করোনাকালীন সময়ে ইউএস-বাংলার পথচলা!

, যুক্তিতর্ক

মো. কামরুল ইসলাম | 2023-09-01 03:00:16

করোনাকালীন সময়ে ই্উএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কতটা মানবিক আর সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান তা নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পেয়েছে। গত বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাস থেকে যখন করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হতে থাকে তখন থেকেই সারা বিশ্বের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির ন্যায় বাংলাদেশের এভিয়েশনেও প্রভাব পড়তে থাকে। চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি এবং পরবর্তী সময়ে সারাবিশ্বে মহামারিতে রূপ ধারণ করে যা এখনও চলমান। বাংলাদেশের একমাত্র ক্যারিয়ার হিসেবে ইউএস-বাংলা চীনের গুয়াংজুতে সপ্তাহের প্রতিদিন বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত ছিলো। করোনার বিস্তৃতি লাভের পর একর পর এক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলো বন্ধ হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিলো তখনও চীনের গুয়াংজুতে স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে ইউএস-বাংলা।

বিশ্বব্যাপী যখন করোনার আক্রমনে বিপর্যস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, তখন ইউএস-বাংলা বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে। যখন কোথাও আশানুরূপ চিকিৎসাসামগ্রী  ছিলো না বললেই চলে, আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিদেশ থেকেও আমদানি করাও যাচ্ছিল না, ঠিক তখনই চীন থেকে স্বাস্থ্য সেবাকে চলমান রাখার জন্য অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে পিপিই, হ্যান্ড সানিটাইজার, হ্যান্ড গ্ল্যাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফেস শিল্ড, করোনা টেস্ট করার জন্য বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস এর জন্য উপকরনের কাঁচামাল বিনা খরচে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এর পক্ষ থেকে চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্য সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাজার হাজার চিকিৎসা সামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়েছে।

সারাদেশ যখন কার্যত লকডাউন অবস্থায় ছিলো, দেশের আকাশপথও অবরুদ্ধ তখনও দেশের খেটেখাওয়া মানুষের জন্য ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স গত বছর রমজান ও ঈদকে সামনে রেখে প্রায় দশ হাজার মানুষকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী উপহার হিসেবে দিয়ে সহায়তা করেছে। সারাদেশে করোনা শনাক্ত করন যখন দুঃসাধ্য ছিলো তখন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ সকল শ্রেণীর কর্মকর্তা- কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে করোনা শনাক্তকরণের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। প্রয়োজনে সকল শ্রেনীর কর্মচারীগণের পরিবারবর্গেরও কোভিড-১৯ এর শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াসহ চিকিৎসা সহায়তাও দিয়েছে। সারাবিশ্ব যখন অবরুদ্ধ তখন চলমান ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের গুয়াংজু রুটের যাত্রীদের বিনামূল্যে করোনা শনাক্ত করার ব্যবস্থা করেছে।

করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারনে বাংলাদেশি নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দেশীয় পর্যটকগন, বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীগন কিংবা চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশীরা বিদেশে গিয়ে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। তখনও ব্যবসাকে প্রাধান্য না দিয়ে সেবাকে গুরুত্ব দিয়ে মানবিকতা দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তথা সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী দূতাবাসের সহায়তায় আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করেছে ইউএস-বাংলা। এয়ারলাইন্স এর কর্মীরা ফ্রন্টলাইনারের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে দুবাই, আবুধাবি, চেন্নাই, দিল্লী, কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হ্যানয় এমনকি ফ্র্যান্সের প্যারিসেও বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

যাত্রী পরিবহন যখন বন্ধ, কার্গো পরিবহনও তখন অনেকটা বেসামাল অবস্থা তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সরকারের অনুমতি ক্রমে প্যাসেঞ্জার এয়ারক্রাফটগুলোকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো এয়ারক্রাফটে রূপান্তর করে বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট হিসেবে পরিচালনা করে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতেও ভূমিকা পালন করেছে। কার্গো ফ্লাইট হিসেবে কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন দেশে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে- তাদের মরদেহ বহন করার জন্যও স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা। চার ঘণ্টার নোটিশে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাহারা খাতুনের মরদেহও থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

সারা বিশ্বের বিখ্যাত সব এয়ারলাইন্স যেমন এমিরাটস, কাতার এয়ারওয়েজ, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স, মালয়শিয়া এয়ারলাইন্স, থাই এয়ারওয়েজ করোনাকালীন সময়ে স্বল্প সময়ের নোটিশে হাজার হাজার কর্মচারী, কর্মকর্তা, পাইলট, কেবিন ক্রু বাধ্যতামূলক ছুটিতে কিংবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশী এয়ারলাইন্স রিজেন্ট এয়ারওয়েজ গত বছর করোনার শুরুতে সকল ধরনের ফ্লাইট অপারেশন বন্ধ ঘোষণা দিয়ে কর্মচারীদের বিনাবেতনে ছুটি দিয়েছে। সেখানে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্মচারী ছাটাই প্রক্রিয়াতে না যেয়ে সকল এমপ্লয়িদের রেখে দেয়ার মানসিকতা দেখিয়েছিলো, করোনাকালীন সময়ে কর্পোরেট জগতে একটি মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

করোনার প্রথম ধাপে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ যখন প্রায় দু’মাস পর স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে নানা বিধিনিষেধ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে, তখনও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতি জেনেও নির্ধারিত সময় সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। শুধু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নয় বাংলাদেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সকল ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে। যাত্রীদেরকে এভিয়েশন মূখী করার জন্য অভ্যন্তরীণ সকল রুটে মাত্র ২০০০ টাকা ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। এখানে ব্যবসা নয় সেবাকেই প্রাধান্য দিয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।

একটি দেশের আকাশপথ সচল থাকলে ব্যবসা বাণিজ্যের গতি ত্বরানিত হবে- এটা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স শুধু বিশ্বাস করেনা, আকাশপথ সচল রাখার জন্য প্রত্যক্ষ ভূমিকাও রাখছে। এয়ারলাইন্স শুধু একটি ব্যবসা নয় , এটা একটি সেবার দৃষ্টান্তও তা পরতে পরতে মেনে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। দেশের মানুষের আস্থা আর ভালোবাসায় দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একটি শক্ত ভিত তৈরি করার প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেছে। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে, বাংলাদেশি জনগণ ও  তথা প্রবাসী বাংলাদেশিদের আস্থার প্রতিক হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।             

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

এ সম্পর্কিত আরও খবর