ঐক্যের নিষ্ফল কোরাস

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

তুষার আবদুল্লাহ | 2023-08-27 18:27:42

চারদিকে যখন বিচ্ছেদের খবর, সম্পর্ক না টেকার আলাপ, ঠুনকো বিশ্বাসের আফসোস, যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক হবার হাহাকার। তখন রাজনীতিতে ঐক্যের উল্লাস, মাতম। দুই দ্বীপচরে দুই রাজনৈতিক শক্তি। দুই শক্তিই পাটিগণিতে নিমগ্ন। সংখ্যা বাড়াতে চান। ভোটার, সমর্থক বিবেচনায় নয়। দলের নাম বিবেচনায়। যে দলগুলো ঐক্য বা জোট খেলায় মাঠে নেমেছে, তাদের সামনে একেকটি মুখ রয়েছে মাত্র। সেই মুখ বা মুখগুলোর পেছনে ভোটার নেই। নেই সমর্থকও। ব্যক্তি নির্ভর দল। এই একেক ব্যক্তি কি পরম শক্তির আধার? ভোটার, সমর্থক ছাড়াই রাজনৈতিক মাঠে, দেশের সংকটের সমাধান এনে দেবেন। কোন ম্যাজিকের শক্তিতে? যে রাজনৈতিক দলগুলো এখন মাঠে হাতে হাত রেখে ঐক্যের মালা গাঁথছেন, তারা ভোটের আগের সময়গুলোতে কি ভাত ঘুমে বিভোর থাকেন?

এক নির্বাচন থেকে আরেকটি নির্বাচনে যাওয়ার মাঝখানের সময়টিতে রাষ্ট্র, সমাজ কতো সংকট, দুর্যোগের মুখোমুখি হয়। সেই সময়ে এই রাজনৈতিক দল গুলোকে কতোটা সরব হতে দেখি আমরা? ব্যক্তি নির্ভর দল গুলোর ব্যক্তিরা মুখ বুঁজে থাকেন কেন ? কেউ কেউ হয়তো টকশোতে মুখ দেখান, তাও রাজনীতির আবহাওয়া বুঝে, কিংবা বিক্রি হবার রোড শোতে অংশ নেয়ার নিয়ত হিসেবে।

আমরা যদি ভোটের মাঠের খবর নেই, চলে যাই তৃণমূলের কর্মী ও ভোটারদের কাছে, দেখবো সেখানে এই মুখ ও নেতাদের এক দুইজন ছাড়া বাকিরা অপরিচিত। তাদের মুখ দূরের কথা নামটিও কারো জানার পরিধির মধ্যে নেই। যে দুই একজনের কথা বলছি, তারা বড় দলের, সরকারের এক সময়কার ডাক সাইটে নেতা ছিলেন। প্রবল ক্ষমতাশালী মন্ত্রী বা সর্বোচ্চ পদেও ছিলেন। ভুল গুঁটি চালতে গিয়ে বা লোভের কেক বন্টন নিয়ে রাগ-অভিমানে কেউ নিজে সরে এসেছেন, আবার কেউ বিতারিতও হয়েছেন। এই কিচ্ছা-কাহিনী দেশের মানুষের জানা। তাই এই ব্যক্তিরা ফুঁ মন্ত্র দিয়ে দেশকে ইউটোপিয়া বানিয়ে দেবেন, এ বিশ্বাস নেই মানুষের।

সবাই জানেন ক্ষমতার অংশীদার হতে এবং নির্বাচনের আগে ভোটের মাঠে উড়া টাকা বা অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পেতেই তারা জেগেছেন, ভেঙেছে তাদের ভাত ঘুম।

তবে তাদের এই জেগে ওঠা এবং ঘুমিয়ে পড়াকে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা একদিকে, অন্যদিকে সাম্রাজ্যবাদীতা বলে মনে করেন জন-মানুষ। আমাদের বড় দলগুলো সকল মতকে নিয়ে রাজনীতি করার পরিপক্কতা যেমন অর্জন করতে পারেনি, তেমনি তারা ক্ষমতাকে সাম্রাজ্য ভেবে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তিকে জায়গা দিচ্ছে না। এর ফলাফল হিসেবে রাষ্ট্র দুই পরাশক্তির লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রাষ্ট্রের সুকুমার বৃত্তিগুলো নিষ্ক্রিয় ও বিপন্ন হয়ে পড়ে। যা রাষ্ট্রের বিকাশকেও শ্লথ করে দেয়।

মাঝে তৃতীয় কোনো রাজনৈতিক মত সরব থাকলে গনতন্ত্র বা রাষ্ট্র চর্চাও ছন্দে থাকে। জন-মানুষ তাদের দীর্ঘশ্বাস অত্যন্ত তৃতীয় মতের ঘাড়ে ফেলতে পারে। দুই পরাশক্তিও একে অপরের ওপর চরমভাবে চড়াও হয়ে উঠতে পারে না। কাউকে নিশ্চিহ্ন করার মানসিকতাও তখন জাগে না কোনো দলের রাজনৈতিক নকশায়।

তবে দেখা গেছে ঐক্যের নামে, জোটের নামে যারাই তৃতীয় মত নিয়ে আসতে চেয়েছেন, তারা কেউই মধ্যপন্থী নন। প্রায় সকলেই চরম ডান। চরম ডান থেকে কিছু কুড়োতে না পেরে, বা বিতাড়িত হবার পর আবার ঠাঁই পাওয়ার বাসনাতেই হাতে হাত রেখে ঐক্যের কোরাস গাওয়া। চরম বামরাও এসে হাত ধরেন কখনো কখনো, তবে সেটা ডানের মেওয়া খাবার লালসা থেকেই। অতএব ঐক্যের কোরাস গানে সাধারণ মানুষ গলা মেলাবেন, সেই ভরসা না করাই ভালো।

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি ।

এ সম্পর্কিত আরও খবর