জাবিতে ‘শাড়ি অবমাননা’ বিতর্ক, কী বলছেন নারীবাদীরা!

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-27 03:53:50

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণ দাবি করে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত রোববার উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে আন্দোলনকারীরা।

এতে নারীর পোশাক অবমাননা ও সকল নারীকে হেয় করা হয়েছে দাবি করে মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে উপাচার্যকে সমর্থনকারী নারী শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করতে গিয়ে শাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। যা নারীর পোশাক ও নারীকে অবমাননার শামিল।

মানববন্ধনে নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘শাড়িতে আগুন লাগানো সব নারীর জন্য বেদনাদায়ক। এর মধ্য দিয়ে পুরো নারী জাতিকে অপমান করা হয়েছে।’

নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক সোলনারা আকতার বলেন, ‘নারীর অবয়বে শাড়ি পেঁচিয়ে জনসম্মুখে পুড়িয়ে উল্লাস করা কোনও মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি নারী সমাজের জন্য পীড়াদায়ক।’

কুশপুত্তলিকা দাহ করার প্রতিবাদে উপাচার্যপন্থী শিক্ষকদের সংবাদ সম্মেলন

মানববন্ধনের পর সংবাদ সম্মেলন করে একই দাবি করেন নারী শিক্ষকরা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বারতা চক্রবর্তী বলেন, ‘উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে পদচ্যুত করার জন্য কয়েকজন শিক্ষক-শিক্ষার্থী এমন কিছু কর্মসূচি অবলম্বন করেছেন, যা নারীর জন্য অবমাননাকর। কর্মসূচির নামে বল প্রয়োগ ও নারীকে অসম্মান করা মেনে নেওয়া যায় না। একজন নারীর ছবি সংযুক্ত করে শাড়িতে আগুন লাগানোর ঘটান নজিরবিহীন।’

এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি। এছাড়া বিভিন্ন নারী অধিকার সংগঠনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এবং এ ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

তবে বিষয়টিকে এভাবে দেখতে রাজি নন দেশের শীর্ষ নারী অধিকার কর্মী, সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য নারী শিক্ষকরা।

এ ব্যাপারে মতামত জানতে চাইলে নারী অধিকার কর্মী ও সংগঠক খুশি কবির বলেন, ‘আন্দোলনের অংশ হিসেবে অনেক সময় প্রতীকী অবয়ব জ্বালানো হয়। যদি বলা হয় কুশপুত্তলিকা পোড়ানো কারো জন্যই ঠিক না তাহলে সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু নারী হলে কাজটা করা যাবে না, পুরুষ হলে করা যাবে এ জায়গাটায় আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাচ্ছিনা। দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে সেটা নারী হোক পুরুষ হোক সেটা দুর্নীতির অভিযোগ। নারী হিসেবে কোন বাড়তি সুবিধা পাবে না। এখানে নারী-পুরুষ আলাদা করার সুযোগ নাই। একজন ব্যক্তি যখন কোন দায়িত্ব নিচ্ছে তখন সে ব্যক্তি দায়িত্বটা নিচ্ছে। সে নারী হিসেবেও নিচ্ছে না, পুরুষ হিসেবেও নিচ্ছে না।’

‘নারী আসলে আমরা খুশি হই যে, বিভাজনটা কমে আসছে। তার মানে এই নয় যে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বক্তব্য রাখতে পারবে না, সমালোচনা করতে পারবে না বা অভিযোগ থাকলে তদন্ত করতে পারবে না।’ যোগ করেন তিনি।

শাড়ির পোড়ানো প্রসঙ্গে এই নারী অধিকার কর্মী বলেন, ‘শাড়ি পরেছে, নাকি লুঙ্গি পরেছে, নাকি ধুতি পরেছে, নাকি শার্ট-প্যান্ট পরেছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন করাটা আমার কাছে খুবই অবান্তর বিষয়। লুঙ্গি পরলে পোড়ানো যাবে, শাড়ি পরলে পোড়ানো যাবেনা, শার্ট-প্যান্ট পরলে পোড়ানো যাবে -আমার কাছে এগুলা কোন যৌক্তিক কথা মনে হয় না।’

‘নারী’ উপাচার্যের কুশপুত্তলিকা দাহ করার প্রতিবাদে উপাচার্যপন্থীদের মানববন্ধন

প্রায় একই অভিমত জানালেন নারী অধিকার কর্মী শাহজাদী শামিমা আফজালি। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সিনিয়র প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এই নারী অধিকার কর্মী বলেন, ‘যখন কোন অভিযোগ উঠে, তদন্ত ও বিচারের প্রশ্ন আসে তখন তো আর কে নারী কে পুরুষ সেটা দেখার সুযোগ থাকেনা। আমি মনে করি কুশপুত্তলিকার পোশাকের কারণে নারী বা শাড়ির অবমাননা হয় এটা বলা যায় না। মহিলা পরিষদও তাই মনে করে।’

জেন্ডার ও কিনশিপ নিয়ে পড়ান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা। তার অভিমত জানতে চাইলে বলেন, ‘এখানে নারীর অবমাননার প্রশ্নই ওঠে না। কারণ নারী তো কোন সমরুপ ক্যাটাগরি না। নারী উপাচার্যের বিরুদ্ধে এরকম দুর্নীতির অভিযোগ আসছে, প্রমাণিত হলে সেটা বরং নারীর জন্য লজ্জার। কারো বিরুদ্ধে যখন অভিযোগ ওঠে তখন সে কোন লিঙ্গের কোন বর্ণের কোন গোত্রের সেটা তো দেখার বিষয় না। নারী হলেই যে অপরাধ করবেনা এরকম কথা কি কোথাও আছে? এটা কোন পোশাকের, কোন লিঙ্গের পরিচয়ের সঙ্গে কোন সংযোগ নাই। লিঙ্গের পরিচয়ে তো আমরা কেউ শিক্ষক হইনা।’

শাড়ি ও নারী অবমাননার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে দুর্নীতির অভিযোগে উপাচার্যের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘এমন অভিযোগ যারা তোলেন তাদের মেধা ও মনন নিয়ে আমার প্রশ্ন। এটা খুবই হাস্যকর। যে শিক্ষকরা এমন প্রশ্ন তুললেন আমি মনে করি তাদের নিয়োগ নিয়ে এখন আবার রিভিউ করা উচিত, কিভাবে তারা শিক্ষক হলেন!’

এ সম্পর্কিত আরও খবর