বিশ্বব্যাপী করোনার থাবায় প্রতিদিনই প্রাণ হারাচ্ছে শত শত মানুষ। এখনো আবিষ্কৃত হয়নি মরণঘাতি এই রোগের প্রতিষেধক। এরই মধ্যে বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত ৫ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তারপর থেকেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে পুরো দেশে। আর উচ্চ ঝুঁকিতে আছে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
করোনা আতঙ্কে দিন পার করছেন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৫ মার্চ) সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হল পরিদর্শন করে নানা দৃশ্য দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের গণরুমে গাদাগাদি করে তিন হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী থাকেন। দেশে নভেল করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাওয়ায় বেশ উদ্বেগের মধ্যে আছেন গণরুমে বসবাসরত এসব শিক্ষার্থীরা।
করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য বিস্তার রোধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে শিক্ষার্থীরা সহজেই এতে সংক্রামিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন। কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতির ঘাটতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা জানান, কর্তৃপক্ষের নেওয়া ব্যবস্থা সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তি (লিফলেট) দেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। তারা অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ডেঙ্গু মোকাবেলায়ও সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন। আবার এখন পর্যন্ত এই মরণঘাতি ভাইরাস প্রতিরোধে প্রশাসনের কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি।
মাস্টারদা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী জিহাদ আব্দুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে আমাদের যত মারাত্মক সমস্যাই হোক না কেনো বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতাল প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে না। সেক্ষেত্রে যদি করোনাভাইরাস যদি একবার ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে আল্লাহ ভালো জানে কি হবে। প্রশাসনের প্রস্তুতি হিসেবে লিফলেট বিতরণ ছাড়া আর কিছুই দেখছিনা।
ঢাবির গণরুমগুলো সবচেয়ে বেশি ঘনবসতিপূর্ণ ও জনসমাগমস্থল দাবি করে শিক্ষার্থী আবিদুর রহমান বলেন, এখানে প্রতিটি হলে প্রায় ১০-১৫টি করে গণরুম রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে থাকে। এই শিক্ষার্থী জানান, যদি কোনো কারণে এ সংক্রমণ একবার ছড়িয়ে পড়ে তাহলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
#ক্লাস বর্জনের ঘোষণা: এদিকে করোনা আতঙ্কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনিকভাবে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস প্রতিনিধিরা ক্লাস বর্জন করেছেন। এখন পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩২টি বিভাগ অনির্দিষ্টকালের জন্য বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয়।
#চার শিক্ষার্থীর অনশন: অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ চেয়ে শুক্রবার রাত থেকে সন্ত্রাস বিরোধী রাজুভাস্কর্যে অনশনে বসেছে চারজন শিক্ষার্থী। তাদের অনশনকে ইতিবাচক বলেছেন প্রক্টর রব্বানী। প্রক্টর জানান, বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে আমরা দ্রুত জানিয়ে দেব।
#আজ ডাকসুর সভা: বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধে ডাকসুর কোনো পদক্ষেপ আছে কী না জানতে চাইলে ভিপি নুরুল হক নুর ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, আজ দুপুরে তারা ডাকসু ভবনে এক আলোচনা সভায় সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে প্রশাসনকে যেকোনো ধরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান এই দুই ছাত্র নেতা।
#বিশ্ববিদ্যালয়ের নেই প্রস্তুতি: খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত প্রভোস্ট কমিটির বৈঠকে শিক্ষার্থীদের সতর্ক থাকা এবং মেডিকেল প্রধানের স্বাক্ষরিত একটি লিফলেট বিতরণ করার উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অপ্রয়োজনে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দেওয়া হয়। এবং হলগুলোকে স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা হয়। জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফী বলেন, আমাদের মেডিকেলে করোনা শনাক্তের সরঞ্জামাদি নেই। আমরা বিভিন্ন হল ও বিভাগে সচেতনতামূলক লিফলেট পাঠিয়েছি। এসয় তিনি গণরুমের শিক্ষার্থীরা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে বলেও মত দেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেছেন, পাবলিক সমাগমের প্রয়োজন না হলে আমরা সেগুলো পরিহার করতে পারি। এই ডিসিশনগুলো আমাদের ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে। পাশাপাশি সবার সহযোগিতা থাকবে। নিরাপদ নিজে থাকব, অন্যকে নিরাপদ রাখব এধরণের একটা সচেতনতা, দায়িত্ববোধ এবং সতর্ক অবস্থান থেকে আমরা কাজ করব।
প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড মো আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে সবাইকে সতর্ক ও সাবধানে থাকতে হবে। আর বিভিন্ন আচরণে শিষ্টাচার অনুসরণ করা। এটা নিয়ে শঙ্কিত হওয়া যাবে না।