প্রতিটা দিনই হোক মায়ের জন্য

, ক্যাম্পাস

রুদ্র আজাদ, জাবি করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 12:04:58

সারা বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্ব মা দিবস হিসেবে পালিত হয়। আজ সেই মা দিবস। সারা বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। নানা সংগঠন আয়োজন করেছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করছেন প্রিয় সন্তানেরা।

তবে আসলে মায়ের জন্য বা মাকে ভালবাসার জন্য কি আলাদা কোন দিনের দরকার আছে? নাকি প্রতিটা দিনই হওয়া উচিৎ মায়ের প্রতি ভালবাসার? এসব নিয়ে রয়েছে নানান কথা। সেসব নিয়েই তরুণদের ভাবনা কি? তুলে ধরছেন রুদ্র আজাদ।

মা শেষ আশ্রয়ের নাম- সুবর্ণা নার্গিস বন্যা

কবি জসীম উদ্দীন মায়ের ভালবাসার কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন,
‘রাত থম থম স্তব্ধ, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জ্বলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।’

‘মা’ শব্দটি সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র শব্দ যার নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায়ন সম্ভব নয়। এটি একটি নির্ভরতা, আবেগ, ভালবাসা, ত্যাগ, নিঃস্বার্থ, মমতা ও শেষ আশ্রয়ের নাম। উইকিপিডিয়ায় মা সম্পর্কে বলা হয়েছে - ‘মা হচ্ছেন একজন পূর্ণাঙ্গ নারী, যিনি গর্ভধারণ, সন্তানের জন্ম তথা সন্তানকে বড় করে তোলেন- তিনিই অভিভাবকের ভূমিকা পালনে সক্ষম ও মা হিসেবে সর্বত্র পরিচিত।’

‘মা’ হলেন এমন এক অস্তিত্ব যার অনুগ্রহ ছাড়া কোনো জীবের প্রাণ ধারণ সম্ভব নয়। প্রাণী জগতের প্রতিটা স্তরেই মায়ের মমতায় বেড়ে উঠে প্রত্যেক প্রাণী। দীর্ঘ সময় পেটে ধারণ, প্রচণ্ড প্রসব বেদনা সহ্য করে জন্ম দিয়ে বেড়ে ওঠার আগ পর্যন্ত ছায়ার মতো আগলে রেখে প্রতিটা মা তার মমতার প্রকাশ ঘটায়। বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে, সর্বোৎকৃষ্ট সঙ্গী হয়ে পাশে থাকা সেই মানুষটির জন্য স্রেফ একটা দিনকে বিশেষায়িত করে উদযাপনের মাধ্যমে আমরা কি আমাদের দায়িত্ব কর্তব্যের একটা নমুনা দেখাচ্ছি? নাকি মায়ের প্রতি সারা বছরের ভালোবাসা ও কর্তব্যের ত্রুটি ঢাকতে এই পশ্চিমা ধার করা সংস্কৃতি নিজেদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে চলেছি?

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, চতুর্থ বর্ষ,
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

আমার ‘মা’ জাদু জানে- আফরোজা আক্তার

হঠাৎ মনে হলো, চারপাশের ধরা বাধা নিয়ম থেকে একটু ছুটি নিতে পারলে ভালো হতো। যেখান কেউ কোন খোঁজ পাবে না।খুঁজে দেখলাম না এমন গুহার সন্ধান পাওয়া মেলা ভার। পরে মনে হলো, কেমন হতো যদি আম্মুর কোলে লুকানো যেতো। যেখানে এই পৃথিবীর কোন স্বার্থপরতা গ্রাস করতে পারবে না। কোন রকমের কোন দুশ্চিন্তা নেই। সবচেয়ে শান্তির জায়গা টা কেন মায়ের কোল হবে! পৃথিবীতে সব কিছুর সংজ্ঞা আছে। কিন্তু একটা শব্দের ব্যাখ্যা আমি কখনো দিতে পারিনা আর সেটা হলো ‘মা’।

মা আমি কি খুব ভারী, তুমি এখন আর আমাকে কোলে নাওনা কেন? কবে হাসতে হাসতে বলে ফেলেছিলাম মনে নেই। কিন্তু কঠিন কোন এক মুহূর্তে যে বলে, আমি তো বেঁচেই আছি তোমার ভার সইবার জন্য, তুমি কেন চিন্তা করো বলতো! সে তো মা ছাড়া আর কেউনা! চারদিক যখন সব বিষণ্ণ, কাউকে বলার কি নেই।

