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৬ ব্যাচের মোহাম্মদ রাজন মিয়া, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭ ব্যাচের সোহাগ মিয়া, ইংরেজি বিভাগের ৪৯ ব্যাচের হামিদুল্লাহ্ সালমান, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ৪৯ ব্যাচের মো. আতিকুজ্জামান আতিক, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৯ ব্যাচ মো. আহসান লাবীব ও ইংরেজী বিভাগের ৫০ ব্যাচের মো. মাহমুদুল হাসান রায়হানকে বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) অপরাহ্ন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় হতে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জানানো যাচ্ছে যে, ১৮-৯-২০২৪ তারিখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-২০১০ শিক্ষাবর্ষের ৩৯তম ব্যাচের ইতিহাস বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শামীম মোল্লার অনাকাঙ্খিত মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে প্রাপ্ত প্রমাণাদির (ভিডিও ফুটেজ ও ফটোগ্রাফ) উপর ভিত্তি করে ঘটনার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের অপরাধ বিবেচনা করে তাদেরকে এ শাস্তি প্রদান করা হলো।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এ সংক্রান্ত কিছু ভিডিও ফুটেজ থেকে নিরাপত্তা অফিসের তালা ভাঙা ও শামীমকে বেধড়ক মারধরের ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী কয়েকজনকে চিহ্নিত করা গেছে। তারা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩তম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজু আহমেদ ও ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাজন হাসান, ইংরেজি ৪৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদুল্লাহ সালমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে শামীম মোল্লাকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রাজু আহমেদ, রাজন হাসান, হামিদুল্লাহ সালমান ও এমএন সোহাগ। তবে মারধরের বিষয়টি স্বীকার করে সাঈদ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘কেউ তাকে (শামীম) হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করেনি। বিশ^বিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি সেখানে দেখতে গিয়েছিলাম। তবে একজন মানুষ যিনি নিজের পায়ে হেঁটে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন আর কিছুক্ষণের মধ্যে মারা গেছেন, এর রহস্য উদঘাটন করা জরুরি।’
প্রসঙ্গত, নিহত শামীম আহমেদ গণি মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। নিহত শামীম মোল্লা আশুলিয়া থানার কাঠগড়া এলাকার মোল্লাবাড়ীর বাসিন্দা। তার পিতা ইয়াজউদ্দিন মোল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা অফিসের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ফটকসংলগ্ন একটি দোকানে অবস্থান করছিলেন শামীম মোল্লা। খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সেখানে গিয়ে তাকে আটক করেন। তখন শামীমকে ১৫ জুলাইয়ের হামলার ঘটনায় জড়িত থাকা ও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে গুলি ছোঁড়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আহসান লাবীব। তবে হামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলে শামীমকে গণধোলাই দেন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ ভূঁইয়ার নির্দেশে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আতিককে নেতৃত্ব দিতে দেখা যায়।
এদিকে প্রথম দফা মারধরের পর খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় শামীমকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসা হয়। তাকে নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে আসার খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা সেখানে জড়ো হয়। পরে সেখানেও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তখন শামীমকে নিরাপত্তা শাখার ভেতরে নিয়ে গেইটে তালা দিয়ে রাখা হয়। তবে গেইটের তালা ভেঙে তাকে আবারও গণধোলাই দেয় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন সমন্বয়ককেও দেখা গেছে, তবে তারা মারধরে অংশ নিয়েছে কিনা- সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।