'তিন পক্ষের সদিচ্ছায় গ্রহণযোগ্য হবে ডাকসু নির্বাচন'

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রেজা-উদ্-দৌলাহ প্রধান ,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 09:18:14

একটি সুন্দর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন নিয়ে তিনটি পক্ষের সদিচ্ছার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ষাটের দশকে ডাকসুর ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অধ্যাপক মাহফুজা খানম।

তিনি এ সময় বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনে তিনটি পক্ষ আছে। পক্ষ তিনটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ হাজার শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সরকার। এই তিনটি পক্ষের সদিচ্ছা থাকলেই এই নির্বাচনটা সুষ্ঠু, সুন্দর এবং গ্রহণযোগ্য হবে। এই তিন পক্ষ যদি মনে করে, হ্যাঁ, নির্বাচনটা আমরা সুষ্ঠু করতে চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য এই বার্তাটা দিয়ে যেতে চাই যে আমরা ২৮ বছর পরে হলেও একটা সুষ্ঠু, সুন্দরভাবে আমরা এই নির্বাচন করেছি। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন উপহার দিয়েছি।’

রোববার (১০ মার্চ) বিকেলে বার্তা২৪.কমের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ডাকসু নির্বাচন বর্তমান প্রজন্মের জন্য একটা সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২৮ বছর যে নির্বাচন বন্ধ ছিল এটা সত্যিই দুর্ভাগ্য। সত্যিই বলবো জাতির জন্য, শিক্ষার্থীদের জন্য এটা সত্যিই দুর্ভাগ্যের ছিল, না হলে এতদিন তাদের এই সুযোগগুলো তারা পেল না। এখন যখন হচ্ছে আমি মনে করি, এটা অত্যন্ত আশার কথা। এই প্রজন্মের শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ও সরকারের জন্য যে তাদের সময়ে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ডাকসু নির্বাচন হচ্ছে। সুতরাং নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে তাদেরও একটা দায়িত্ব থাকবে।

ডাকসু নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের অংশ নেওয়াকে ‘গুড সাইন’ হিসেবে চিহ্নিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য মাহফুজা খানেম বলেন, ‘সবচেয়ে আশার কথা সমস্ত দলের মত বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতেছে, এবং এখনো তারা আছে, যদিও অভিযোগ আছে, পাল্টা অভিযোগ আছে তারপরও আমি বলি সবাই আছে। ছাত্রলীগ আছে, ছাত্রদল আছে, ছাত্র ইউনিয়ন আছে, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট আছে, বামপন্থীরা আছে, অনেকে স্বতন্ত্র দাঁড়িয়েছে। এতে আমি খুব খুশি। গুড সাইন বলে আমি মনে করি। এই নির্বাচন উপলক্ষে বিভিন্ন কমিটি করা হয়েছিল। সেসব কমিটিতে এই ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধি ছিল। যদিও দেনদরবার করে প্রশাসন তাদের প্রতিনিধিদের অনেক কথা শুনেনি। তারপরও যেহেতু কমিটিগুলো এই প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে তাদের কার্যক্রম করে আজকে এই পর্যন্ত আসতে পেরেছে, আগামীকাল ভোরবেলা সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের নির্বাচনটা হবে।’

ডাকসুকে নেতৃত্ব তৈরির আঁতুড়ঘর হিসেবে বর্ণনা করে ষাটের দশকের ছাত্রনেতা মাহফুজা বলেন, ‘বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলনে ছাত্রদের একটা বিরাট ভূমিকা ছিল, ছেষট্টির ছয়দফা আন্দোলনেও একটা বড় ভূমিকা ছিল। ছয়দফার সময় আমি ডাকসুর ভিপি ছিলাম। আর এই ছয়দফাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একেবারে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত সভা সমিতি করেছি। তখন রাজনৈতিক দলের সভা সমিতি নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু আমরা জনসভা পর্যন্ত করেছি। এবং যার ফলে দেখা গেছে এই ছয়দফাটা অতি সহজে বাঙালির মুক্তির সনদ হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে চলে গিয়েছিল। এই যে বিরাট ভূমিকা, পরবর্তীতে ঊনসত্তরের গণ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এখানেও কিন্তু ডাকসুর বিরাট ভূমিকা ছিল। এখান থেকে নেতৃত্বও বেরিয়ে এসেছে মতিয়া আপা, মেনন ভাই, তোফায়েল এরা সবাই ডাকসু থেকে বেরিয়ে এসেছিল। এক ধরনের নেতৃত্ব তৈরির আঁতুড়ঘর ছিল আমাদের ডাকসু। তার পরবর্তীতে সেলিম, আমান এরাও বেরিয়ে আসে।

ডাকসুর ভোটারদের উদ্দেশে সাবেক ভিপি মাহফুজা খামন বলেন, ‘৪৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বিরাট সুযোগ আসছে। তোমরা ভ্যানগার্ডের মত, তোমরা তরুণ, তোমাদের অনেক ক্ষমতা, আমাদের চেয়ে তোমরা এখন অনেক অগ্রসরমান তোমরা যেকোন ভাবে যেকোন অশুভ চক্র যদি এখানে কাজ করে সেটা তোমরা প্রতিহত করবে। এবং তোমরাই আসলে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নিতে পথ দেখাবে।’

উল্লেখ্য, ১৯৬৬ সালে ডাকসুর ভিপি ছিলেন অধ্যাপক মাহফুজা খানম। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য। বর্তমানে বিশ্ব শিক্ষক ফেডারেশনের দ্বিতীয় মেয়াদের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন। এছাড়া খেলাঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের চেয়ারপার্সনের দায়িত্বও পালন করছেন তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর