জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদ থেকে একটি মিছিলটি বের করা হয়। মিছিলটি প্রধান সড়কগুলো প্রদিক্ষণ করে মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে উত্থাপিত দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত ও শাস্তির দাবি করেন। এছাড়াও তারা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে সরকারের ‘নীরব’ ভূমিকার ব্যাপারে প্রশ্ন তোলেন।
প্রতিবাদ সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সংগঠক ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিষয়ে একটি পুস্তক বেরিয়েছে। আমরা ইউজিসিসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই আর কি কি প্রমাণ দিলে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করা হবে। যে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে আপনারা যদি মনে করেন এটার তদন্ত করা দরকার তবে তদন্ত করুন। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের যে অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলবে তার থেকে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে উপাচার্যরা মানসিকভাবে সুস্থ কিনা। আমরা আবারো বলতে চাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা সেটা সঠিকভাবে তদন্ত করুন, অনথ্যা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আমরা অন্য পথ বেছে নিতে বাধ্য হবো।
ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের সংগঠক আবু সাঈদ বলেন, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান দেখে আমরা ভেবেছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে সরকার। কিন্তু আমরা হতাশ, আমরা দেখছি সরকার তার সুবিধামত রাজনৈতিক স্বার্থে দুর্নীতি দমন করতে নেমেছে। সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই অতিদ্রুত দুর্নীতিগ্রস্থ উপাচার্যকে অপসারণ করুন।'
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের দফতর সম্পাদক আতাউল হক বলেন, রাষ্ট্রের কাছে বলতে চাই আপনারা যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির সঠিক তদন্ত এবং ব্যবস্থা না নেন তবে এর ফলাফল ভালো হবে না।
মিছিল ও সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
এর আগে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গণসংযোগ, ৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল, ১০ ফেব্রুয়ারি ভিসির অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল এবং ১২ তারিখ একই দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন তারা।
প্রসঙ্গত, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়নের লক্ষে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এরপর থেকে মাস্টারপ্ল্যানের পুনর্বিন্যাস, টেন্ডারে আহ্বানে অস্বচ্ছতাসহ নানা অভিযোগ তুলে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। পরবর্তীতে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে উপাচার্য অপসারণের এক দাবিতে আসেন আন্দোলনকারীরা। আর এ দাবিতে গত বছরের ৪ নভেম্বরে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে তার বাসভবনে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনকারীরা। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের একটি অংশ হামলা চালায় আন্দোলনকারীদের ওপর হামলায় শিক্ষক, সাংবাদিকসহ অন্তত ৩৫ জন আহত হন।