জাবি থেকে: দুর্নীতির অভিযোগে জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ ও মিছিল মিটিংয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপ্রীতিকর যেকোনো ধরনের ঘটনা এড়াতে ক্যাম্পাসে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কিন্তু কোন ধরনের ভয়-ভীতি তোয়াক্কা না করে, আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেন, এখন অল্প কিছু হলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে। এই ধরেন জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন। তবে জাবি উপাচার্যের দুর্নীতি সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হলে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করতে হবে, যারা বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর আন্দোলনকারীরা কি ভাবছে জানতে চাইলে, শুরু থেকে আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের আন্দোলনের বিষয়ে অবগত আছেন এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে আমাদের প্রমাণ করার কিছু নাই। আমরা চাই, বিশ্বাবিদ্যালয়ের যে দুর্নীতি হয়েছে তার সঠিক তদন্ত হোক। এতে যদি কেউ নির্দোষ হয়, সমস্যা নাই। দোষী হলে সে কোন দায়িত্বশীল পদে থাকবে না। তবে আমাদের এই নিশ্চয়তাই কেউ দিচ্ছে না।
একই প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আরিফ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, মিডিয়াতে প্রকাশ হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির সংবাদের প্রেক্ষিতে আন্দোলন শুরু করেছি। আমরা চাই এ ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক। এখানে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটি বের হয়ে আসবে।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, চাইলেই ঘটনার সঠিক তদন্ত হতে পারে। কেননা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অনেকেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে বিষয়টি স্বীকার করেছেন তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে কেন তদন্তে দ্বিধা। আমরা কিন্ত অভিযোগ করছি, তদন্তের জন্য আন্দোলন করেছি, তদন্তের দায়িত্ব নেয়নি।
প্রসঙ্গত ‘উন্নয়নের নামে বৃক্ষ নিধন’ বন্ধসহ বিভিন্ন দাবি আদায়ে গত আগস্ট মাসে উপাচার্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরে ছাত্রলীগকে উপাচার্য ২ কোটি টাকা ‘ঈদ সালামি’ দিয়েছেন এমন খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর তার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন।
গত সপ্তাহ থেকে আন্দোলনকারীরা তার অপসারণ দাবিতে শুরু করেন ধর্মঘট। পরে সোমবার তারা উপাচার্যের বাসভবন অবরোধ করেন। লাগাতার এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সেদিন দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বর থেকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানার নেতৃত্বে শুরু হওয়া একটি মিছিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালায়। হামলায় ৮ শিক্ষক, ৪ সাংবাদিক ও কয়েকজন নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন।