ছাত্রত্ব শেষ, তবুও পরীক্ষা দেবে রাবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা!

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-25 09:57:28

ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতাকে মাস্টার্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশেষ বিবেচনায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ সুযোগ দেয় বলে জানা গেছে। আগামী ৩০ অক্টোবর থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বলা আছে, একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি হওয়ার পর থেকে তিন একাডেমিক বছরের মধ্যে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করতে হয়। সে হিসেবে মোস্তাকিম বিল্লাহর ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে। কিন্তু সম্প্রতি তিনি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সের পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছেন।

সুযোগ পাওয়া ওই ছাত্রলীগ নেতার নাম মোস্তাকিম বিল্লাহ্। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর ভর্তি হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান রানা ও খালিদ হাসান বিপ্লবের কমিটির পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মোস্তাকিম ২০১৬-১৭ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ২০১৭ সালের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা শুরু হয় ২০১৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। সেসময় পরীক্ষায় অংশ নেয় মোস্তাকিম বিল্লাহ্সহ ৭৬ শিক্ষার্থী। ২৬ ফেব্রুয়ারি ৫০৪ কোর্সের পরীক্ষায় ওই হলের ডিউটিরত শিক্ষক সুলতান মাহমুদ রানার সঙ্গে ‘অশালীন’ আচরণ করে বিল্লাহ্। পরে ওই দিন বিভাগ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়। পরে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দফতর হয়ে অভিযোগটি ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে যায়। তাদের সুপারিশক্রমে ৪৮১তম সিন্ডিকেট সভায় মোস্তাকিম বিল্লাহকে দুই বছর এবং মতিয়র রহমান নামে এক শিক্ষার্থীকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়। ফলে মোস্তাকিম বিল্লাহ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি।

বিভাগ সূত্রে আরও জানা যায়, শাস্তি মওকুফের জন্য মোস্তাকিম বিল্লাহ চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল বিভাগের সভাপতিকে মাধ্যম করে উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন করে। বিভাগ কোনো প্রকার সুপারিশ না করে সেই আবেদনের ওপর ‘শুধু প্রেরিত হলো’ লিখে উপাচার্যের কাছে পাঠায়। আবেদনের প্রেক্ষিতে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বিষয়টি ৪৯০ তম সিন্ডিকেট সভায় তোলেন। পরে মোস্তাকিম বিল্লাহ্ শাস্তি মওকুফ করে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এক্রাম উল্লাহ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব অধ্যাদেশ রয়েছে। সে অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়। সেখানে উল্লেখ আছে একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে তার মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করতে হবে। সে হিসেবে মোস্তাকিম বিল্লাহর ছাত্রত্ব শেষ হয়ে গেছে।’

নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক সিন্ডিকেট সদস্য বলেন,‘সিন্ডিকেটে শিক্ষার্থীর একাডেমিক সেশন উল্লেখ করা হয়নি। যদি এরকম হয়ে থাকে যে কোনো শিক্ষার্থীর শাস্তি মওকুফ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে সিন্ডিকেট। কিন্তু একাডেমিকভাবে তিন বছর শেষ হয়েছে। সেক্ষেত্রে তিনি পরীক্ষা দিতে পারেন না। বিগত সময় এরকম অনেক শিক্ষার্থীর বেলায় এমনই ঘটেছে।’

জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো.বাবুল ইসলাম বলেন, ‘কোন বিষয়টি বিবেচনায় তার শাস্তির মওকুফ করে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে সেটি আমার জানা নেই। আমি সিন্ডিকেট সদস্য নই। তাই সিন্ডিকেটে এক্সেসের সুযোগ নেই।’

ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, আমি ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সবগুলো পরীক্ষায় দিয়েছিলাম। ভাইভা দেওয়ার পর আমাকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়, আামাকে ওই বছরসহ আগামী দুই বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে আমি শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মানবিক দিক বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আমার শাস্তি মওকুফ করেছে।

আরেক সিন্ডিকেট সদস্য জানান, যেহেতু তিনটি একাডেমিক বছর পার হয়ে গেছে সেহেতু সে আর পরীক্ষা দিতে পারে না। বিগত সময়ে অনেক শিক্ষার্থীর বেলায়ও এমন হয়েছে।

ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাবুল ইসলাম বলেন, পরীক্ষা দিক বা না দিক তার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। রেজিস্টার স্যার ভাল বলতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার অধ্যাপক এম এ বারী বলেন, ওই ছাত্রের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু ওই শিক্ষার্থী শাস্তি মওকুফের আবেদন করেছিল। মানবিক দিক বিবেচনা করে তার শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘বেশ কয়েকদিন আগের ঘটনা, কী বিবেচনায় শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। তবে সম্ভবত মানবিক দিক বিবেচনা করে শাস্তি মওকুফ করা হয়েছে।’ আরেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন করেও ব্যস্ত পাওয়া গেছে।

উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহানের মোবাইলফোনে একাধিকবার ফোন করেও তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর