যখন আপনি একটি ইন্টারভিউ প্যানেলের সম্মুখীন হন, তখন নিজের ভেতরে এক ধরনের উত্তেজনা অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। ইন্টারভিউ প্যানেলিস্টদের মধ্যে একজন আপনাকে খুব সহজ একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারেন, যেমন "আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন"। আপনার উত্তরটি তখন কিভাবে শুরু করবেন?
উত্তর শুরু করার আগে মনে রাখবেন, ইন্টারভিউতে বর্তমানে গ্রেড এবং একাডেমিক কার্যকলাপ সম্পর্কে কম গুরুত্ব দেয়া হয় এবং আপনার কাজের দক্ষতার ব্যাপারে বেশি নজর দেয়া হয়। যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হয় তা হলো- একজন চাকরিপ্রার্থী কত দ্রুত এবং কতটা সৃজনশীলভাবে ভাবছেন, সে অফিসে কাজের চাপের সাথে মোকাবিলা করতে পারবেন কিনা এবং চাকরিপ্রার্থী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিভাবে এবং কতটা ভালভাবে নিজেকে মানিয়ে নিবেন।
কোম্পানির কালচার এবং মান সম্পর্কে পরিচিত হয়েই নিজেকে ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুত করুন। কোম্পানির বার্ষিক বা মিডিয়া রিপোর্টগুলি থেকে এই ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা সহজ। অথবা আপনি চাইলে লিঙ্কডইনে কোম্পানির বর্তমান কর্মীদের সাথে কানেক্ট করে এবং প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে সহজেই তথ্যগুলো পেতে পারেন। কিছু তথ্য খুঁজে বের করুন। যেমন, যদি বয়সের বিভিন্নতা এবং সামগ্রিক সমস্যা কম থাকে তখন বুঝা যায় যে, কোম্পানিটি কর্মীবান্ধব এবং বিপরীতে কর্মীরাও কোম্পানির কালচারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
এখানে কয়েকটি কমন প্রশ্ন রয়েছে, যা আপনি সহজেই অনুমান করতে পারেন যে জিজ্ঞেস করা হবে, যেগুলোর যথাযথ উত্তর করা এতোটাও সহজ না। সাথে কিছু পরামর্শও থাকছে যে আপনি কিভাবে এগুলোর যথাযথ উত্তর দিতে পারবেন।
এটি প্রার্থীর জন্য প্রথম এবং খানিকটা ভীতিকর প্রশ্ন। এর প্রায় কয়েক মিলিয়ন উত্তর আছে, এবং তাদের অধিকাংশই ভুল! কিন্তু, এখানে ঘাবড়াবেন না। নিয়োগকর্তারা আপনার পরিচয় জানতে চাওয়ার পেছনে একটি কারণ আছে। এর নিখুঁত উত্তর দেয়ারও একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র রয়েছে। এখন, কিভাবে এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি এই কোম্পানিতে কতটা ‘উপযুক্ত’ তা নির্দেশ করতে পারে। নিজেকে উপস্থাপন করুন এমনভাবে যেনো তা আপনার আত্মবিশ্বাস প্রমাণ করে এবং কোম্পানি কালচারের সঙ্গে আপনার ব্যক্তিত্ব-বৈশিষ্ট্য মিলে যায়। একটি উত্তর হতে পারে, ‘আপনাদের প্রয়োজনীয়তাগুলোর সাথে আমার যোগ্যতা এবং সাফল্য মিলছে’। নিশ্চিতভাবেই, পরবর্তী প্রশ্নটি এমন হবে, ‘আপনার অর্জনগুলি কী এবং আমাদের প্রয়োজনীয়তাগুলির সাথে কীভাবে মিলছে বলে মনে হয়?’ এর উত্তরে আপনি জীবনে কি কি করেছেন তা নিয়ে আলোচনা করার সময় এখন- এটি হতে পারে খেলাধূলা, পড়াশোনা এবং এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিজ। তবে মনে রাখবেন, আপনি যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছেন সেটি অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হতে হবে। অপ্রয়োজনীয় উদাহরণ এড়িয়ে যেতে হবে।
উদাহরণস্বরূপ, খেলাধূলায় আপনার নেতৃত্বে কিভাবে জয়ী হয়েছেন বা সাফল্য অর্জন করেছেন; একাডেমিক লাইফে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট করেছেন, এক্সট্রা কারিকুলার একটিভিটিজে কিভাবে টিমওয়ার্ক করেছেন তা উল্লেখ করতে পারেন। বিষয়গুলো এমনভাবে নিয়োগকর্তাদের সামনে ফুটিয়ে তুলুন যেন তারা আপনার কাজের ধরন এবং অর্জনগুলো সহজেই বুঝতে পারে।
এই দারুণ প্রশ্নটি করা হয় আপনি কতটা সততার সাথে উত্তর দিচ্ছেন, সেটি বুঝার জন্য। আপনার কয়েকটি দুর্বলতা খুঁজে বের করুন। যতই পারফেকশনিস্ট হোন, সব কিছুর পরেও আপনি মানুষ! খেয়াল রাখবেন যে, খুব বেশী কিছু যেন বলা না হয় এবং যে দুর্বলতাগুলোর কথা বলছেন সেগুলো যেন আপনার কাজের নেতিবাচক কোন দিক বলে মনে না হয়। উদাহরণস্বরূপ, আমি খেতে খেতে কথা বলি, আমি সবকিছু নিয়েই একটু খুঁতখুঁতে ইত্যাদি। আপনি যা বলবেন তা যেন অন্য সবার থেকে একটু আলাদা আর ভিন্ন হয়। আপনার সিনিয়র বা অন্য কাউকে কপি করবেন না। মনে রাখবেন, আপনার দুর্বলতার তালিকাটা যেন ২-৩ টার বেশি কিছুর জায়গা না হয়।
সাধারণত ইন্টারভিউয়ের শেষ পর্যায়ে এ প্রশ্নটি করা হয়। যখন আপনি ইন্টারভিউ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোম্পানি সম্পর্কে একটি মূল্যায়ন করবেন, তারপর এই প্রশ্নের উত্তরটি গুছিয়ে নিতে পারেন। কোম্পানিটি কি তার গ্রোথ পর্যায়ে নাকি ইতোমধ্যে ভালো অবস্থানে আছে? আপনার উত্তরগুলো সে অনুযায়ী গুছিয়ে নিন। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, ‘প্রথম অবস্থায় আপনি আমাকে কি কি টার্গেট ফুলফিল করতে বলবেন?’
মনে রাখবেন যে মুহূর্ত থেকে আপনি ইন্টারভিউ রুমের দরজা দিয়ে ঢুকলেন, তখন থেকে শেষ পর্যন্ত, কেউ একজন আপনাকে খুব সূক্ষ্ম নজরে দেখছেন এবং আপনার সম্পর্কে একটি ধারণা তৈরি করছেন। এটি শুধুমাত্র আপনি একেকটি উত্তর কিভাবে দিচ্ছেন সেটার উপর ভিত্তি করে না, আপনি যখন উত্তর দিতে পারছেন না বা দিচ্ছেন না এবং সেটি কিভাবে বলছেন বা কি করছেন তাও দেখা হচ্ছে।
একজন প্রার্থী প্রথম ইম্প্রেশন তৈরি করে, সে কতটা সহজভাবে ইন্টারভিউটিকে নিলো তার উপর ভিত্তি করে। ইন্টারভিউ বোর্ডে আত্মবিশ্বাস রাখুন, আই-কন্টাক্ট রাখুন এবং একটি হাস্যেজ্বল ও হ্যান্ডশেক দিয়ে ইন্টারভিউ শুরু করুন।
লেখক : লাইফ হ্যাকিং ব্লগার ও কনটেন্ট মার্কেটিং স্পেশালিস্ট।