সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) প্রধান ফটক সংলগ্ন সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কের বেহাল দশায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসী ও যাত্রীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তেমুখী পয়েন্ট পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তা দীর্ঘ ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভাঙা অবস্থায় রয়েছে, রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। আর সিলেট সিটি করপোরেশনের অধীনে মেরামত কাজ চলতে থাকা মদিনা মার্কেট এলাকায়ও রাস্তা নির্মাণ, ড্রেনের খনন কাজ চলছে প্রায় ৬ মাসেরও অধিক সময় ধরে।
ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের ভাঙা রাস্তায় চলাচল করতে যানজট আর ধুলোবালি এখন মানুষের নিত্যদিনের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মালবাহী ট্রাক ও বাস চলাচল করে। যার ফলে দিন দিন এই সড়কের অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।
মহাসড়কের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক থেকে তেমুখী পর্যন্ত সড়কে গর্ত ভরাট করতে দেওয়া হয়েছে ইট। এতে বাতাসে ছড়াচ্ছে ক্ষতিকর ধুলা-বালি। আর এই ধুলো ও ভাঙা রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১১ হাজার। প্রতিনিয়তই এতো সংখ্যক শিক্ষার্থীদের এই রোড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়।
শিক্ষক-কর্মকর্তা আর কর্মচারী মিলিয়ে এই রোডে শুধুমাত্র এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ হাজার মানুষ আসা-যাওয়া করেন। ভাঙা রাস্তা আর তীব্র যানজটে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রায়ই পড়ছেন ভোগান্তিতে। বাসগুলো যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারায় ক্লাস-পরীক্ষার শিডিউল প্রায়ই ব্যাহত হচ্ছে।
এলাকাবাসীসহ এই সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করা যাত্রীরা জানান, দীর্ঘদিন যাবত বেহাল দশায় থাকা এই সড়কে চলতে গিয়ে তারা অতিষ্ঠ। বিশেষ করে অসুস্থ রোগী, বয়স্ক যাত্রী কিংবা গর্ভবতী নারীদের এই রোডে চলাচল করা একবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধুলাবালিতে শ্বাসকষ্ট কিংবা এলার্জিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই মহাসড়কের দুপাশে বিশ্ববিদ্যালয় ও বাসস্ট্যান্ডকে কেন্দ্র করে অসংখ্য রেস্তোরা গড়ে উঠেছে। রাস্তার ধুলাবালি আর ইটের গুঁড়ো মিশে যাওয়া খাবার প্রতিনিয়ত খাচ্ছে মানুষ, যা মরণব্যাধি রোগবালাই সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নীরব।
এই সড়কের সিএনজি চালক আব্দুস সাত্তার বলেন, রাস্তার এই বেহাল দশার কারণে প্রতি সপ্তাহেই গাড়ি ঠিক করতে হয়। ভাঙা রাস্তায় সিএনজির সামনের চাকার স্কেল ভেঙ্গের যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইটের গুড়া ও ধুলাবালির কারণে শ্বাস নিতে সমস্যা হয়। সংশ্লিষ্ট সকলের উচিৎ দ্রুত রাস্তা সংস্কার করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোকাব্বির হোসেন বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিনই আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যাই। কিন্তু রাস্তার বেহাল দশার কারণে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রচুর ধুলোবালির কারণে এখানে মুখে মাস্ক পড়ে চলাচল করতে হচ্ছে। কর্তৃপক্ষের উচিৎ দ্রুত রাস্তাটি সংস্কারে এগিয়ে আসা।
শিক্ষার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের গর্ত বন্ধ করতে এবং সংস্কারের জন্য ইট দেওয়া সত্যিই দুঃখজনক। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্ট মহলের উচিৎ দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা।
সড়কের এই অবস্থা থেকে দ্রুত বের হয়ে না এলে স্বাস্থ্যের জন্য আরও অধিক ক্ষতিকর হবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চিফ মেডিক্যাল অফিসার ডা. কৃষ্ণপদ আচার্য।
তিনি বলেন, ইটের গুঁড়া ও ধুলাবালি শ্বাসনালীতে ঢুকে শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন জটিল রোগ হতে পারে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের সংক্রমণ হতে পারে। তা ছাড়া খাবারের সঙ্গে ধুলাবালি মিশলেও বিভিন্ন ধরনের অসুখ হতে পারে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, মদিনা মার্কেটের ড্রেনের কাজ শেষ করতে মার্চ থেকে সর্বোচ্চ এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ড্রেনের কাজকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সাময়িক অসুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু বর্ষাকালে মদিনা মার্কেট এলাকায় পানি জমা থাকে, তাই দীর্ঘমেয়াদী একটি সমাধানের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে পরবর্তীতে কোন সমস্যা তৈরি না হয়।
সিলেটের সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় গেইট থেকে তেমুখী পয়েন্ট পর্যন্ত মাটিতে সমস্যা আছে বলে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। তাই আমরা ‘সয়েল টেস্ট’ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখানে ইট দিয়ে স্বল্পস্থায়ী সমাধান করা হয়েছে। ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসলে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান পাওয়া যাবে। কাজ করতেছি আশা করি দ্রুত সমাধান করতে পারবো।