তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান, রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দার মির্জা, প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিনকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃক দেওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি উঠেছে। ঢাবির বিশেষ সমাবর্তনে বঙ্গবন্ধুকে ‘ডক্টর অব লজ’ (মরণোত্তর) দেওয়ার আগে তাদের ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অবস্থান কর্মসূচির মাধ্যমে এ দাবি জানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার আন্দোলন পরিষদ।
এরআগে গত মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) এ ব্যাপারে এক সংবাদ সম্মেলন করে তারা।
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুনুর রশিদ, সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান নমিতা মন্ডল, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. সাখাওয়াত আনসারী এবং সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক প্রমথ মিস্ত্রিসহ প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
অবস্থান কর্মসূচিতে লিখিত বক্তব্যে তারা দাবি করেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্ব প্রাচীন এবং অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। যাদেরকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে, তারা রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।
এ সময় বক্তারা তিন ব্যক্তি সম্পর্কে ডিগ্রি প্রত্যাহারের কারণ তুলে ধরেন। তারা বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৪৮ এবং ৫২-এর দুইপর্বে খাজা নাজিমুদ্দিনের ভূমিকা ছিল বাংলার বিরুদ্ধে এবং বাঙালি বিরোধী। যখন বাংলাকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা, আদালতের ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব পেশ করা হয় তখনি আইনসভার সদস্য কর্তৃক সমর্থনের পর তা গৃহীত হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব এবং চুক্তি হয়েছিল তা নাজিমুদ্দিন উত্থাপন করেননি। সংগ্রাম পরিষদ এ ব্যাপারে তার কাছে কৈফিয়ত দাবি করলে তিনি বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এভাবে তিনি বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন বাঙালিদের সঙ্গে।’
বক্তারা আরও বলেন, অন্যদিকে ইস্কান্দার মির্জার ছিলেন অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী এবং স্বার্থানুকূল। তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারকে বরখাস্ত করেন। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। সামরিক আইন জারি করেন। তিনি সংবিধান বাতিল করলেও তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা দেয়নি। আইয়ুব খান ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু। তিনি প্রথম হ্যা/না পদ্ধতির প্রয়োগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াই ১৯৬০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি প্রথম এনএসএফ নামের পেটোয়া বাহিনী তৈরি করেন। তার দাম্ভিকতার পরিণতিতে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিহিংসার চরিতার্থ কল্পে ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলা করেন।
পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে তারা বলেন, আমরা আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সময় দিয়েছি। এ সময়ের মধ্যে কোনো পদক্ষেপ না নিলে আমরা থেকে আবারও রাজু ভাস্কর্যের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করব।