স্বার্থপর আন্দোলনের বিজয়!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

প্রভাষ আমিন | 2023-08-28 17:49:43

অভিনন্দন কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী, সমর্থক সবাইকে। যারা এ আন্দোলন করতে গিয়ে নির্যাতিত হয়েছেন, হাতুরি সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন, কারাভোগ করেছেন, তাদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানাচ্ছি।

স্রেফ আন্দোলন করার অপরাধে যাদের বিরুদ্ধে এখনও মামলা আছে, সেসব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। তবে যারা ভিসির বাসায় হামলা চালিয়েছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানাচ্ছি। অপরাধ করে কেউ যেন পার পেতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে।

আমি বরাবরই কোটার পক্ষে। স্বাভাবিকভাবেই আমার নৈতিক অবস্থান ছিল আন্দোলনের বিপক্ষে। তবে আমি সবসময় বিশ্বাস করি, যৌক্তিক হোক আর অযৌক্তিক, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার অধিকার সবারই আছে। আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হলেও, যারা আন্দোলন করেছে, তাদের কাছে নিশ্চয়ই তাদের দাবি যৌক্তিকই মনে হয়েছে। তাই আন্দোলনের বিপক্ষে থাকলেও তাদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার নিন্দা জানিয়েছি।

২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালেও কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন হয়েছিল। সেবার দাবি আদায় করতে পারেনি, তবে হালও ছাড়েনি তারা। ঠিক পাঁচ বছর পর আবার আরেকটি নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠে নামে তারা। এবার তাদের আন্দোলনকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার কৃতিত্ব পুলিশের। ৮ এপ্রিল পুলিশ হামলা চালিয়ে আন্দোলনে অপ্রতিরোধ্য গতি এনে দেয়। সেই গতিতে আন্দোলন এখন বিজয়ের বন্দরে প্রায়। ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেওয়া ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। তারা ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ থেকে ফিরলে সচিব কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠবে। অনুমোদন পেলেই জারি হবে প্রজ্ঞাপন।

বাংলাদেশের ছাত্র সমাজের আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৬২এর শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯এর গণ অভ্যুত্থান, ৭১এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০এর গণ আন্দোলন, ২০১৩এর গণ জাগরণ, ২০১৮এর নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা ছিল গৌরব করার মত। এসব আন্দোলনে বৃহত্তর স্বার্থ ছিল। পুলিশী হামলার পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকেও মহত্বের আবরণ দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের মত এমন ব্যক্তি স্বার্থের আন্দোলন খুব বেশি হয়নি। এটা হলো ল্যাং মারার আন্দোলন। অমুককে চাকরি দেওয়া যাবে না, আমাকে দিতে হবে; এটাই হলো এই আন্দোলনের মূল সুর। আন্দোলনকারীরা মুখে বলছেন, তারা কোটা বাতিল নয়, সংস্কার চান। কিন্তু ৫৫ ভাগকে কমিয়ে ১০ ভাগে আনার দাবি আসলে সংস্কারের দাবি নয়, পেছনে অন্য কথা আছে। তারা নারীদের কোটা চায়, আদিবাসীদের কোটা চায়, প্রতিবন্ধীদের কোটা চায়; তাদের আপত্তি খালি মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরসূরিদের কোটা নিয়ে। একটি মহল কৌশলে তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ বানাতে চাইছে। এই কৌশলে তারা যথেষ্ট সফলও। তারা বোঝাতে পেরেছে, তোমাদের চাকরির পথে বড় বাধা মুক্তিযোদ্ধারা। অনেকেই কোটার প্রতিপক্ষ হিসেবে মেধাকে দাঁড় করাতে চান। যেন তৃতীয় শ্রেণি পাওয়া মুক্তিযোদ্ধার নাতি চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা।

প্রিলিমিনারি, লিখিততে উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভাইভাতে কেবল কোটার প্রয়োগ হয়। তাই কোটাধারীদের অমেধাবী বলাটা অন্যায় ও অবমাননাকর। প্রশ্নটা হলো স্বাধীনতাবিরোধী চেতনার কোনো ছেলে যদি ২১ পায় আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কেউ যদি ১৯ পায়; আপনি কাকে চাকরি দেবেন? আমি কিন্তু ১৯ কেই দেবো। আমার কাছে শুধু মেধা নয়, আদর্শটাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমি চাই না গোলাম আযমের ছেলে ব্রিগেডিয়ার হোক। তবে ২১এর বিপরীতে ১২ হলে আপত্তি আছে। কিন্তু কোটা সুবিধা পেতে হলে তো মুক্তিযোদ্ধার নাতিকেও ১৯ পেতে হবে। ১৯ পেলে আমার আপত্তি নেই। সংস্কার আমিও চেয়েছিলাম, যাতে কোটায় লোক পাওয়া না গেলে শূন্য না রেখে সাধারণ তালিকা থেকে তা পূরণ করা হয়। এ সংস্কার হয়ে গেছে।

এ বছর আন্দোলনের সময় প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও গত কয়েক বছর ধরেই বিশেষ অনুমতি নিয়ে শূন্য পদ সাধারণ তালিকা থেকে পূরণ করা হয়। ফলে ৩৩তম বিসিএসে ৭৭.৪০, ৩৫তম বিসিএসে ৬৭.৪৯ এবং ৩৬তম বিসিএসে ৭০.৩৮ শতাংশ সাধারণ তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। তার মানে কাগজে-কলমে ৫৫ ভাগ থাকলেও কার্যত কোটা নেমে এসেছে ৩০ ভাগে। তাতেও সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনকারীরা। তারা আসলে মুত্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল চায়।

পড়াশোনা শেষ করে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পেলে যে কেউ ক্ষুব্ধ হতে পারেন, আন্দোলন করতে পারেন। নগদ বঞ্চনায়, নগদ আন্দোলনে আমার আপত্তি নেই। বঞ্চিত তরুণ শিক্ষার্থীরা হয়তো কোটার পেছনের দর্শনটা ঠিক বুঝতে পারেননি। কিন্তু যারা বুঝে শুনে আন্দোলনে বাতাস দিয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্য ভালো নয়। ব্যাপারটা তো এমন নয়, আওয়ামী লীগ এই কোটা চালু করেছে। ৭২ সাল থেকে চলে আসা কোটা এতদিন বাতিল করেননি কেন? এতদিন আন্দোলন করেননি কেন? আমার সবচেয়ে অবাক লাগে, এ আন্দোলনে বামদের সমর্থন দেখে।

অন্যরা না বুঝুক, বামদের তো ন্যায্য অধিকারের বিষয়টি বোঝার কথা। সমাজের অগ্রসর অংশ যদি অনগ্রসরদের ব্যথা না বোঝে, তবে বুঝতে হবে সে সমাজ অন্যায়ে বাস করছে। আদিবাসী বা প্রতিবন্ধীরা তো আন্দোলন করে দাবি আদায় করতে পারবে না। তার মানে এই সমাজে যারা সংখ্যায় বেশি, যাদের গায়ে জোর বেশি; তাদের দাবিই পূরণ হবে। এটা অন্যায়, ঘোরতর অন্যায়।

সাধারণভাবে ভাবলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে, মুক্তবাজারের এই যুগে কোটা থাকার কোনো মানেই হয় না। সবার জন্য সমান সুযোগ। যে বেশি মেধাবী, সেই চাকরি পাবে। হিসাব বরাবর। কার দাদা মুক্তিযোদ্ধা, কে উপজাতি, কে নারী, কে প্রতিবন্ধী- এই বিবেচনা করার দরকার কি। কোটা দিয়ে বৈষম্য সৃষ্টি করা হচ্ছে। সবার জন্য সমান সুযোগ, কোটাহীন, বৈষম্যহীন এমন একটি দেশ, এমন একটি সমাজ বিনির্মাণই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু বাস্তবতা হলো- এমন একটি দেশ এখনও আমাদের কল্পনারও অনেক দূরে। এখনও আমাদের দেশে পদে পদে বৈষম্য। আর বৈষম্য সৃষ্টি করতে নয়, বৈষম্য দূর করতেই প্রচলন হয়েছে কোটা ব্যবস্থার।