হঠাৎ মনে পড়ে, না একজন তো আছে। যে যাদু জানে, যে মন ভালো করে দিতে জানে, তার সন্তানের সব মন খারাপ করা অভিযোগ গুলো মুছে দিতে জানে। যার কাছে সন্তানের সব ভুল গুলোর ক্ষমা থাকে। যে হাসতে হাসতে আপনার সব বিরক্তিকর কথা গুলো মনোযোগ দিয়ে শোনে তিনিই তো ‘মা’।

সন্তানের সাথে মায়েদের নাকি খুব সূক্ষ্ম সুতার বাঁধন থাকে। সবচেয়ে খারাপ সময়গুলো কিভাবে যেন এই মানুষটা টের পেয়ে যায়, আসলেই কি এই মানুষটা সব কিছুর সমাধান! সেই মানুষ টার জন্য কোন বিশেষ দিবসের প্রয়োজন কিনা জানি না, তবে যদি কোন মুহূর্তে খুব কাঁদতে ইচ্ছা করে তাহলে মা নামের এই মানুষ টা চোখ বন্ধ করে মনে করুন। অনুভব করুন, দেখবেন যাদু জানা মানুষ টি আসলেই আপনার সমাধান। কারণ ‘মা’ নামক মানুষটির সংজ্ঞায়ন বোধহয় একটা শব্দেই করা যায় ‘মা’। বিশ্ব মা দিবসে ভালো থাকুক সকল জাদু জানা মায়েরা।

শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ-৩য় বর্ষ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

আমার মা অসাধারণ মানুষ- নাজমুস সাকিব

আমার মা একজন অসাধারণ মানুষ, সবার মা যদিও অসাধারণ হয় তবে কেন যেন আমার মা একটু আলাদা। আমাদের সকলের সামনে এমন কিছু মা অসাধারণ হয়ে আসে যা আমাদের চোখে কল্পনাতীত, এইসব মা হতে পারে আমাদের অনুপ্রেরণা, অন্ধকারে একমাত্র আলোর দিশা, আর তিনি হলেন আমার নিজের মা। আজ বিশ্ব মা দিবসে ভালো থাকুক মায়েরা। শুধু এই দিন নয় প্রতিটা দিন ভালো থাক প্রিয় মায়েরা।

শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ৩য় সেমিস্টার,
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

মায়ের হাতের মার মিস করি- আবাব-আল-আমিন

আমরা ছয় ভাই আমাদের কোনো বোন নেই, বাবা-মা দুইজনই জীবিত আছেন, আমার বাবা একজন কৃষক, মা গৃহিণী, বাবা সারাদিন বাড়ির বাইরে থাকলেও মা সবসময় বাড়িতে থাকতেন, আমার মা আমাদের ছয় ভাইকে কে যত বেশি ভালোবাসতেন। তার চেয়ে বেশি মনে হয় বেশি শাসন করতেন, বাবা কোনদিন গায়ে হাত তোলেন নাই, কিন্তু মা প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় মনে হয় মারতেন। তখন মায়ের উপর খুব রাগ হতো।

কিন্তু এখন আসলে এখন বুঝি সে গুলো মার ছিল না সেগুলি ছিল ভালোবাসা, ছয়টা ছেলে সন্তানকে মানুষ করা কতটা কষ্টের তা একজন মা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ছেলেবেলায় প্রচুর দুষ্টমি করতাম, কিন্তু মায়ের চোখের দিকে তাকালে যেন একদম ভালো মানুষ হয়ে যেতাম, মায়ের সামনে এখনও ভালো করে দাঁড়াতে পারি না, এখনও ভয় হয় যদি আবার মারেন, তবে এখন আর মা মারে না, মাঝে মধ্যে আমাদের বলে, ‘তোরা কি মনে করছিস আমি ভালো হয়ে গেছি?’ তবে এখন খুব মিস করি মায়ের হাতের মার। আমি আমার মাকে সবথেকে ভালবাসি। পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়ে এই ভালবাসার বিভাজন সম্ভব না। বিশ্ব মা দিবসে আমার মায়ের প্রতি ও বিশ্বের সকল মায়ের প্রতি রইলো গহীন হৃদয়ের ভালোবাসা।

শিক্ষার্থী আল- ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্ট্যাডিজ বিভাগ, প্রথম বর্ষ,
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর