ক্যাম্পাস সচল করার দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ মিছিল

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 18:57:38

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) সচল করে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে চলা আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়। এরপর পুরাতন প্রশাসনিক ভবন হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়। পরবর্তীতে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন আন্দোলনকারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সভা সমাবেশ ও মিছিলের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এ বিক্ষোভ মিছিল প্রায় শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশ শেষে আবারো বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মুরাদ চত্বরে এসে শেষ হয় দিনের কর্মসূচি।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, 'চারমাস হতে চলল শিক্ষক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে হল ভ্যাকেন্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা বিক্ষোভ মিছিল করছি। প্রশাসনের জানা উচিৎ কোনোভাবেই এ আন্দোলন দমন করা যাবে না। আমাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। হল ভ্যাকেন্টের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে মেয়াদোত্তীর্ণ সিন্ডিকেট সদস্যদের মতের ভিত্তিতে সুতরাং হল ভ্যাকেন্টের এই অবৈধ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।'

এছাড়া আগামী তিন তারিখে উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করার ঘোষণা দেন অধ্যাপক রায়হান রাইন।

ক্যাম্পাস সচল করার দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
মিছিলে আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা

সমাবেশে ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, 'সারাদেশ জানে জাহাঙ্গীরনগরে দুর্নীতি হয়েছে, যারা টাকা পেয়েছে তারা সারাদেশের মানুষের সামনে স্বীকার করছে যে টাকা পেয়েছে। উপাচার্য যদি দুর্নীতি না করে থাকেন, তাহলে সারাদেশের মানুষের সামনে সেটা প্রমাণ করুন, উপাচার্য দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন। দুর্নীতিবাজকে রক্ষা করার জন্য অগণতান্ত্রিকভাবে হল বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এর ফলে ১৫ হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে হুমকির মধ্যে ফেলা দেওয়া হয়েছে।'

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুশফিক উস সালেহীন বলেন, 'জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের প্রহসন দেখতে দেখতে পুরো ক্যাম্পাস এবং বাংলাদেশ বিরক্ত। উপাচার্য এর আগেও আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের একটি অংশকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর এখন চেষ্টা করছেন ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার ফলে যারা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আছেন তাদেরকে আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর। গত ২০-২২ দিন যাবৎ কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ করে রেখেছে এ প্রশাসন। আমরা তিন দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। বিশ্ববিদ্যালয় সচল করতে হলে অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে অপসারণ করতে হবে।'

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, 'আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মদদে আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করা হয়েছে। এ হামলার পরে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আর এক মুহূর্তের জন্য উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভয় পেয়ে ফারজানা ইসলাম হল ভ্যাকেন্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে রেখেছে। ফারজানা ইসলামের অপসারণের মধ্যে দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে।'

সমাবেশে ২০১০ সালে ২৭ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন 'ধ্বনি'র কক্ষে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে সাংস্কৃতিক সংগঠন ধ্বনি'র সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম পাপ্পু বলেন, 'প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করার কারণে রাতের আঁধারে ধ্বনির কক্ষে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছিল। তখনকার প্রশাসন বলেছিল তিনদিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কয়েকবছর পরেও আজ সেটা হয়নি।'

এছাড়া মিছিল পরবর্তী সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর