জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং তার প্রশাসনের একের পর এক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত ও দমন নীতিই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। এমনটাই দাবি করেছেন 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর'র আন্দোলনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাত নয়টায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বাসভবনের সামনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি জানান আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাকিবুল রনি।
লিখিত বক্তব্য পাঠকালে তিনি বলেন, শুরু থেকে আমরা ধ্বংসাত্মক কিংবা আক্রমণাত্মক না হয়ে আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে আসি। কিন্তু প্রশাসনিক নির্দেশে আন্দোলনের এক অন্যতম সংগঠকের ওপর হামলা চালায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টর। অথচ প্রশাসন উল্টো কল্পিত নাটক সাজিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলা দিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে ভীতির সঞ্চার করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে কর্মসূচীর অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বিশেষ অংশ আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
তিনি বলেন, হামলার ঘটনাস্থলে উপস্থিত উপাচার্যপন্থী শিক্ষকরা এই হামলায় উস্কানি দেয়। আমাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন আচরণ আমরা আশা করিনি। এই হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮জন শিক্ষকসহ অন্তত ৩৫জন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক আহত হয়। কিন্তু এই ন্যাক্কারজনক হামলাকে উপাচার্য -গণ অভ্যুত্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেন! ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাসকে এই নেক্কারজনক সন্ত্রাসী হামলার সাথে তুলনা করবার স্পর্ধা পুরো জাতি ভালোভাবে নেয়নি। এখানেই উপাচার্য ক্ষান্ত হননি, উপরন্তু ছাত্রলীগের ঐ অংশের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তিনিই এই হামলার ইন্ধনদাতা। এর মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বৈরাচারী কায়দায় হল ভ্যাকেন্টের ঘোষণা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়। এমনকি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়। কেড়ে নেয়া হয় সভা-সমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার।
উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়ে রনি বলেন, হামলা-মামলা ও হুমকিকে অগ্রাহ্য করে নৈতিক স্খলন ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত উপাচার্যকে অপসারণ এবং দুর্নীতিতে জড়িত সকলের রাষ্ট্রীয় আইনে বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন চলবে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য অপসারণের দাবিতে শুক্রবারের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন। তিনি বলেন, সকাল এগারোটার পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান ও প্রতিবাদী পটচিত্র অঙ্কন এবং পুরো ক্যাম্পাসে সেটার প্রদর্শনী থাকবে।
অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য প্রমাণ জমা দেওয়া হবে। আমাদের কাছে যে প্রমাণগুলো আছে, তাতে করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আর কোন ভাবেই তার পদে থাকতে পারেন না।