আকাশপথের বিস্তৃতি, দেশকে করে তুলবে সমৃদ্ধ

, যুক্তিতর্ক

কামরুল ইসলাম | 2023-08-31 16:19:39

একটি দেশের অবকাঠামো বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা যত বেশি শক্তিশালী হবে, দেশের অর্থনীতির চাকা সোপান বেয়ে এগিয়ে যাবে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবে, উন্নয়নের অগ্রযাত্রার মিছিল হবে, কথায় আর কাগজে। জল, স্থল আর আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সমহারে না হলে পশ্চাদমুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কথা বলছি যোগাযোগ ব্যবস্থায় আকাশ পথ কতটুকু তাৎপর্যপূর্ণ। উন্নয়নের মিছিলে এগিয়ে যাবার মূল মন্ত্রে সময়কে প্রাধান্য দেওয়া খুবই জরুরি। একটি দেশের আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত বেশি শক্তিশালী হবে, সেই দেশের ব্যবসা বাণিজ্য তত বেশি অগ্রসরমান হবে।

বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী, বরিশাল রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ঢাকাসহ দেশের আটটি বিমানবন্দর মাত্র ২৮টি জেলাকে সংযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার একটি দেশে মাত্র তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। কারণ হিসেবে বলা যায় যেখানে প্রায় ১ কোটির অধিক জনসংখ্যা প্রবাসী হিসেবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছে জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে।

স্বাধীনতার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সময়ে ঢাকা থেকে ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা বিমানবন্দর সচল ছিলো। চারটি বিমানবন্দর চালু না থাকার কারণে আটটি জেলার জনগণ আকাশপথের সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে। শমসেরনগর বিমানবন্দরটি বর্তমানে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত হলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জনগণ আকাশপথের সেবা থেকে বঞ্চিত হতো না। এছাড়া প্রস্তাবিত বাগেরহাটের খানজাহান আলী বিমানবন্দর, উত্তরবঙ্গের বগুড়া বিমানবন্দর ও অব্যবহৃত ফেনী বিমানবন্দরকে উড্ডয়ন উপযোগী করা যায়। তবে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে দেশের আরো এগারোটি জেলাকে আকাশপথের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব। ঢাকার নিকটবর্তী ময়মনসিংহ বিভাগে একটি বিমানবন্দর স্থাপনের মাধ্যমে আরো চারটি জেলাকে আকাশপথের সঙ্গে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে।

সরকারের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ছাড়াও কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে রূপান্তরের কাজ চলছে। কক্সবাজার মূলত পর্যটন নগরী হিসেবে বিদেশিদের আকর্ষণের জন্য কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে অবকাঠামো পরিবর্তনের কাজ করছে। আবার সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের সঙ্গে সহজে সংযোগ স্থাপনের জন্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তুলছে। কক্সবাজার ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক রূপে চালু হলে দেশের অর্থনীতির চাকা কিছুটা দ্রুতগতিসম্পন্ন হবে।

বর্তমানে চালু আটটি, অব্যবহৃত ছয়টি মূলত ঈশ্বরদী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, বগুড়া, শমসেরনগর, প্রস্তাবিত বাগেরহাট, পরিত্যক্ত ফেনী বিমানবন্দর কিংবা ময়মনসিংহ বিভাগে একটি বিমানবন্দরের কার্যক্রম শুরু করা গেলে দেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ অঞ্চলের জনগণ আকাশপথে চলাচলের সুযোগ পেতো। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শহর গড়ে ওঠার সুযোগ পেতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্প গড়ে উঠতো, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতো। অনেক বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হতো। একইসঙ্গে দেশের বেকার সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালন করতো।

দক্ষিণ এশিয়ায় কিংবা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ভৌগলিক কারণে কিংবা আকাশপথের যোগাযোগব্যবস্থার অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে জনসংখ্যার আধিক্য না থাকার পরেও অনেক বেশি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রয়েছে, আছে দেশের অভ্যন্তরে যোগাযোগের জন্য পর্যাপ্ত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা করা যেতে পারে, ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানে বড় আকারের ২১টি বিমানবন্দরসহ মোট ৬২টি বিমানবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ৮টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে। আড়াইকোটি জনসংখ্যার দেশ শ্রীলংকায় ৫টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ২২টি বিমানবন্দর রয়েছে, ছয় লাখ জনগণের দেশ মালদ্বীপে ৫টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ১৪টি বিমানবন্দর রয়েছে। পর্যটকদের কাছে মালদ্বীপকে আকর্ষণীয় করতে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধনে আকাশপথকে গুরুত্ব দিয়েছে। নেপালে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থাকলেও দেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা সুদৃঢ় করার জন্য বর্তমানে ৩৩টি অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর চালু আছে। অব্যবহৃত বিমানবন্দরসহ মোট ৫৪টি বিমানবন্দর আছে নেপালে। মাত্র ৮ লাখ জনসংখ্যার দেশ ভুটানেও একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ৪টি বিমানবন্দর রয়েছে।

চার কোটি জনসংখ্যার যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানেও ৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ ২৬টি বিমানবন্দর রয়েছে। সামরিক বাহিনী শাসিত পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে ৩টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ২৫টি বিমানবন্দর রয়েছে, যার মধ্যে ১৫টি বৃহদাকারের। আরেক পর্যটনকেন্দ্রিক দেশ থাইল্যান্ডে ৭টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ৩৮টি বিমানবন্দর রয়েছে, যা পযর্টনকে উৎসাহিত করে, দেশের জিডিপিতে অংশীদারিত্ব বাড়াতে সহায়তা করে। জনসংখ্যা ও আয়তনের বিচারে ভারত বৃহৎ রাষ্ট্র। বাংলাদেশের অনুপাতে ভারতে তার চেয়েও বেশিসংখ্যক বিমানবন্দর রয়েছে। বর্তমানে ভারতে ৩৪টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ মোট ১২৩টি বিমানবন্দর রয়েছে।

একটি দেশের আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত বেশি উন্নত হবে সময় বিবেচনায় জনগণের কর্মঘণ্টা বৃদ্ধি পাবে যাতে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি লাভে সহায়তা করবে। আকাশপথের উন্নয়নের সঙ্গে পযর্টনের উন্নতি ঘটবে, শিল্প বিকাশ ঘটবে, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শহর সৃষ্টি হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। দেশ স্বাবলম্বী হবে, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে।

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, যোগাযোগ- ০১৭৭৭৭০৭৫৩৬, Email: Islam.kamrul.72@gmail.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর