ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সহাবস্থানের রাজনীতিতে মুখরিত ঢাবি

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রেজা-উদ্-দৌলাহ্ প্রধান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-22 14:28:33

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে সহাবস্থানের রাজনীতিতে মুখরিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন। আসন্ন এই নির্বাচনকে ঘিরে ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর রাজনৈতিক চর্চা, মিছিল, মিটিংয়ে যেন নব যৌবন ফিরে পেয়েছে রাজনীতির আতুরঘর খ্যাত মধুরক্যান্টিন। ইতোমধ্যেই নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় গোটা ক্যাম্পাস এলাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনে। প্রার্থীরা প্রতিদিন ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন, ভোটারদের আকৃষ্ট করতে তাদের কাছে নিজেদের ইশতেহার পৌঁছে দিচ্ছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে তাদের থাকছে একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি।

শনিবার (৯ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই মধুর ক্যান্টিন জমজমাট হতে থাকে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে। সকাল ১১ টার পরে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা তাদের দাবি নিয়ে মিছিল করেছে।

এদিকে নির্বাচনে ভোটগ্রহণের মাত্র ২দিন আগে ভোটারদের কাছে নিজেদের ইশতেহার প্রকাশ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্যানেল।

এদিন দুপুর ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার সামনে প্যানেলের পরিচিতি সভায় ১৫ দফা সংবলিত এই ইশতেহার ঘোষণা করেন সংগঠনটির সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।

এ সময় সেখানে ডাকসু ও হল সংসদ প্যানেল-প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। ইশতেহার ঘোষণা শেষে ছাত্রদল এক‌টি মিছিল বের করে। মিছিলটি মধুর ক্যা‌ন্টিন হ‌য়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগা‌রের সামনে গিয়ে শেষ হয়।

ছাত্রদল যখন ইশতেহার ঘোষণা করছিল অপরাজেয় বাংলায় তখন দুপুর ১২টার দিকে ২০-২৫ জন নিয়ে মধুর ক্যান্টিনের সামনে মিছিল শুরু করে জাতীয় ছাত্র সমাজ। এ সময় তারা এরশাদের নামে স্লোগান দেয় ৷ তখন মধুর ক্যান্টিনে থাকা ছাত্র ইউনিয়নের সহসভাপতি তুহিন কান্তি দাসের নেতৃত্বে ছাত্র ইউনিয়ন নেতাকর্মীরা হঠাৎ তাদের ধাওয়া দেয়। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে বাম সংগঠনগুলো এতে অংশ নেন। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী কর্মীদের লাঠিসোটা নিয়ে যোগ দিতে দেখা যায়। ধাওয়ার ‍মুখে ছাত্র সমাজের নেতাকর্মীরা দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের বিক্ষোভ মিছিল বের করে।

বামজোটের কয়েকজন নেতা-কর্মী বার্তা২৪.কমকে জানান, নব্বইয়ের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে স্বৈরাচার এরশাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র সমাজকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু এবারের ডাকসু নির্বাচনে তাদের ব্যাপারে প্রশাসন আশ্চর্যজনকভাবে নিষ্ক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করে আছে। প্রশাসনের আসকারাতেই ক্যাম্পাসে ছাত্র সমাজ মিছিল করার সাহস পেয়েছে। প্রশাসন না পারলে ছাত্র সমাজকে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোই প্রতিহত করবে।

এছাড়া একইদিন মধুর ক্যান্টিন থেকে মিছিল করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। তারাও এবারের ডাকসু নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে।

গত ১০ বছরে যে মধুর ক্যান্টিন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল ছাত্রলীগের এক আধিপত্যে সেখানে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে ছাত্রদল, বাম সংগঠন, ইসলামী শাসনতন্ত্র ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি নতুন জোয়ার সৃষ্টি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা এই সহবস্থান ও প্রতিযোগিতামূলক ইতিবাচক রাজনীতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।

তাদের মতে, ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের সহবস্থানের মধ্যদিয়ে ক্যাম্পাসে একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ডাকসু নির্বাচন ক্যাম্পাসে রাজনীতির এই ইতিবাচক পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করেছে। ডাকসু নির্বাচনের জন্যও যেন এই উৎসবমুখর, প্রাণচঞ্চল পরিবেশ বজায় থাকে সেটাই চাওয়া তাদের।

এদিকে ভোটের প্রচার প্রচারণায় সবচেয়ে এগিয়ে ছাত্রলীগ। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে একমাত্র ছাত্রলীগই পূর্ণ প্যানেলে প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। হলগুলোতেও রয়েছে ছাত্রলীগের আদর্শিক একাধিপত্য। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি হলে ছাত্রলীগের ৫০ জন প্রার্থী কয়েকটি পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতও হয়েছেন।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের মনোনীত প্রার্থীরা যেমন ক্যাম্পাসে জনপ্রিয়, ক্লিন ইমেজধারী ঠিক তেমনি ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে নেতা-কর্মীরা। ইতোমধ্যেই তারা প্যানেল পরিচিতির মাধ্যমে ভোটারদের কাছে ইশতেহার তুলে ধরেছে। প্রতিদিন তারা অনলাইন, অফলাইন ক্যাম্পেইনে অন্য প্যানেল কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। ডাকসু ও হল সংসদে ছাত্রলীগের পুরো প্যানেলের নির্বাচনের সমন্বয়ে নিরলস কাজ করছে ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সভাপতি ও  ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস।

জানতে চাইলে ছাত্রলীগের ডাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান সনজিত চন্দ্র দাস বার্তা২৪.কমকে বলেন, আগামী ১১ তারিখের নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেতে ছাত্রলীগের সমস্ত নেতা-কর্মী আদা জল খেয়ে মাঠে নেমেছে। আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ভোটারদের কাছে তুলে ধরেছি। প্রতিটা হলে হলে আমরা প্যানেল নিয়ে প্রজেকশন মিটিং করেছি। নির্বাচনে ছাত্রলীগকে বিজয়ী করতে মুখিয়ে আছে ভোটাররা।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘ ২৮ বছর পর আগামী ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে। নির্বাচন আয়োজনের সর্বশেষ প্রস্তুতি নিচ্ছে এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর