সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা অপরিকল্পিত, সমন্বিত দুর্নীতির নামান্তর—স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এখতিয়ার বহির্ভূত ক্ষমতা প্রদর্শন করছে বলে অভিযোগ করেছেন উন্মুক্ত এক আলোচনা সভার বক্তারা।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ডাকসু ভবনে আয়োজিত ‘সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা: ছাত্র শিক্ষকের ভাবনা ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনের আয়োজনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ডাকসু ভিপি, বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরা।
এ সময় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সায়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায়। কারণ মেডিকেলের সব কারিকুলাম একই। তাদের এতে তেমন কোনো সমস্যা হবে না। বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে পরীক্ষামূলক গুচ্ছ পরীক্ষা নেওয়া যায়। তবে এ ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাইরে রাখতে হবে। ইউজিসি তার ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করছে। তারা এখতিয়ারের বাইরে ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চায়। এটা কখনো স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় মেনে নিতে পারে না।
ইংরেজি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আবুল হাসনাত বলেন, যাতায়াত, সময় নষ্ট ও ভর্তি ফরমের অতিরিক্ত খরচের কথা বিবেচনা করে ইউজিসি এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। কিন্তু আমি মনে করি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার সিদ্ধান্ত সমন্বিত দুর্নীতির নামান্তর। ইউজিসির সক্ষমতা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল। তাদের কোনো ধরনের সক্ষমতা নেই কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর একত্রে পরীক্ষা নেওয়ার।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী রহমতুল্লাহ বলেন, ইউজিসির এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অমূলক আখ্যা দিয়ে আমি প্রত্যাখ্যান করলাম। এটা আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে ন্যাশনালের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার একটা চক্রান্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা বাতিল চাই। সবচেয়ে বড় দাবি হওয়া উচিত এই প্রক্রিয়া কিভাবে বাস্তবায়ন হবে সেটা আমাদের জানান। এটা নিয়ে আপনারা মুক্ত আলোচনা করেন। এভাবে কোন সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে চাপিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। ইউজিসির কাছ থেকে আমরা জানতে চাই, এটা হওয়া উচিত সবচেয়ে বড় দাবি।
অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর তার বক্তব্যে বলেন, ইউজিসি ভালো একটা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের পরিবেশের সাথে এটা যায় না। আমেরিকার সাথে আমাদের দেশের তুলনা করে লাভ নেই। তাদের স্বচ্ছতা আর আমাদের স্বচ্ছতার মধ্যে অনেক ফারাক আছে।
তিনি বলেন, সমন্বিত পরীক্ষা হলে ঢাকার বাইরে কেন্দ্র পড়বে। সেখানে স্থানীয়দের একটা প্রভাব থাকবে, যার ফলে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরা ভালো জায়গায় চলে আসবে।
আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহীম নাফিসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন আখতার হোসেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের দেওয়া প্রস্তাবসমূহ কর্তৃপক্ষের কাছে উত্থাপন করবেন বলে জানান।