অনাবাদি জমিতে ফলচাষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রাক্তন সংসদ সদস্যের আহবান

, যুক্তিতর্ক

এম.এ. হাসেম | 2023-09-01 20:23:21

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার আওতাধীন বর্তমানে চলমান প্রায় ১৫টি চিনিকল রয়েছে। ঐ সমস্ত চিনিকলে শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার এর উপর। বাংলাদেশের চিনিকল গুলো বছরে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করতে সক্ষম হয় এবং ঐ চিনি উৎপাদন খরচ মিল ভেদে প্রতি কেজি ওভারহেড সহ ৭৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে (সংযুক্ত-ক)। তারপরও উৎপাদিত চিনি বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী মিল গেইটে ৬০ টাকা প্রতি কেজি ধার্য করার পরও চিনি অবিক্রিত রয়েছে। তাছাড়া ভালো রিফাইন হয় না বিধায় চিনি বিক্রয় হয় না। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার আওতাধীন চিনির মিল গুলোতে উৎপাদিত চিনি ভালোভাবে রিফাইন না হওয়াতে অনেকেই দেশীয় কর্পোরেশনের চিনির কলগুলোর চিনি খায় না।

বাংলাদেশের যে কয়টি বেসরকারী সুগার রিফাইনারি রয়েছে সেগুলো দেশের চাহিদা পূরণ করেএক্সপোর্টও করতে পারবে।

সম্প্রতি ২৪ এপ্রিল ২০২০-এ একটি জাতীয় পত্রিকার রিপোর্টে থেকে দেখা যাচ্ছে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের আওতাধীন বিভিন্ন শ্রমিকদের বেতন ভাতাদি প্রায় ২১০ কোটি টাকা অপরিশোধীত রয়েছে। তাছাড়া আখ চাষিরা ১৬১ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০২০ অনুযায়ী শুধুমাত্র ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন লোকসান করেছে ৫১৬ কোটি ৫২ লক্ষ টাকা। সেটা বাড়তে বাড়তে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী ৯৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।  ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বকেয়া ঋণের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। শুরু থেকে সরকারের এই পর্যন্ত সুগার মিলে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছে।   

দেশে বছরে প্রায় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন চিনি আমদানি হলেও কর্পোরেশনের উৎপাদিত মাত্র ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন চিনিও বাজারে বিক্রি করতে পারছে না, কারন চিনির কোয়ালিটি খুবই খারাপ। এই চিনি কেউ কিনতে রাজিনা। বাংলাদেশে বেসরকারী উদ্যোগে ৪টি চিনি রিফাইনারি মিল পুরো বাংলাদেশের আমদানিকৃত চিনির বাহিরে দেশের চাহিদা পূরণ করে এবং বিদেশেও রপ্তানি করে।

বাস্তবিক দিক থেকে বাংলাদেশের চিনির কলগুলো বছরে মাত্র সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫ মাস চালু থাকে। আর বাকি ৭ মাসই শ্রমিক কর্মচারি কোন কর্ম ছাড়াই বেতন ভাতাদি গ্রহন করে থাকে। এতে করে দেশের বিপুল পরিমানে অর্থের ঘাটতি হচ্ছে। বছরের পর বছর ঋণের বোঝা বড় হচ্ছে।

একটি উদাহরণ স্বরূপ ঠাকুরগাঁও জেলায় অবস্থিত ঠাকুরগাঁও সুগার মিলস্ লিঃ ১৯৫৮-৫৯ সালে স্থাপিত হয়। ঐ মিলের ট্রেনিক কমপ্লেক্স, হাইস্কুল, ক্লাব, মেডিক্যাল সেন্টার, ফ্যামিলি কোয়ার্টার, সিঙ্গেল কোয়ার্টার ও মিল এরিয়ার পরিমান ২৮৮৮.৫৯ একর। এই ব্যতিত মিলজোন এলাকায় আখচাষাবাদ এর জন্য ৪৫,৮০০ + ২৮৮৮.৫৯ একর জমি রয়েছে। তারমধ্যে ১৪,৫০০ একর জমিতে প্রতি বছর আখ চাষ করে থাকে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় থেকে যায়। এভাবে বাংলাদেশের ১৫টি চিনি মিলেরই হাজার হাজার একর জমি পরিত্যাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। চিনির মিল বন্ধ করে ফলের চাষ করলে বৎসরে সরকার ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি টাকা লোকসান থেকে অব্যাহতি পাবে। 

বাংলাদেশ প্রতি বছর বিদেশ হতে প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার বিভিন্ন ফল আমদানি করে থাকে। তারমধ্যে অন্যতম আঙ্গুর, বেদানা, আপেল, কমলা, মোছাম্বিক, নাশপাতি, হানিডিউ মিলান, রেড মিলান, সাম্মাম, স্ট্রবেরি, ড্রাগনসহ সকল প্রকার খেজুর আরও বিভিন্ন জাতের ফল বাংলাদেশে আমদানি করতে হয়। এতে করে বিপুল পরিমানে অর্থ বাংলাদেশ হতে বিদেশে চলে যাচ্ছে। যেখানে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত পরিমানে বিভিন্ন জাতের ফল চাষাবাদ এর জায়গা রয়েছে। শুধুমাত্র সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের আন্তরিকতা এবং বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উদ্যোগী করতে পারলেই ঐ সমস্ত বিদেশি ফলের চাষাবাদ বাংলাদেশেই করা সম্ভব। এই জমিতে ফলের চাষ করলে লোকসান থেকে লাভের পরিমান বেশি হবে। কাজেই আমার অনুরোধ, দয়া করে সুগার মিল বন্ধ করে ফলের চাষ করা হউক। 

যথাযথকর্তৃপক্ষ যদি চিনি ও খাদ্য শিল্প সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সুগার মিল বন্ধ করে ও সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের আখ চাষাবাদ এর পুরো জাগয়ায় বিদেশি ফলের চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। তাতে করে দেশের অর্থ দেশেই থাকবে। বিদেশ থেকে ফল আমদানি করতে গিয়ে যে বিপুল পরিমানে বিদেশি অর্থ অপচয় হয় তা রোধ হবে।

এ ব্যাপারে যথাযথকর্তৃপক্ষের সঠিক দিক নির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেশের জন্য বয়ে নিয়ে আসতে পারে কৃষিতে এক বৈপ্লবিক দিগন্ত। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের বড় বড় শিল্প বিনিয়োগকারীদেরও সহযোগিতা আপনি পাবেন বলে আমার বিশ্বাস।

এম.এ. হাসেম, প্রাক্তন সংসদ সদস্য এবং চেয়ারম্যান, পারটেক্স গ্রুপ

এ সম্পর্কিত আরও খবর