রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি বন্ধ থাকলেও সরব হচ্ছে ছাত্রদল। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্নভাবে গণসংযোগ চালাচ্ছে ছাত্রদল।
অপরদিকে খোঁজ নেই শিবিরের। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির নামে একটি ফেসবুক পেইজের আত্মপ্রকাশ ঘটলেও এখনো কেউ প্রকাশ্যে আসেনি ।
এই বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য নিয়োগের পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন ছাত্রদল। গত তিন নভেম্বর মূল ফটকে দলীয় লোগো সম্বলিত কলম ও ফুল দিয়ে ২০২৩-২৪ সেশনের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন তারা। এইদিকে ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে পোস্টার সাঁটাতে দেখা যায়।
একাধিক ছাত্রদলের নেতা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি না থাকলে নেতৃত্ব তৈরি হবে না। শিক্ষার্থীদের অধিকারের কথা বলা তাদের জন্য কাজ করার মত কাউকে পাওয়া যাবে না। ছাত্রদল লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি করে না। শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব রাজনীতি করতে চাই আমরা।
ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিহাস ও প্রত্নতত্ব বিভাগের গোলাম রহমান শাওন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের অপরাজনীতির ফলেই আমরা আবু সাঈদ ভাইকে হারিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে আমরা প্রত্যেক বিভাগ থেকে গণস্বাক্ষর নিয়েছি। সেটি শেষ পর্যন্ত সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। সেই খবর পাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেন। কিন্তু তারপরেও ক্যাম্পাসে পোস্টার লাগানো আইন ভঙ্গের শামিল। তাই তাদের আইনের আওতার আনার দাবি জানাচ্ছি।
ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন রাজনীতি থাকবে না। ১০৮তম সিন্ডিকেট মিটিং এ লেজুরবৃত্তিক সকল ধরনের রাজনীতি বন্ধ করার পরে ও ছাত্রদল ক্যাম্পাস এ পোস্টারিং করে। এ ব্যাপারে আমরা প্রশাসন এর সাথে কথা বলেছি। প্রশাসন এর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে। ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে যেন এটি অন্তর্ভুক্ত হয় যে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। এ জন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেব। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে আমরা বলেছি এমন একটি নীতিমালা যেন করা হয় যে কেউ কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড (ক্যাম্পাস এর নামে কোন রাজনৈতিক ব্যানার ,মিটিং, মিছিল, পোস্টারিং এবং যেকোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড) করলে যেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, শিক্ষার্থীদের চাওয়ার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তক্রমে লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক পোস্টার লাগানো নিন্দনীয় কাজ। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। যারা পোস্টার লাগিয়েছে শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনস্বরুপ ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ থেকে আশা করি বিরত থাকবে। জানতে পারলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নোটিশ জারির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ করেছে। প্রশাসনের এই পদক্ষেপ প্রশংসনীয়। আশা করি সামনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে সচেতন থাকবে এবং এই বিষয়ে কঠোর ভূমিকা পালন করবে। তবে শিক্ষার্থীদের এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দ্রুত ছাত্রসংসদ নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আল আমিন বলেন, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, হল দখলকারী, হলের সিট বাণিজ্য, লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি করে না। শিক্ষার্থীদের একটা ফুল আর কলম দিলেই কি ছাত্রদল খারাপ। আমরা কি কাউকে জোর করে ছাত্রদল করাচ্ছি। কাউকে বলছি ছাত্রদলে আসো। আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ক্যাম্পাসে ভিতরে ভিতরে অনেকেই রাজনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছে। সেটা আর কারও চোখে পড়ে না। ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে নিজেদের প্রচারণা চালাচ্ছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড.শওকাত আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিতে সিন্ডিকেটে লেজুরবৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ নেই।