১০১ একরের স্বপ্নভূমি

বিবিধ, ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, নোয়াখালী | 2023-09-01 04:20:26

একশ এক একর। ছোট্ট এক রঙিন স্বপ্নভূমি। কী নেই এখানে! তপ্ত রোদ, মাথার উপর বিশাল আকাশ, ঝুম বৃষ্টি বিলাস, মেঘসাদা কাশবন আর নীল দিঘী। এখানে স্বপ্ন বোনা হয় আকাশমণির হাটে। আছে ময়না দ্বীপ, লন্ডন রোড, পদ্ম দীঘির পাড় ও সূর্যাস্তের মোড়।

বঙ্গবন্ধু চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য আমাদের অনুপ্রেরণা দেয় দেশকে ভালোবাসার, নতুন কিছু করার। এখানে নেই যান্ত্রিকতা কিংবা শহরের ন্যায় কোলাহল, নেই কোন দূষণ কিংবা যানজট । প্রকৃতির হাতে গড়া রঙিন স্বপ্নভূমির নাম নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (নোবিপ্রবি)।

নোয়াখালী জেলার মূল শহর মাইজদি থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে সোনাপুর চরজব্বর সড়কের পশ্চিম পার্শ্বে ১০১ একরের সুবিশাল ক্যাম্পাস উপকূলীয় অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।

মাত্র ৪টি বিভাগ নিয়ে যাত্রা শুরু। বর্তমানে ছয়টি অনুষদ, দুইটি ইনস্টিটিউট ও ৩০টি বিভাগ রয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গতিশীল যুগোপযোগী শিক্ষা, বৈচিত্র্যময় বিষয়ের সমন্বয়ে সাজানো হয়েছে এখানকার পাঠ্যসূচি।

নোবিপ্রবি ক্যাম্পাস /ছবি: এনএসটিইউ ফটোগ্রাফি ক্লাব  

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড টেলিকমিউমিকশন ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ফার্মেসি, এগ্রিকালচার, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স, মাইক্রোবায়োলজি, বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি, ফুড টেকনোলজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স, অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিকস, স্টাটিস্টিক্স, বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, ওশানোগ্রাফি বিভাগ, ইকোনমিক্স, বাংলাদেশ অ্যান্ড লিবারেশন স্টাডিজ, সমাজবিজ্ঞান, ইংরেজি, বাংলা, বিজনেস এডমিনিস্ট্রেশন, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম, শিক্ষা, আইন, সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইনফরমেশন সাইন্স অ্যান্ড লাইব্রেরী ম্যানেজমেন্ট এর মত মূল্যবান বিষয়গুলো চালু আছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এমন বৈচিত্র্যময় বিষয়ে অধ্যয়নের সুযোগ দেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো তেমন নেই।

নোবিপ্রবি ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ /ছবি: এনএসটিইউ ফটোগ্রাফি ক্লাব  

নতুন চারটি অমেরুদণ্ডী প্রাণীর সন্ধান, বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছের কৃত্রিম প্রজন, বাইপোলার ডিসঅর্ডার নিয়ে গবেষণায় সাফল্য, ক্যান্সার নিয়ে গবেষণা, ভুট্টা গাছের বর্জ্য থেকে জ্বালানি তৈরিসহ নানা ধরনের নিত্যনতুন গবেষণাতেও পিছিয়ে নেই ছোট এই ক্যাম্পাসটি।

শুধু পড়াশোনা নয়, খেলাধুলা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক দিক দিয়েও যথেষ্ট সক্রিয় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিএনসিসি, সাংবাদিক সমিতি, রোভার স্কাউট, ডিবেটিং সোসাইটি, মশাল, ব্লাড ডোনার সোসাইটি, লুমিনারি, ফটোগ্রাফি ক্লাব, ড্যান্সিং ক্লাব, ছায়া জাতিসংঘ, ক্যারিয়ার ক্লাব, হাসিমুখ, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, থিয়েটার, স্তবকসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এখানে সক্রিয়।

হতাশার মোড়/ ছবি: এনএসটিইউ ফটোগ্রাফি ক্লাব

বয়সে তরুণ ক্যাম্পাসে রয়েছে বেশকিছু দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা। এর মধ্যে সুবিশাল প্রবেশদ্বার, মূল ফটকের সামনেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিস্তম্ভ, প্রশাসনিক ভবনের সামনে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য , ফাউন্টেন পেন আকৃতির শহীদ মিনার, উপাচার্য ভবন, বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়াম, আবাসিক হল ও পার্ক উল্লেখযোগ্য।

এগারোটি একতলা বাস এবং ৮টি বিআরটিসি ডাবল ডেকার প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের পরিবহন সেবা দেওয়ার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

এখানে স্বপ্ন বোনা চলে অবিরত। হেরে যাওয়ার গল্প ভুলে নতুন করে পথ চলতে শেখায় এ ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীরা চায়ের আড্ডায় গান বাঁধেন, ‘এইখানে, এই এখানটায় স্বপ্নভূমি গড়েছি, একটু একটু করে স্বপ্নের জাল বুনেছি। পাখি হয়ে ডানা মেলে উড়ে এসেছি, এখানটার রঙ নিয়ে প্রজাপতি সেজেছি।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর