আন্দোলনের পেছনে সরকারবিরোধী ইন্ধন রয়েছে: চবি উপাচার্য

বিবিধ, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম, বার্তা২৪.কম | 2023-08-25 16:20:06

প্রক্টর ও হাটহাজারী থানার ওসির অপসারণ চেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ছাত্রলীগের একাংশের ডাকা ধর্মঘটের পেছনে সরকারবিরোধীদের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

রোববার (৭ এপ্রিল) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেনের লোকো মাস্টারকে অপহরণ ও হুইসপাইপ কেটে দেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের শিক্ষকদের গাড়ি চলাচলে বাধাও দেন তারা। দোকানপাট বন্ধও করে দেওয়া হয়। পরে সকাল সোয়া ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটেকে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ সময় তারা উপাচার্যকে মূল ফটকে এসে দাবি আদায়ের আহবান জানান। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ জলকামান এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ছাত্রলীগ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করলে মূল ফটক থেকে সোরওয়ার্দী হল পর্যন্ত রণক্ষেত্র পরিণত হয়। ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে আটক করা হয়।

শাটল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। এ অবস্থায় কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও, ক্লাস হয়নি।

এর পরিপ্রেক্ষিতে দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত ৫৩ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি, বিগত তিন বছরে সে উন্নয়ন হওয়ায় প্রশাসনের বিরোধীদের গাত্রদাহ হচ্ছে। অনেকের হিংসা হচ্ছে। সে কারণে হয়তো শিক্ষার্থীদের নানাভাবে উস্কানি দিয়ে,তাদের অনৈতিক পন্থার মধ্যে দিয়ে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। আমি মনে করি, এটা সুদূরপ্রসারী, তদন্ত হওয়ার দরকার। সরকারকে অনুরোধ করব, এর পেছনে সত্যিকার কারণগুলো কী, কারা কীভাবে ইন্ধন দিচ্ছে, কারা কীভাবে কাজ করছে; খতিয়ে দেখা দরকার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উস্কানি ও বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট দেওয়ায় এক শিক্ষককে শোকজ এবং তার বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেওয়ার কথাও জানান তিনি। তবে সাংবাদিকরা ওই শিক্ষকের নাম জানতে চাইলে, তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বলেন, ‘আমি জানি না।’

উপাচার্য বলেন, আমি সকাল থেকে আন্দোলতরত শিক্ষার্থীদের জানিয়েছি, আমি অফিসে আছি, তোমরা এসো, আলোচনা করব। শুনলাম, তাদের জুনিয়ররা নাকি সিনিয়রদের কথা শুনছে না। এখনও বলছি, তোমরা আসো, দাবিসমূহ বিবেচনা করে পূরণের বিষয়ে কথা বলব। কিন্তু গুটি কয়েকজনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকতে পারে না। এমন কোনো কর্মসূচি পালন করা অব্যাহত রাখার মানে হলো, তাদের অসৎ উদ্দেশ্য আছে।

সংঘর্ষে সম্পৃক্ত নয় এমন নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্র মামলা দেওয়া হয়েছে; এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, তাদের কারণেই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছে। তবে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র মামলা দেওয়া হয়নি। এরপরও আমি বিষয়টার খোঁজ নিচ্ছি। দুএকদিনে মধ্যে হয়তো সমাধান হবে।

এ সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী সাংবাদিকদেরর জানান, যদি তাদের দাবি যৌক্তিক হয় তারা এসে আলোচনা করুক। কিন্তু গায়ের জোরে কোনো দাবি আদায় হয় না। দাবি আদায়ে বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে। যৌক্তিক হলে প্রশাসন অবশ্যই দাবি মেনে নেবে।

আন্দোলনের পেছনে সরকার এবং প্রশাসনবিরোধী ইন্ধনের কথা উপাচার্য দাবি করলেও প্রক্টর অধ্যাপক আলী আজগর চৌধুরী এর জন্য চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন, সে (সুজন) আমার কাছে ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতির সম্পৃক্ত দু’জনের শাস্তি মওকুফের জন্য এসেছিল। আমি মওকুফ করিনি। আজকের ঘটনায় সে ইন্ধন দিয়েছে। সে ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড।

তবে অভিযোগের বিষয়ে এইচ এম ফজলে রাব্বি সুজনের বক্তব্যের জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে আন্দোলনের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক আরাফাত সাংবাদিকেদরে জানান, মিথ্যা মামলা দেওয়া ছয় নেতাকর্মীর মামলা প্রত্যাহার এবং মুক্তির দাবিতে আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। হঠাৎ করে কাদের ইশারায় পুলিশ আমাদের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালায়? এতে শিক্ষার্থীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষ, রিকশাওয়ালাও গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

তিনি বলেন, যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিতে পারছে না, অবশ্যই প্রক্টরকে পদ্যতাগ এবং ওসিকে প্রত্যাহার করতে হবে। একইসাথে বিগত প্রশাসনের সময়ে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।

আরও পড়ুন: প্রক্টরের অপসারণ চেয়ে ধর্মঘটে চবি ছাত্রলীগ

আরও পড়ুন: পুলিশ ও ছাত্রলীগ সংঘর্ষে চবি রণক্ষেত্র

এ সম্পর্কিত আরও খবর