সামনের দরজা বন্ধ রেখে পেছনের দরজা খোলা। ঠিক এমনটাই হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে। গত (৫ আগস্ট ) শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শুরু হয় নানা তর্ক-বিতর্ক। রাজনীতি বন্ধে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার আন্দোলন করেন এবং উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপিও দেন।
রাজনীতির পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সংসদের তথ্যতে উঠে আসে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনীতি চায় না।
সর্বশেষ (১৯ সেপ্টেম্বর ) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত আসে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সকল প্রকার রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকবে।
কিন্তু নিষিদ্ধের ঘোষণা থাকলেও ছাত্রসংগঠন গুলোর নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে । এদিক দিয়ে এগিয়ে আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
ছাত্রদলের নেতা কর্মীরা মধুর ক্যান্টিনে তাদের সদস্য আহ্বান ফর্ম বিতরণসহ অন্যান্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি কবি জসিমউদ্দীন হলের গেস্টরুমেও সদস্য ফর্ম বিতরণ করতে দেখা যায় তাদের।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে যে সিদ্ধান্ত আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও গণতন্ত্রকামী শিক্ষার্থী সেটা গ্রহণ করবে না। আমরা মনে করি ছাত্ররাজনীতি বন্ধের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে নেতৃত্বশূন্য করে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। বাংলাদেশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একে অপরের পরিপূরক, সুতরাং দেশ নিয়ে যেকোনও ষড়যন্ত্র এ দেশের ছাত্রসমাজ তাদের মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে রুখে দেবে।
একইভাবে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। শিবিরের গোপন রাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হলগুলোতে শিবিরের কার্যক্রম চলছে বলেও এমন তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি এস এম ফরহাদ হোসেন বার্তা ২৪. কমকে বলেন, রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি পুরোপুরি যৌক্তিক নয়, তবে রাজনীতির সংস্কার আনতে হবে। বিগত ছাত্রলীগের রাজনীতি সাথে যদি বর্তমান রাজনীতির তুলনা করি তাহলে সেটা ঠিক হবে না। শিক্ষার্থীদের মনে বিগত সময়ের রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলছিল তার ভয়ের রেশ এখনো কাটেনি। আমরা মূলত শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি চাই।
রাজনীতি নিষিদ্ধ হলেও চলমান কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি মেঘমল্লার বসু বলেন, ছাত্র রাজনীতি হচ্ছে ছাত্রদের রাজনীতি। রাজনীতি না থাকলে ক্যাম্পাসে সুস্থ রাজনীতির চর্চা বন্ধ হয়ে যাবে। যে সংগঠন ই হোক তারা যেন শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে। রাজনীতির নামে হল দখল যেন না করে সে দিকটাও আমাদের দেখতে হবে। তাই ক্যাম্পাসে রাজনীতি না থাকাকে আমি মনে করিনা এটা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত।
ছাত্রঅধিকার পরিষদের কার্যক্রম নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এটি আরেকটি হটকারী সিদ্ধান্ত। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও সুস্থ রাজনীতির ধারা বন্ধ করতে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। রাজনীতি থাকবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য।
আমি মনে করি সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক তৎপরতা ও রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া অযৌক্তিক।
শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে বিভাজন। একটা অংশ রাজনীতি চায় অপর একটা অংশ রাজনীতি চায়না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম অবাধে চলছে।