কোটা ব্যবস্থা নতুন কিছু নয়, বাংলাদেশের প্রায় সমান বয়সী। ১৯৭২ সালে একটি সাম্যের সমাজ গড়তে, অনগ্রসর-পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠিকে মূলধারায় আনতেই কোটা ব্যবস্থার প্রচলন। তাহলে আজ এতদিন পর হঠাৎ কেন কোটা বাতিলের আন্দোলন? আমার ছেলে দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ সেন্ট যোসেফ স্কুলে পড়ে। গাড়িতে চড়ে দুই মিনিটে স্কুলে পৌঁছে যায়। স্কুল শেষে কোচিং, বাসায় শিক্ষক, নোটবই, ভালো খাওয়া, উন্নত চিকিৎসা, সুস্থ বিনোদন, হাওয়া বদল, কম্পিউটার, ইন্টারনেট- গোটা বিশ্ব আসলে তার হাতের মুঠোয়। কিন্তু রাঙামাটির বরকলে আমার কোনো চাকমা বন্ধুর ছেলেকে তো স্কুলেই যেতে হয় ১০ মাইল পাহাড়ি পথ বেয়ে। এত কষ্ট করে যে স্কুলে যায়, সে স্কুলে নিশ্চয়ই ভালো শিক্ষক নেই। হয়তো স্কুলে যায় পান্তা খেয়ে, ফিরে কোনোরকমে পেট পুড়ে খায়। পুষ্টির বালাই নেই, বিনোদনের বালাই নেই, প্রযুক্তির হয়তো চেহারাই দেখেনি। তাকে লড়তে হয় প্রকৃতির বিরুদ্ধে, দারিদ্রের বিরুদ্ধে। তার ৬০ নাম্বার তো আমার বিবেচনায় আমার ছেলের ৯০ নাম্বারের চেয়ে বেশি মূল্যবান। উপজাতি কোটা না থাকলে তো সারাজীবন আমাদের ছেলেরাই চাকরি পাবে, আমার চাকমা বন্ধুর ছেলেকে পরে থাকতে হবে সেই পাহাড়েই।

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, জেলা কোটা তুলে দিলে বাংলাদেশের ৪টি জেলার মানুষ ৯০ ভাগ সুযোগ পেয়ে যাবে। বাকি ৬০ জেলার শিক্ষার্থীদের তখন আন্দোলনে নামতে হবে। ৪ জেলাই বা বলি কেন, আসলে তখন ঢাকার সেরা ২০ স্কুলের শিক্ষার্থীরাই দখল করে নেবে অধিকাংশ আসন। ঈশ্বরপ্রদত্ত মেধা থাকুক আর না থাকুক, শহুরে মধ্যবিত্তরা তাদের সন্তানদের স্কুল-কোচিং-নোটবই মুখস্ত করিয়ে একটি রোবোটিক মেধাবী প্রজন্ম তৈরি করছে। কোটা না থাকলে এই রোবোটিক প্রজন্মের কাছে বারবার হেরে যাবে আমার দিনাজপুরের, খাগড়াছড়ির প্রকৃতির সন্তানেরা।

একদম নিজের চেষ্টায়, নিজের মেধায় চূড়ায় উঠে যাওয়ার গল্প তো আসলে গল্পই। তাই আদিবাসী বা প্রতিবন্ধীদের পাশে যদি রাষ্ট্র না দাঁড়ায়, তারা তো অন্যদের সঙ্গে লড়াই করে টিকতে পারবে না, কনুইয়ের গুতায় ছিটকে পড়বে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধী দলীয় নেত্রী নারী, স্পিকার নারী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারী। তাই বলে কি আর নারী কোটার দরকার নেই? তেমন মনে হতেই পারে। বাংলাদেশে নারীদের অবস্থা যথেষ্টই ভালো হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। শহরের স্কুলগুলোতে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করছে মেয়েরা। লাখ লাখ নারী গার্মেন্টসে কাজ করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। কিন্তু এসবই আসলে এক ধরনের বিভ্রম। এখনও গ্রামে মেয়েদের স্কুলে যেতে হয় অনেক সংগ্রাম করে। অনেক বাবা-মা মেয়েদের ক্লাশ ফোর-ফাইভ পর্যন্ত পড়িয়েই বিয়ে দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে যান। তারপর আছে ইভটিজিং, আছে দারিদ্র, পেরুতে হয় কুসংস্কারের পাহাড়। তাই উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা পাওয়া হাসিনা-খালেদা-শিরিন শারমিনদের দেখে আমাদের গ্রামবাংলায় ছড়িয়ে থাকা সখিনা-আমেনা-জরিনাদের বঞ্চিত করা ঠিক হবে না। আমরা চাই সখিনা-আমেনা-জরিনারাও ম্যাজিস্ট্রেট হোক, পুলিশ অফিসার হোক।

