জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) গণপিটুনিতে ৩৯ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মোল্লার নিহত হওয়ার ঘটনায় তদন্তের আগেই তড়িঘড়ি করে মামলা করা হয় ও ১ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়৷ তদন্তের পূর্বেই গ্রেফতারের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে পূর্বের মামলা প্রত্যাহার ও সুষ্ঠু তদন্তসহ ৬ দফা দাবীতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও রায়হানের স্বজনেরা৷
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গনে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়৷ মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর ৬ দফা দাবির লিখিত স্মারক দেওয়া হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ৬ দফা দাবিগুলো হলো-
নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের মাত্রা-অনুযায়ী শান্তি নিশ্চিত করা; শামীম মোল্লাকে প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর পরবর্তী নিরাপত্তা অফিসের গাফিলতির ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া; পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর ঘটে যাওয়া ঘটনার তদন্ত নিশ্চিত করা; প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীনের বিতর্কিত কর্মকান্ড বিশ্লেষণপূর্বক নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া; জুলাইয়ের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত আসামী সুদীপ্ত শাহীন কর্তৃক এই বিতর্কিত মামলা অতিদ্রুত প্রত্যাহার; এবং জুলাই-আগস্ট মাসে হামলার ঘটনায় জড়িত সকল শিক্ষক, কর্মচারী, এবং শিক্ষার্থীদের আজীবন বহিষ্কারসহ দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসা প্রভৃতি।
মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি৷ এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, হত্যা মামলার আসামী হয়ে সুদীপ্ত শাহীন নিজে কিভাবে মামলার বাদী হয়? আন্দোলনে হামলার ঘটনায় ২ মাসেও কাউকে আইনের আওতায় আনা হয় নাই। ক্যাম্পাসে তারা মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অপরদিকে শামীম মোল্লাকে গণপিটুনির ঘটনায় তদন্ত ছাড়াই মামলা হলো। আমাদের দাবি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে, নির্দোষ কেউ যেন শাস্তি না পায়৷
রায়হানকে গ্রেফতার ও মামলাকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে মানববন্ধনে ইংরেজি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী ও রায়হানের সহপাঠী সিয়াম তালুকদার বলেন, এই মামলাকে অনেকটা বিতর্কিত বলা চলে। মামলা দেয়ার পূর্বে একটা সুষ্ঠু তদন্তের আবশ্যক৷ যিনি এ ঘটনায় মামলা করেছেন, তিনিও ২ টা হত্যামামলার আসামী। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত কমিটি গঠন করা হোক। প্রকৃত অপরাধীদের সামনে নিয়ে আসা হোক৷ লঘু পাপে কারো গুরু দন্ড না হোক, নির্দোষ কেউ সাজা না পাক।
মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়ে রায়হানের আরেক সহপাঠী তাহমিনা বিনতে তৃষা বলেন, আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি চাই। আমাদের বন্ধু রায়হানকে সামনে রেখে অন্য কাউকে আড়াল করা হয়েছে। তদন্ত ছাড়া যে বহিষ্কার ও মামলা করা হয়েছে, আমরা এ ব্যবস্থার উপর কিভাবে আস্থা রাখবো? আমাদের প্রশ্ন, শামীম মোল্লাকে হাসপাতালে না নিয়ে কেন দেরি করা হলো৷ আর যার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মামলা রয়েছে সে সুদীপ্ত শাহীন কীভাবে মামলার বাদী হয়?
রায়হানের মা রেহেনা পারভীন, আমার ছেলে যতটুকু অপরাধ করেছে, তার শাস্তি ততটুকু হোক৷ বাকিদের আড়াল করে রায়হানকে শাস্তি দেয়া হবে এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। রায়হান আমার পরিবারের একমাত্র অবলম্বন৷ তাকে ছাড়া আমরা বেঁচে থাকতে পারব না৷