শাবিপ্রবি'র হল খোলা রাখার দাবিতে প্রতিবাদ

, ক্যাম্পাস

শাবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-18 18:54:27

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) তৃতীয় সমাবর্তনকে কেন্দ্র করে শীতকালীন ছুটির মধ্যে আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এছাড়া আন্দোলনের প্রথমদিন বুধবার (২০ নভেম্বর) মানববন্ধনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধার প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে একটি বিক্ষোভ মিছিল ক্যাম্পাসের ইউনিভার্সিটি সেন্টার, একাডেমিক ভবন ‘ই’ এবং ‘সি’ ঘুরে উপাচার্য ভবনের সামনে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

হল বন্ধের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, সামনে সমাবর্তন আছে। আর এসএসএফ'র নির্দেশনাও আছে। সর্বোচ্চ নিরাপত্তাটি এবার নিশ্চিত করা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। আমরা সব সময় চাই, আমাদের ছেলে-মেয়েরা ভালো থাকুক, সুস্থ থাকুক।’

প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ফয়সল আহমেদ শুভ’র সঞ্চালনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন- তানভীর আকন্দ, সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ্য, নিশাত জাহান নিসা, তাবিয়া তাসনিম আনিকা, নাজিরুল আজম, স্বপন আহমেদ।

সমাবেশে ফয়সল আহমেদ শুভ বলেন, ‘গতকাল যে দাবিতে আমরা মানববন্ধন করেছি, তা একটি যৌক্তিক দাবি ছিল। আলোচনা সমালোচনার মাধ্যমেই একটি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতির দিকে এগিয়ে যায়। এমন সব নিয়মগুলোই প্রতিষ্ঠিত হয় যা সবার জন্য মঙ্গলজনক। কিন্তু গতকাল মানববন্ধনে প্রক্টরিয়াল বডির বাধা দেওয়া ও মানববন্ধন করতে না দেওয়া আমাদের জন্য লজ্জার, আমরা তার প্রতিবাদ জানাই। জানা মতে, আর কোথাও মানববন্ধনের মতো একটি নিরীহ কার্যক্রমে বাধা দেওয়া হয় না।’

শাবিপ্রবিতে শীতকালীন ছুটিতে হল খোলা রাখার দাবিতে প্রতিবাদ
শাবিপ্রবিতে শীতকালীন ছুটিতে হল খোলা রাখার দাবিতে মানববন্ধন

সুদীপ্ত ভাস্কর অর্ঘ্য বলেন, ‘শীতকালীন ছুটি পিছিয়ে ক্যাম্পাস বন্ধ করেছে তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু আবাসিক হল কেন বন্ধ করবে? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের সময় হল বন্ধ করা হয় না। জানা মতে, সমাবর্তনের দিন কিংবা আগের দিন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হল বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসন এটা কীভাবে বলে ৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত হল বন্ধ থাকবে। ছাত্র-ছাত্রীরা জানুয়ারিতে টিউশনি করে। জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ সময় স্কুলের শিক্ষার্থীদের নতুন বছরের ক্লাস শুরু হয়। এর আগে কখনো হল বন্ধ থাকত না। হঠাৎ করে বিভিন্ন ছুটির ওপর ভর করে প্রশাসন সুযোগ পেলেই আবাসিক হল বন্ধ করে দেয়। ৮ তারিখ সমাবর্তন তাহলে ৯ থেকে ১৬ জানুয়ারি হল বন্ধের যুক্তিটা কী?’

তাবিয়া তাসনিম আনিকা বলেন, ‘ক্যাম্পাসকে যদি নিরাপদই মনে না করা হয়, তাহলে সীমানা প্রাচীর দেওয়ার কারণ কী, শোভাবর্ধন? আর শীতকালে মেয়েদের হলে প্রবেশের জন্য এক ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু ক্লাস-পরীক্ষা তো এক ঘণ্টা আগানো হয়নি। ছেলেদেরকে হলে প্রবেশের সময় সীমা না দিলেও মেয়েদেরকে কেন ৭টার আগে হলে ঢুকতে হবে।’

তানভীর আকন্দ বলেন, ‘ক্যাম্পাসে কোনো সুস্থ কালচার তৈরি হতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্যাম্পাসকে শূন্য করে ফেলা হচ্ছে। উন্নয়ন মানে শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, সামাজিক উন্নয়নও। সুস্থ কালচার না থাকায় শিক্ষার্থীরা ডিপ্রেশনে ভুগছে এবং মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে।’

এদিকে দীর্ঘ এক যুগ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সমাবর্তন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীদের মিলনমেলায় পরিণত হবে বলে মনে করছেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু হঠাৎ করে দীর্ঘদিনের জন্য হল ও ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়ায় এই মিলনমেলা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সমাবর্তনে উপস্থিত থাকবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। সমাবর্তনে নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শীতকালীন ছুটি ১৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ৫ জানুয়ারি থেকে ১৬ জানুয়ারি করা হয় এবং ক্যাম্পাস বন্ধের পাশাপাশি আবাসিক হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত সোমবার (১৮ নভেম্বর) অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর