জবি ছাত্রলীগের চাঁদা দাবি, দোকানিদের মারধর-টাকা লুট!

, ক্যাম্পাস

জবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-19 15:20:26

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) দোকানপাট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে রদবদলের একদিনের মাথায় রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। চাঁদার টাকা কম দেওয়ায় খিচুড়ির পাতিল ছিনতাই ও দোকানিদের পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেন, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজিসহ যেকোন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে প্রশ্রয় দেবে না ছাত্রলীগ। কোন অপরাধ দেখা মাত্র আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব। প্রশাসনকেও বলব যাতে কোন ছাড় না দেয়।

জবি টিএসসির দোকানদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারা তাদের কর্মীদের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছিলেন। দোকান বসানোর সময় প্রতি দোকান থেকে ১০ হাজার টাকা করে অগ্রিম (অফেরতযোগ্য) নেওয়া হয়েছিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এলাকাভিত্তিক বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিভক্ত হয়ে পড়ে। এতে করে টিএসসিতে চাঁদাবাজির ব্যাপকতা আরও বেড়ে যায়।


গত ১৪ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের শীর্ষপদে রদবদলের রাতে ক্যাম্পাসে আনন্দ মিছিল করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরদিন মিষ্টি খাওয়ার নাম করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীরা দোকানিদের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। দোকানিরা চাঁদা কম দেওয়ায় এ সময় তাদের মারধর করেন তারা। এরপর তারা ক্যাশ থেকে প্রায় অর্ধ লাখ টাকা নিয়ে চলে যান। এ ঘটনার প্রতিবাদে দোকানিরা ধর্মঘট ডেকেছেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

দোকানিরা জানান, সাবেক সভাপতি তরিকুল ইসলামের কর্মী অ্যাকাউন্টিং বিভাগের ৭ম ব্যাচের মাসুম বিল্লাহ, ৭ম ব্যাচের আলমগীর মুন্সী, বাংলা বিভাগ ৯ম ব্যাচের সাইফ আহমেদ লিখন, ম্যানেজমেন্ট ১০ম ব্যাচের সামিউল তাছাহাব শিশির এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের একনিষ্ঠ কর্মী ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ৭ম ব্যাচের আব্দুল্লাহ আল মামুন ও ইংরেজি বিভাগ ৯ম ব্যাচের কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ১২-১৫ জন গিয়ে দোকানিদের কাছে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দোকানি বলেন, “রোববার সন্ধ্যায় মাছুম, মামুন, আলমগীর, লিখন, শিশির, কামরুলসহ ১২-১৫ জন টিএসসিতে এসে প্রতি দোকান থেকে ২০ হাজার করে ও সিংগারা-সমুচার দোকান থেকে ৫০ হাজার টাকা তাৎক্ষণিক চাঁদা দাবি করেন। এত টাকা দিতে পারব না জানালে দোকানদার ইমনকে পাইপ দিয়ে পিটায় তারা। ইমনকে বাঁচাতে গেলে আরো দুই দোকানদারকে মারধর করে। এরপর দোকানের ক্যাশ হাতিয়ে সব দোকান থেকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা ও সিগারেটের প্যাকেট ছিনিয়ে নেয়। এক খিচুড়ির দোকানে ক্যাশ টাকা না থাকায় খিচুড়ির পাতিল নিয়ে যায়। পাশের বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশের পাশাপাশি ৬ হাজার টাকাও বিকাশ করে নিয়েছে তারা।”

টিএসসিতে ৯টি চায়ের দোকান, খিচুড়ির দোকান ৪টি, ১টি সমুচা-সিংগারার দোকান, ১টি শুকনো খাবারের দোকান, ১টি শরবতের দোকান ও ১টি বিকাশ-ফ্লেক্সির দোকান রয়েছে। ক্যাম্পাস খোলা থাকলে মূল ফটকের পাশেই সকাল থেকেই বসে বেশ কয়েকটি ঝালমুড়ি, চটপটি ও হালিমের দোকান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চায়ের দোকান থেকে প্রতি দিন ১৫০ টাকা হিসাবে মাসে ৪০ হাজার ৫শ’, সমুচা দোকান থেকে প্রতি দিন ৫০০ টাকা হিসাবে মাসে ১৫ হাজার, খিচুড়ির দোকান থেকে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হিসাবে ৪৮ হাজার ও মোবাইল রিচার্জের দোকান থেকে প্রতি দিন ১০০ টাকা করে মাসিক ৩ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এছাড়া মূল ফটকের সামনের দোকান থেকেও নেওয়া হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতিমাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তুলে আসছেন জবি ছাত্রলীগের নেতারা।

জবি ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলামকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি প্রথমে চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন। এরপর বলেন, “টিএসসিতে চাঁদাবাজির ঘটনাটি আমার জানা ছিল না। বিষয়টি এখন জেনেছি, খোঁজ নিয়ে দেখব।”

এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, র্যা ব ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে চাঁদাবাজদের একটি তালিকা চাওয়া হয়েছে। আমরা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে চাঁদাবাজদের তালিকা তৈরি করছি। খুব শিগগিরই আমরা এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক সিদ্ধান্তও নেব।

সুত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী ওয়াজেদ আলী বলেন, টিএসসিতে চাঁদাবাজির বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। চাঁদাবাজির বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছি। কেউ অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

এ সম্পর্কিত আরও খবর