বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
তারা জানিয়েছেন, বৃহত্তর স্বার্থে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা। একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নেবেন না। যতদিন পর্যন্ত সুষ্ঠু বিচার হবে না, ততদিন একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরে যাবেন না আন্দোলনকারীরা।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা এসব কথা বলেন।
আন্দোলনকারী মাহমুদুর রহমান সায়েম বলেন, ‘যারা অভিযুক্ত তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়নি, হলে থাকার পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। তাই আমরা একাডেমিক কার্যকম বর্জন করছি। তদন্তকারী সংস্থা এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। গত পরশু দিনও জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করেছে তদন্তকারী সংস্থা। আমরা বিশ্বাস করি, তদন্তকারী সংস্থা সুষ্ঠুভাবে এ মামলার তদন্ত সম্পন্ন করবে এবং একটি নিখুঁত চার্জশিট দেবে। এ ব্যাপারে ছাত্র কল্যাণ পরিচালক (ডিএসডাব্লিউ) আমাদের জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছে। ১০ কার্যদিবস অতিবাহিত হওয়ার পর তারা কেবলমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিযুক্তদের জবানবন্দি নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবেদন করেছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে দেওয়ার জন্য আরও ১০ কার্যদিবস লাগবে বলে তারা আমাদের জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে মামলার সকল খরচ বহন করা হবে এবং আবরারের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এই মর্মে বুয়েট কর্তৃপক্ষ লিখিত নোটিশ প্রদান করেছে। তবে এই আর্থিক সহায়তা কীভাবে দেওয়া হবে, সে ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত বুয়েট কর্তৃপক্ষ এখনো নিতে পারেনি। আমরা আবরারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি বুয়েট কর্তৃপক্ষ এখনো তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি।’
বুয়েট শিক্ষার্থী অন্তরা মাধুরি তিথি বলেন, ‘আমরা আশা করছি মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় গেলে যেন, দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হয়। চার্জশিট যেহেতু তদন্তের উপর নির্ভরশীল, তাই আমরা বিশ্বাস করি তদন্তকারী সংস্থা সুষ্ঠুভাবে দ্রুততার সঙ্গে চার্জশিট প্রদান করবে। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী বুয়েট ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু এরপরও সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতির অনুপ্রবেশের ফলে দু’বার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।’
সাইফুল বারি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে, এজন্য কোনোরকম শৈথিল্য প্রদর্শন না করে প্রশাসনকে দ্রুত সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের জন্য আহ্বান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেক দফায় ডিএসডাব্লিউ স্যারের সঙ্গে এবং ১১ অক্টোবর ভিসি স্যারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আহসানউল্লাহ এবং সোহরাওয়ার্দী হলের পূর্বের ঘটনাগুলোর পূর্ণ তদন্তের সাপেক্ষে দ্রুত রিপোর্ট প্রদানের কথা থাকলেও প্রশাসনের শৈথিল্যের কারণে তদন্ত কমিটিগুলোর কার্যক্রমের কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি।’
শেরে বাংলা হলে ইতিমধ্যে নতুন প্রভোস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। তাই এ দাবিটি পূরণ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসের জেরে আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন তার সহপাঠীরা।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ ১৯ জনকে আসামি করে রাজধানীর চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আবরার হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।