মাত্র তিন শিক্ষক দিয়েই একাডেমিক কার্যক্রম চালাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ। ফলে শিক্ষার্থীরা যথাযথ শিক্ষার্জনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি শিক্ষকরাও অতিরিক্ত কর্মভারে মানসিক ও একাডেমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগটিতে বর্তমানে অধ্যয়নরত স্নাতকের ব্যাচ চারটি ও স্নাতকোত্তরের ব্যাচ দুইটি। ছয় ব্যাচ মিলিয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ২৫১ জন। তবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগটির মোট নয়জন শিক্ষকের মধ্যে বর্তমানে ছয়জন শিক্ষক উচ্চশিক্ষার জন্য শিক্ষা ছুটিতে আছেন। ফলে ৩ জন শিক্ষক নিয়ে চলমান ৬টি ব্যাচের শ্রেণী কার্যক্রম চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত ৪৮তম বার্ষিক প্রতিবেদনের আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১০ হলেও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে এই অনুপাত হলো ১:৮৪। এদিকে শিক্ষক সংকটের কারণে অধিকাংশ কোর্স চলছে গেস্ট টিচার দিয়ে। তবে অনলাইন ক্লাস ও গেস্ট টিচারদের কোর্স সম্পর্কিত সমন্বয়ের অভাবে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
শিক্ষক সংকটের কারণে বিভাগের শিক্ষকদের ওপরও মানসিক চাপ পড়ছে বলে অভিযোগ শিক্ষকদের। এ প্রসঙ্গে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) সহকারী অধ্যাপক কাজী এম. আনিছুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষক নিয়োগের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর কয়েকবার চিঠি দেওয়ার পরও কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।'
তিনি আরও বলেন, 'শিক্ষক সংকট নিরসনের ব্যাপারে পূর্ববর্তী প্রশাসনের খামখেয়ালিপনা ছিল, যা তাদের চরম ব্যর্থতার বহিঃপ্রকাশ। শিক্ষক সঙ্কটের ফলে শিক্ষকদের ওপর অমানবিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, যা ক্লাসের গুণগত মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা চাই-জরুরি ভিত্তিতে এ সঙ্কট সমাধান হোক।'
এ বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২২-২৩ সেশনের শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা মৌ বলেন, 'বর্তমানে আমাদের বিভাগে ব্যাচ চালু আছে ৬টি। এই ৬টি ব্যাচ পরিচালনা করছেন মাত্র ৩ জন শিক্ষক। যা আমাদের ও আমাদের শিক্ষকদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার। শিক্ষকরা যেমন ক্লাস ঠিকভাবে পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তেমনি আমরাও অনেক সময় বিভিন্ন কোর্সের ক্লাস ঠিকমত পাচ্ছি না। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের উচিৎ দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আমাদের এই সমস্যার সমাধান করা।
বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের আরেক শিক্ষার্থী রকিবুল হাসান সোহাগ বলেন, ‘আমাদের বিভাগটি গতিশীল এবং সেশনজটমুক্ত একটি বিভাগ, কিন্তু বর্তমানে আমরা চরম শিক্ষক সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। শিক্ষক সংকটের মধ্যে আমাদের বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম ঠিক রাখতে নিয়মিত গেস্ট টিচার এনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে, আবার অনেক সময় অনলাইনে ক্লাস করতে হয়। অনলাইন ক্লাসে সরাসরি ক্লাসের মত সব কিছু বুঝতে পারা সম্ভব হয় না। ফলে আমাদের শিক্ষার্জনে ব্যাঘাত ঘটছে। যদি দ্রুত স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ না করা হয়, তাহলে এই সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে।'
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. মুহম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, ‘একটি বিভাগ কখনোই তিনজন শিক্ষক নিয়ে চলতে পারে না। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বহিস্থ শিক্ষকের উপর নির্ভরশীল হলে সকল কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাতে করে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসনের উচিত ছিল জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া। একটি বিভাগ পরিচালনার জন্য অন্তত দশজন শিক্ষক প্রয়োজন, সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
রেজিস্ট্রার মো. মুজিবুর রহমান মজুমদারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পেয়েছি খুব বেশি দিন হয়নি, এরমধ্যে কিছু সময় দেশের বাহিরেও অবস্থান করেছি। একটি বিভাগে শুধুমাত্র তিনজন শিক্ষক আছে জানতে পেরে অবাক হয়েছি। এ পরিস্থিতিতে শিক্ষকরা সারাদিনের ক্লাসের প্রস্তুতি নিতে ব্যর্থ হয়, ফলে শিক্ষার গুনগত মান নষ্ট হয়। শিক্ষাছুটি এবং বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ দুটোই বিভাগ থেকে পরিকল্পনা করে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিভাগের ক্ষতি হবে কিনা সেটা দেখে শিক্ষাছুটি দেওয়া উচিত বলে মনে করি। বিভাগ থেকে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ থাকলে অতিদ্রুত নিয়োগ হবে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা সামনের দিকে আর ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।’