প্রকৃতির সবচেয়ে সংবেদনশীল প্রাণের একটি হলো প্রজাপতি। এটি পরিবেশের ভারসাম্যের পরিমাপক। কোনো বনের ১০০ শতাংশ ভূমিতে যদি ১০টি প্রজাপতিও থাকে, বুঝতে হবে সেখানকার পরিবেশ সুস্থ আছে। এছাড়া রং বেরঙের ডানা নিয়ে প্রজাপতি শুধু সুন্দর পতঙ্গ নয়, জলবায়ু বদল এবং পরিবেশ দূষণের মাত্রা নির্ধারণের সূচকও। জলবায়ু বদলালে বা পরিবেশ দূষণ হলে বদলে যায় ওদের গতিবিধি এবং পরিবর্তন আসে জীবনচক্রে।
শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে দশম প্রজাপতি মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রজাপতিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেন বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিরা। ‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ এই শ্লোগানকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দশম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে প্রজাপতি মেলা-২০১৯।
প্রজাপতি গবেষকরা বলছেন, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাছের মধ্যে পরাগরেণু সঞ্চারের মাধ্যমে গাছের বংশবৃদ্ধি ঘটাতে প্রজাপতির ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রজাপতি আবহাওয়া পরিবর্তনের আভাসও পায়। ফলে বিশ্ব জুড়েই প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা চলছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে বর্ধিত তাপমাত্রায় প্রজাপতি কীভাবে তার আচরণ পাল্টাচ্ছে, বিজ্ঞানীরা এর ওপরে রাখছেন বিশেষ নজর।
প্রজাপতিকে পরিচিত করে তুলতে এবং সংরক্ষণের লক্ষ্যে এবারের মেলাতে নানান কর্মসূচি রাখা হয়েছে বলে বার্তা২৪.কম-কে জানিয়েছেন মেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন। তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা ও কুইজ প্রতিযোগিতা, র্যালি, প্রজাপতি বিষয়ক আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী, জীবন্ত প্রজাপতি প্রদর্শন, প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড়ানো প্রতিযোগিতা, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনীর আয়োজন রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা প্রজাপতি সম্পর্কে মানুষের জানা শোনা বাড়াতে চাই। পাশাপাশি পরিবেশকে রক্ষা করতে চাই।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘প্রজাপতি রক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতি রক্ষার যে আহ্বান সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এদের রক্ষার মাধ্যমে প্রকৃতি রক্ষা পাবে অন্যথা আমাদের সবকিছু হারিয়ে যাবে। প্রজাপতিকে ভালো না রাখলে পরিবেশ ঠিক থাকবে না পরিবেশ ঠিক রাখতে হলে প্রজাপতিকে বাঁচিয়ে রাখবে। প্রজাপতি শুধু সৌন্দর্যের ব্যাপার নয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রজাপতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইসিইউএন) সাবেক কান্ট্রি ডিরেক্টর ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রজাপতি একক কোনো জীবন নয়, প্রজাপতি এই পরিবেশের সঙ্গে মিশে থাকে। সুতরাং এই পরিবেশ না থাকলে প্রজাপতিও থাকবে না। যেখানেই উন্নয়ন হয় সেখানেই প্রথম বলিদান হয় বৃক্ষের, এটা যেন না হয়। একটা বনের উপাদান যেমন বৃক্ষ ও বিভিন্ন প্রাণি, ঠিক তেমন একটি সুস্থ বনের নির্দেশিকা হলো প্রজাপতি। যে বনে যত বেশি প্রজাপতি থাকবে, সেই বন তত বেশি সুস্থ।’
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদার, অধ্যাপক সাদিয়া আহমদ, পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক, বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিচালক এএসএম জহির উদ্দিন আকন্দ, কিউটের ব্যবস্থাপক মাতলুব আক্তার প্রমুখ।
এবারের মেলায় প্রজাপতি বিষয়ক গবেষণায় বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ বাশারকে ‘বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০১৯’ এবং সবুজবাগ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী অরুণাভ ব্রুণোকে ‘বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট’ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।