আসলে এত কিছু নয়, দেখেশুনে মনে হচ্ছে কোটাবিরোধী আন্দোলনের মূল লক্ষ্য মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য রাখা ৩০ শতাংশ কোটা। অনেকেই বলছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা উচিত নয়। এখন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় লোক পাওয়া যায় না। মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট জোগাড় করে চাকরি পেয়ে যায়... ইত্যাদি ইত্যাদি। এসবই ঠুনকো অজুহাত। তাহলে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে আন্দোলন হোক, কোটার বিরুদ্ধে কেন? মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনের মায়া না করে দেশের জন্য লড়েছেন, শহীদ হয়েছেন। যখন যুদ্ধ করেছেন, তখন নিশ্চয়ই তারা ভাবেননি, তাদের সন্তানরা কোটায় চাকরি পাবে। তারা ভাবেননি বলে আমরাও ভাববো না? আমাদের ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে আজকে আমরা স্বাধীন দেশে বসে কোটার বিপক্ষে আন্দোলন করতে পারছি।

দেশ স্বাধীন না হলে এই শিক্ষার্থীদের পূর্ব পাকিস্তানের কোটার জন্য আন্দোলন করতে হতো। তাই এই দেশটার ওপর মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি একটু বেশিই থাকবে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কিন্তু তাদের অনেকেই ছিলেন কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমোর, গ্রামের সাধারণ মানুষ। তাদের অনেকই ছিলেন প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত। তাই স্বাধীনতার পর চাইলেও রাষ্ট্র তাদের সবাইকে চাকরি দিতে পারেনি।

দেশ স্বাধীন করার মত সাহস থাকলেও, সেই স্বাধীন দেশে কোনো চাকরি করার মত যোগ্যতা তাদের ছিল না। পরে হয়তো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার গুরুত্ব বুঝে নিজের সন্তানকে কষ্টে-সৃষ্টে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখন সেই সন্তানের পাশে রাষ্ট্র দাঁড়াবে না? অবশ্যই দাঁড়াবে। এটা তো বৈষম্য নয়, এটা ঋণ শোধ।

মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট ভুয়া না আসল সেটা যাচাই করার দায়িত্ব পিএসসির বা রাষ্ট্রের। কিন্তু এই অজুহাতে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা যাবে না, তাদের বিপক্ষে রাজপথে স্লোগান দেওয়া যাবে না, তাদের কোটা বাতিলের দাবি করা যাবে না। অবশ্যই যাবে না। অবশ্যই আমার ছেলের চেয়ে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চুর ছেলে এই দেশে বাড়তি সুবিধা পাবে। যারা দেশের জন্য লড়েছেন, দেশের কাছে তাদের চাওয়ার কিছু না থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্রের উচিত সবসময় তাদের জন্য বাড়তি আসন রাখা।

আমি মনে করি আস্তে আস্তে যদি এমন দিন আসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি দেওয়ার মত আর কাউকেই পাওয়া যাচ্ছে না, তখনও এই কোটা বহাল রাখতে হবে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানানোর প্রতীক হিসেবে। কোটা বিরোধী আন্দোলনের নামে যখন রাজপথে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে, কোনো তরুণ যখন শরীরে 'আমি রাজাকার' লিখে রাজপথে নামে; তখন আমি বুঝি এই আন্দোলনের কলকাঠি অন্য কেউ নাড়ছেন।

কোটা সংস্কারের এই স্বার্থপর আন্দোলনের আপাত বিজয় আমাকে বেদনার্ত করেছে, শঙ্কিত করেছে। তাহলে কি এই সমাজে সংখ্যালঘুরা থাকবে না, আদিবাসীরা থাকবে না? গায়ের জোরে আমরা সব দখল করে নেবো, ল্যাং মেরে তাদের ফেলে সব চাকরি নিয়ে নেবো? তাদের জন্য রাখবো কেবল পিয়ন দারোয়ানের চাকরি?

সংবিধানে অনগ্রসর জনগোষ্ঠির জন্য অগ্রাধিকারের কথা থাকলেও আমরা তাদের বঞ্চিত করবো? প্রধানমন্ত্রী কিছুটা অভিমান করে সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও তার বিভিন্ন বক্তব্যে বুঝেছি, তিনি কোটার মূল বৈষম্যমুক্তির চেতনা ধারণ করেন। তাই অনুরোধ, তিনি যেন কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের সুপারিশে সায় না দেন।

আমি চাই সংখ্যাগরিষ্ঠ অগ্রসর সমাজ অনগ্রসরদের বেদনাটা বুঝুক, তাদের পাশে দাঁড়াক। সমাধানটা কিন্তু কোটা বাতিলে নয়। কোটা থাকলে যত জন বেকার থাকবে, কোটা না থাকলেও ততজনই থাকবে। তাই কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। আর কাজের সুযোগ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সবার মাঝে বন্টন করতে হবে।

লেখক: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

এ সম্পর্কিত আরও খবর