দুটি বিষয়কে সামনে রেখে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিভিন্ন বিভাগে চালু থাকা সান্ধ্য কোর্স নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিল সভায় বিতর্ক চলছে।
জানা গেছে, বেশির ভাগ শিক্ষক সান্ধ্য কোর্স চালু রাখতে ও এটাকে পরিমার্জনের পক্ষে মত দিয়েছেন। বার্তা২৪.কমের সঙ্গে যে কয়েকজন শিক্ষকের কথা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই সান্ধ্য কোর্স রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব নবাব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে একাডেমিক কাউন্সিলের সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সভা চলছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব স্বাতন্ত্র্য অক্ষুন্ন রাখতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় সর্বসম্মতিক্রমে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা একটা মেজাজের, এটা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সবসময় ব্যতিক্রম। তাই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
সান্ধ্য কোর্স থাকবে কি থাকবে না, এটা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলছে বলে জানান তিনি।
এ সময় একাডেমিক কাউন্সিল সভায় নিজের দেওয়া বক্তব্য উল্লেখ করে আবুল মনসুর আহমেদ বলেন, সান্ধ্য কোর্স নিয়ে গঠিত কমিটি কোনো জায়গায় সান্ধ্য কোর্স বন্ধের কথা বলেননি। সুপারিশে দুটি জিনিস বেরিয়ে আসছে, একটা হচ্ছে—যৌক্তিকতা, আরেকটি হচ্ছে সমন্বয়সাধন। কোর্সগুলো চালু রেখে এ দুটি বিষয় নিশ্চিত করতে উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) ও ট্রেজারার মহোদয়ের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা যেতে পারে। সরকারের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট কর্মসূচিতে ইনক্লুসিভ এডুকেশনের কথা বলা হচ্ছে। সেখানে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতের কথা বলা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই প্রোগ্রামকে বন্ধ করা উচিত হবে না। মাথায় সমস্যা হলে মাথা কেটে ফেলা কোনো সমাধান না। এই প্রোগ্রাম চলমান রেখে কিভাবে পরিমার্জন-পরিবর্তন করা যায় সেটা ভাবা উচিত হবে।
অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমেদ দাবি করেন, ইউরোপ-আমেরিকাতেও নিয়মিত কোর্সের পাশাপাশি প্রফেশনাল কোর্স রান করে।
সভায় একাধিক অধ্যাপক বক্তব্যকালে সান্ধ্য কোর্সের পক্ষ নিয়ে বলেন, আমাদের যে বেতন কাঠামো সেটা নিতান্ত কম। আমাদের সমমানের যারা অন্যান্য পেশায় আছে তাদের তুলনায় আমাদের বেতন কাঠামো অনেক কম। সান্ধ্য কোর্স চালু থাকলে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাডেমিক কাউন্সিলের এক সদস্য বার্তা২৪.কমকে বলেন, পুরো হাউজ সান্ধ্য কোর্স রাখার পক্ষে, যারা বিপক্ষে তারা কোনো কথা বলছেন না। তাদের অনেকে চুপ রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এটা পরিমার্জন হতে পারে। তবে বাতিল হবে না বলেও একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
তবে সান্ধ্য কোর্সের বিপক্ষের শিক্ষকদের বক্তব্য দিতে তেমন সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন একাধিক শিক্ষক। তাদের দাবি ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী আর সান্ধ্য কোর্সের শিক্ষার্থী কখনও এক হতে পারে না। তাই আমরা এটার বিরোধিতা করছি। তবে নিজেদের বক্তব্য এখনও সভায় উপস্থাপন করতে পারেননি বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
সভা সূত্রে জানা যায়, প্রায় চারশ’ শিক্ষকের উপস্থিত রয়েছেন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়, যেটা আগে দেখা যায়নি। সান্ধ্য কোর্স রাখতে শিক্ষকদের একাধিক কোরাম মেইনটেইনের কথাও শোনা গেছে।