আজ সোমবার ৬ জুলাই। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ও প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৫৩ সালের আজকের এই দিনে ড. ইতরাত হোসেন জুবেরীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বন্ধ প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ও। আর তাই এই দীর্ঘ সময়টা কাটছে বাড়িতেই। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার কারণে প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রতি এক অদ্ভুত মায়া জন্মেছে। মনের অজান্তেই নয়ন সম্মুখে ভেসে ওঠে শহীদ জোহা স্যারের রক্তে ভেজা মতিহারের চত্বরটি।
প্যারিস রোডের গগন শিরিষ গাছগুলোর মাথার উপর দিয়ে সূর্যের আলো ঠিকরে পড়া। কতদিন এই দৃশ্য দেখি না। মনে হয় এখনই ছুটে যাই। এখন হয়তো ওই রাস্তায় কেউ ভিড় করে না। ভোরের হাওয়া খেতে যারা সড়কটিতে হেঁটে বেড়াত তাদের হয়তো এখন তেমন দেখা যায় না। বিকেলে শাড়ি পরে কেউ সড়কটিতে বসে ছবিও উঠায় না। হয়তো প্রতিদিনই গাছগুলোতে থাকা পাখিগুলো কিচির-মিচির করে। কিন্তু তাদের কলকাকলিতে মুখরিত হওয়ার জন্য কেউ বিষ্মিত নয়নে অপেক্ষা করে না।
বন্ধ ক্যাম্পাসের টুকিটাকি চত্বরটা এখন আর শিক্ষার্থীদের গান-বাজনার আড্ডায় জমে ওঠে না। ক্যাম্পাসের দোকানগুলোতে চায়ের চুমুকের সঙ্গে বন্ধুরা আর তাদের ক্লাস নোট নিয়ে আলোচনা করে না। একাডেমিক ভবনগুলোতে শিক্ষার্থীদের চঞ্চলতাও নেই। খুব সকালে উঠে ক্লাসে যাওয়ার তাড়াহুড়া নেই কারো। শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর পাড়ে কিংবা শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঠে গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সাথে গলা মিলিয়ে গান গায় না কেউ। এনামুল ভাইয়ের চায়ের দোকানে রাজনৈতিক আলাপ কেউ করে না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরা তাদের রাজনৈতিক বিতর্কে মেতে উঠছে না। অনেকদিন ধরে হয়ত শিক্ষার্থীরা মশাল মিছিল বের করছে না।
প্রিয় গ্রন্থাগার আজ নিঃসঙ্গতায়। যেই জায়গাটি সর্বদা শিক্ষার্থীদের আনাগোনায় মুখর থাকে সেই গ্রন্থাগার চত্বরটির চারপাশে আজ কেউ নেই। কাক ডাকা ভোরে গ্রন্থাগারের রিডিং রুমে জায়গা ধরার জন্য কেউ ব্যাগ রেখে যায় না। গ্রন্থাগারের বইগুলোও হয়ত শিক্ষার্থীদের হাতের স্পর্শ পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছে।
করোনা মহামারি থেকে খুব শিগগিরই আমাদের পৃথিবী সুস্থ হয়ে উঠবে। সবকিছু স্বাভাবিক হবে। শিগগিরই আমরা ক্যাম্পাসে ফিরব। প্রিয় মানুষগুলোর সাথে আবার দেখা হবে। তবে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকলেও মনটা সবসময়ই ক্যাম্পাসেই পড়ে থাকছে। খুব করে যেতে ইচ্ছে করছে মতিহারের সবুজ চত্বরে। প্রতিনিয়ত স্মৃতিতে ভেসে উঠছে ক্যাম্পাসের ছবি। মনে মনে বলি, প্রাণের ক্যাম্পাস, তোমায় তখনই সব থেকে বেশি দেখি যখন তোমায় দেখি না।
প্রসঙ্গত, ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক পরিষদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন পাশ হয়। সেই আমলে পদ্মাপাড়ের বড় কুঠি ও রাজশাহী কলেজের বিভিন্ন ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৬১ সালে বড় কুঠি থেকে নয়নাভিরাম মতিহারের এ সবুজ চত্বরে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। রাজশাহী শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে পদ্মা নদীর তীর ঘেঁষে ক্যাম্পাসটি ৭৫৩ একর জমিতে স্থাপিত হয়।