চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণা ও সত্ত্বের (রিসার্চ অ্যান্ড প্যাটেন্ট) বিষয়ে জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন।
তিনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত হলেও এর সফলতা মূলত কৌশলগত প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের টেকনোলজি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মানসম্মত গবেষণা করতে হবে। আর তা হবে জনকল্যাণের অভিপ্রায়ে। আর প্যাটেন্ট নিয়ে কাজ করতে হবে। আমরা এবিষয়ে কাজ করছি।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) পূর্বাচল আমেরিকান সিটিতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ড. সাজ্জাদ হোসেন এসব কথা বলেন।
চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (জিইউবি) উদ্যোগে 'সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' শীর্ষক এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব একটি বৈশ্বিক বাস্তবতা, এই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বাস্তব। প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ভিশন ২০৪১ সালে বাংলাদেশ পরিণত হবে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে।
'আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে বাস করছি। এর স্থপতি হিসেবে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তার পরিকল্পনায় আমরা প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশের ওপর জোর দিয়েছি। আমাদের বিশাল সম্ভাবনাময় তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রযুক্তিজ্ঞানে দক্ষ করে তুলতে হবে।'
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে মূল হিসেবে ধরে আমরা যদি শিক্ষিত সমাজে প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে পারি তাহলে চতুর্থ শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কঠিন হবে না। এক্ষেত্রে আমরা হবো বিশ্বে রোল মডেল।
এ সময় বাংলাদেশি গ্র্যাজুয়েটদের স্কলারশিপসহ উচ্চশিক্ষার জন্য জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলেও উল্লেখ করেন ইউজিসি সদস্য ড. সাজ্জাদ হোসেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জিইউবি উপাচার্য ড. মো. গোলাম সামদানী ফকির বলেন, একুশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার শর্তই হলো প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জ্ঞান। এটা একটু জটিল। এই বিষয়কে মোকাবেলা করতে পারলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে।
সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও জিইউবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত কয়েক বছরে মানুষের জীবনযাত্রায় এতটাই পরিবর্তন আসছে, যা আগে কল্পনাও করেনি কেউ। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতে ও শিল্প-বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যেই আমরা 'সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০' শীর্ষক এই আয়োজন করেছি।
সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্ট ফ্লোরিডার আইইইই ফেলো এবং ইইই প্রফেসর ড. মুহাম্মদ এইচ রশিদ, আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক সজল কে দাস, আইইইই বিডিএস চেয়ার ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. সেলিয়া শাহনাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন ও জাপানসহ বিশ্বের ১২টি দেশের শতাধিক গবেষক অংশ নিয়েছেন।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাওয়া ২০৭টি গবেষণা প্রবন্ধের মধ্য থেকে বাছাই করা ৭৯টি প্রবন্ধ সম্মেলনে মৌখিকভাবে এবং ৩৬টি প্রবন্ধ পোস্টার প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হচ্ছে। সম্মেলনে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই), টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স অ্যান্ড সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত গবেষণার ফলাফল ও শিল্প প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া আইইইই এক্সপ্লোর ডিজিটাল লাইব্রেরিতে স্থান পাবে শিক্ষার্থী ও গবেষকদের গবেষণা প্রবন্ধগুলো।
সম্মেলনে উপস্থাপিত মোট পাঁচটি প্রবন্ধকে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হবে, যা পরবর্তীতে গ্রিন ইউনিভার্সিটির জার্নালে প্রকাশ পাবে। এছাড়াও সম্মেলনে সেরা প্রবন্ধের জন্য তিনজনকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড হিসেবে 'ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা', 'ঢাকা-কুয়ালালামপুর-ঢাকা' এবং 'ঢাকা-ব্যাংকক-ঢাকা'র টিকিট দেওয়া হবে।
অন্যদিকে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হারুনুর রশিদ বেস্ট পেপার অ্যাওয়ার্ড হিসেবে দেওয়া হবে যথাক্রমে ১০ হাজার, ৬ হাজার এবং ৪ হাজার টাকা। আইইইই বাংলাদেশ সেকশনের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে আরো একটি বিশেষ পুরস্কার।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইইইই, বাংলাদেশ সেকশন। সম্মেলনে সহযোগিতা করেছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি বিভাগ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস।