রাবিতে চার দশকে ৪১ হত্যাকাণ্ড, ঝুলে আছে বিচার প্রক্রিয়া

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-21 22:41:49

স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হলেও তার কোনো বিচার হয় না। ফলে ক্যাম্পাসে হত্যা করে বারবার পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। এতে সব সময় আতঙ্কে থাকেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

জানা গেছে, ১৯৭৬-২০১৬ সাল পর্যন্ত রাবিতে প্রায় ৪১টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ঘটনায় মামলা করা হয়। এমনকি প্রথম কয়েকদিন সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে আন্দোলনও হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো মামলায় সঠিক বিচার পাননি খুন হওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের স্বজনরা।

অভিযোগ আছে, কয়েকটি মামলায় আসামিদের শনাক্ত করা গেলেও তাদের গ্রেফতার করেনি পুলিশ। ফলে এসব মামলার নিষ্পত্তিও হয়নি আজ পর্যন্ত।

রাবিতে সর্বশেষ হত্যার শিকার হন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মোতালেব হোসেন লিপু। ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর নবাব আব্দুল লতিফ হলের ড্রেন থেকে লিপুর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তবে এ হত্যাকাণ্ডের আড়াই বছরেও জড়িতদের শনাক্ত করা হয়নি। ইতোমধ্যে এ মামলার বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন লিপুর স্বজন ও সহপাঠীরা।

মতিহার থানা সূত্রে জানা গেছে, লিপু হত্যায় তার চাচা মো. বশির কয়েকজনকে আসামি করে মামলা করেন। প্রথমে মামলার তদন্তের দায়িত্ব পান রাজশাহী নগরীর মতিহার থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) অশোক চৌহান। কিন্তু একই বছরের ডিসেম্বরে অশোক চৌহান বদলি হলে তদন্তের দায়িত্ব পান মতিহার থানার ওসি তদন্ত মাহবুব আলম। এর এক মাসের মধ্যে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডি পুলিশের পরিদর্শক আসমাউল হক। এরপর ওই মামলার তদন্তভার দেওয়া হয় সিআইডি’র পরিদর্শক আজিজুর রহমানকে।

আজিজুর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত এবং হত্যার ‘মোটিভ’ কী- তা আমরা এখনো বের করতে পারিনি। সম্প্রতি আমরা ঘটনাস্থ পরিদর্শন করেছি। তদন্তে কোনো অগ্রগতি হলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’

জানা গেছে, রাবিতে ৪১টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ৪ জন শিক্ষক, ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী ৭ জন, ছাত্র শিবির ১৬ জন, জাসদ ছাত্রলীগের ২ জন, ছাত্রদলের ২ জন, ছাত্রমৈত্রীর ৩ জন, ছাত্র ইউনিয়নের একজন, সাধারণ শিক্ষার্থী ৩ জন, দিনমজুর ২ জন ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে চারজন শিক্ষক হত্যা মামলার রায় হলেও বাকি হত্যা মামলার বিচার হয়নি। এমনকি মামলাগুলো কী অবস্থায় রয়েছে সে বিষয়েও কোনো তথ্য জানা যায় না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর এলাকায় খুন হন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড.ইউনুস, ২০০৬ সালে খুন হন ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এস তাহের, ২০১৪ সালের ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায়নিজ বাড়ির অদূরে খুন হন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শফিউল ইসলাম লিলন এবং ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম সিদ্দিকীকে নিজ বাড়ির পাশে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

এছাড়া গত ৪০ বছরে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন গ্রুপের সংঘর্ষে ৩৫ জন শিক্ষার্থী ও দুই জন সাধারণ মানুষ নিহত হন।

হত্যা মামলাগুলো তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল কিনা- এ প্রসঙ্গে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এম এ বারীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর