একটি নদী: বহু নাম, বহু সংস্কৃতি

, যুক্তিতর্ক

ড. রূপকুমার বর্মণ | 2023-08-31 21:54:53

‘আমরা কি নদী ছাড়া ভারতীয় তথা দক্ষিণ এশীয় উপমহাদেশের ইতিহাস এবং সভ্যতার কথা চিন্তা করতে পারি? এর উত্তর সবার কাছেই জানা যে ভারত ও তার প্রতিবেশী দেশগুলির ইতিহাস ও সংস্কৃতির সাথে তাঁদের নদনদীর সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। স্থায়ী সভ্যতার শুরু থেকেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মানুষের কাছে তাঁদের নদনদীগুলি 'পবিত্র' এবং 'সভ্যতার জননী' হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। এই নদীগুলি তাঁদের কাছে জীবন ও জীবিকার উৎস এবং বাণিজ্য, পরিবহন, উৎপাদন ব্যবস্থা ও জাতীয় অর্থনীতির ধারক। একই সঙ্গে এরা ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা এবং জাতীয় পরিচিতির সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত।

অন্যদিকে বাঁধ, ব্যারেজ, বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং সেচ খাল নির্মাণ এখানকার নদ-নদীগুলিকে আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিবাদের কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত করেছে। স্বাভাবিকভাবেই, দক্ষিণ এশিয়ার আন্তর্জাতিক নদীগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বাস্তুচ্যুতি ও পরিবেশরক্ষা বিষয়ক অনেকগুলি প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার আন্তর্জাতিক নদীগুলির মধ্যে ভুটানের ওয়াং চু (বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গে রায়ডাক নামে পরিচিত) এমনই একটি নদী যার মধ্যে উপরিউক্ত সবগুলি বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায়।

ভূটান হিমালয় থেকে নির্গত ‘ওয়াং চু’ থিম্পুর কাছে পারো চুর সঙ্গে মিলিত হয়ে ‘থিম্পু চু’ নামে পরিচিত হয়েছে। ‘তা চু’ ও ‘হা চু’ নামের দুটি উপনদী পারো জং এর কাছে মিলিত হয়ে ওয়াং চু’কে একটি দ্রুতগামী নদীতে পরিণত করেছে । রায়ডাক নাম নিয়ে ‘ওয়াং চু’ ভূটান-ভারত সীমান্তে অবস্থিত ভূটানঘাট দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। কিছুদুর এগিয়ে রায়ডাকের ধারা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে  সৃষ্টি করেছে ১নং রায়ডাক ও ২নং রায়ডাক নামের দুটি নদী। ২নং রায়ডাক আসাম-পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সীমানায় অবস্থিত বক্সিরহাটের কাছে সংকোশ নদীর সাথে মিলিত হয়ে গদাধর নাম নিয়ে আসামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিশেছে।

অন্যদিকে ১নং রায়ডাক নদী পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদূয়ার জেলার রায়ডাক ফরেস্ট ও চিপরা বীটের জঙ্গল হয়ে কোচবিহারের তুফানগঞ্জ শহর অতিক্রম করে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত বালাভূত গ্রামে তোর্ষা ও কালজানির মিশ্রিত ধারার সঙ্গে মিশে তৈরি করেছে দুধকুমার নদী। দুধকুমার বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি ও নাগেশ্বরী উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদীতে মিশেছে । অর্থাৎ ভূটানের ওয়াং চু, ভারতের রায়ডাক ও বাংলাদেশের দুধকুমার এক ত্রিভুজাকৃতির অববাহিকা অঞ্চল তৈরি করেছে ।

রায়ডাক অববাহিকার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ওয়াং চু-রায়ডাক-দুধকুমারের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। বস্তুত ওয়াং চু কে বাদ দিয়ে ভূটানের কথা কল্পনাই করা যায় না। ভুটানের রাজধানী থিম্পু থেকে চুখা জেলার চুখা ও টালা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ওয়াং চু অববাহিকায় অবস্থিত। জল, বালি ও পাথরের অফুরন্ত ভাণ্ডার ওয়াং চু কে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ভুটানের বেশ কয়েকটি শিল্প, কারখানা ও বাণিজ্য কেন্দ্র।

ভুটানের মোট জনসংখ্যা ১০ লক্ষের থেকে কম (২০১৭ র আদমশুমারি অনুযায়ী ৭,২৭,১৪৫ জন) হলেও জনবৈচিত্রের বিচারে ওয়াং চু উপত্যকা অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী। ওয়াং চু তথা ভুটানে প্রধান চারটি নৃগোষ্ঠী রয়েছে । এগুলি হল নালোং (Ngalongs বা তিব্বতীয়-মোঙ্গলীয়), সারচোপ (Sharchops  বা ইন্দোমোঙ্গলীয়), খেং (আদিবাসী) ও লোটসাম্পা (Lhotshampa বা নেপালীভাষী ভুটানি) )। ভূটানের মোট জনসংখ্যার ৫০ % মানুষই নালোং ও সারচোপ সম্প্রদায়ের। আবার নালোংদের মধ্যে জোংখ্যাভাষী ড্রুকপা সম্প্রদায়ের মানুষেরাই সংখ্যাগুরু যারা মুলত ভূটানি-বৌদ্ধধর্মের (ড্রুকপা-কাগু) অনুসারী। ওয়াং চু অববাহিকায় খেং, বিরমি, দায়া ও মোনপা নামের কয়েকটি প্রাচীন জনগোষ্ঠীর বসতিও রয়েছে। পশ্চিম ভূটানের ওয়াং চু এবং এর উপনদীগুলি ভুটানের সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে।

ভুটানী বৌদ্ধধর্মের ‘কাগু’ সম্প্রদায় ওয়াং চু অববাহিকায় বেশ কয়েকটি মঠ [গুম্ফা] এবং জঙ [মঠ ও দুর্গ বেষ্টিত শাসনতান্ত্রিক কেন্দ্র] তৈরি করেছে। এদের মধ্যে পঞ্চদশ শতকে তৈরি পারো জেলার শাসনতান্ত্রিক কেন্দ্র রিঙপুং জঙ ভুটানের সাংস্কৃতিক জীবনের অঙ্গে পরিণত হয়েছে। ত্রয়োদশ শতকে স্থাপিত ওয়াং ছু অববাহিকার তাশিচো জঙ দীর্ঘকাল ধরেই ভুটানের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই জঙের মধ্যে বেশ কয়েকটি মন্দির ও ধর্মীয় কেন্দ্র রয়েছে। ওয়াং চু ও তার উপনদীগুলির তীরে গড়ে ওঠা বৌদ্ধ গুম্ফা, স্তুপ ও জঙগুলি ভূটানের জাতীয় সংস্কৃতির পরিচিতির আধার রূপেও পরিগণিত হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে ২০০৮ সালে গৃহিত সংবিধান ওয়াং চু অঞ্চলের বৌদ্ধধর্মকেই ভূটানের জাতীয় জীবনের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এই সংবিধান ওয়াং চু অববাহিরকার প্রধান ভাষা বা জোংখ্যা ভাষাকে ভূটানের রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা দিয়েছে।

ভূটানের ওয়াং চুর মত ভূটান সন্নিহিত পশ্চিমবঙ্গের রায়ডাক অববাহিকার সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলও বিভিন্ন ধরনের জাতি ও জনজাতির সমন্বয়ে গঠিত। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সাহিত্যক উপাদানগুলিতে রায়ডাক অববাহিকার কোচ, রাজবংশী, মেচ ও রাভা জনজাতির বসতির কথা বারবার উল্লিখিত হয়েছে। জনজাতির সঙ্গে নিম্ন রায়ডাক বা দুধকুমার অববাহিকার বিভিন্ন বর্ণ, জাতি  ও ধর্মীয় গোষ্ঠির কথাও ফুটে উঠেছে কামরূপী ভাষায় লিখিত চরিত পুঁথিগুলিতে।

তবে উনিশ শতকের শেষার্ধ থেকে ডুয়ার্স অঞ্চলে চাবাগিচার বিকাশের সুত্র ধরে ছোটোনাগপুর অঞ্চল থেকে বেশ কয়েকটি জনজাতির আগমন ঘটেছে রায়ডাক অববাহিকায়। স্বাভাবিকভাবেই রায়ডাক অববাহিকার চা বাগিচাগুলিতে (রায়ডাক, কার্তিকা, তুরতুরি, কোহিনূর, ধওলাঝোরা, নিউল্যান্ডস  কুমারগ্রাম ও সঙ্কোশ চাবাগান) বিকাশ ঘটেছে এক মিশ্র সংস্কৃতির। অন্যদিকে কোচবিহার রাজ্যের (আ ১৫১৫ থেকে ১৯৪৯ খ্রি) রাজনৈতিক বিবর্তন নিম্ন রায়ডাক অঞ্চলের সাংস্কৃতিক বৃত্তে বৈষ্ণব, হিন্দু ও ইসলামীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও সংমিশ্রণে সহায়তা করেছে। ১৯৪৭ এর বাংলা প্রদেশের বিভাজন ও ১৯৪৯ এ কোচবিহার রাজ্যের ভারতভুক্তির পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গ/বাংলাদেশ, আসাম ও উত্তর ভারতের একাধিক রাজ্য থেকে বিভিন্ন ভাষা  ও জাতিগোষ্ঠীরও মানুষের আগমনের ফলে রায়ডাক অববাহিকার সাংস্কৃতিক জীবনে বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে।

ঔপনিবেশিক শাসনের পরোক্ষ প্রভাবে রায়ডাক অববাহিকার চা-বাগিচা অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বিকাশ ঘটেছে খ্রিস্ট ধর্মের। ছোটনাগপুর অঞ্চল থেকে আসা সাঁওতাল, মুন্ডা, চিকবরাইক, মাহালি, খাড়িয়া, ওঁরাও, প্রভৃতি জনজাতির (যাদেরকে আদিবাসী বা মদশিয়া বলে চিহ্নিত করা হয়) শ্রমিক শ্রেণির সঙ্গে স্থানীয় মেচ ও রাভা জনজাতির অনেকেই খ্রিস্ট ধর্মকে আপন করে নিয়েছেন।  ১৮৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘সান্তালপুর মিশন’ ও ১৯২১ এ স্থাপিত মহাকালগুড়ি মিশন স্কুল ওঠে রায়ডাক অববাহিকার সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। চা বাগিচা সহ শামুকতলা, মহাকালগুড়ি, কুমারগ্রাম দূয়ার, হেমাগুড়ি, খোয়ারডাঙ্গা, পশ্চিম নারারথলি, দোবাশ্রী, তেলিপাড়া ও দক্ষিণ কামাখ্যাগুড়ির আদিবাসী, মেচ ও রাভা জনজাতি খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হলেও রায়ডাক নদীর সঙ্গে তাঁদের সাস্কৃতিক মেলবন্ধনের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

মধ্য ও নিম্ন রায়ডাক অববাহিকায় হিন্দুদের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি। কোচবিহার রাজ্যের শাসকগোষ্ঠী রায়ডাক নদীর তীরে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন মন্দির ও বৈষ্ণব সত্র নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমান ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে রায়ডাক-দুধকুমারের সঙ্গমস্থলে বৈষ্ণব গুরু শংকরদেবের (১৪৪৯-১৫৬৮) তত্ত্বাবধানে গড়ে তুলেছিল বামরায় কুঠি সত্র। এই সত্র থেকেই নদীপথে কোচবিহার, ফুলবাড়ি দুর্গ (চিলারায় কোট) বা নিম্ন আসামের সত্রগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষিত হত। শংকরদেবের শিষ্য ও প্রশিষ্যগণ রায়ডাকের তীরে গড়ে তুলেছিলেন হরি-মাধপুর সত্র, ফুলবাড়ি সত্র, ভিতরকুটি সত্র, শালবাড়ি সত্র ও কামাখ্যাগুড়ি সত্র। এই সত্রগুলির প্রভাবে মধ্য ও নিম্ন রায়ডাক অববাহিকার রাভা, কোচ ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের অনেকেই একটা অংশ বৈষ্ণব ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কোচ শাসকগোষ্ঠী রায়ডাক তীরে অবশ্য মহাদেব (শিব) ও অন্যান্য দেবদেবীর মন্দিরও তৈরি করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে পরবর্তীকালে পূর্ববঙ্গ থেকে আগত হিন্দুদের কয়েকটি সম্প্রদায় (মালো, নমঃশুদ্র, জেলিয়া কৈবত্য, যোগীনাথ, ধোবা, কুমার, ইত্যাদি) রায়ডাক নদীকে ‘গঙ্গা” হিসেবে পূজা করার প্রথা প্রবর্তন করেছে। একই সঙ্গে দুর্গাপূজার মূর্তিগুলিকে রায়ডাক নদীতে বিসর্জন দেওয়ার প্রথাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে।

মধ্য ও নিম্ন রায়ডাক ও দুধকুমার অববাহিকার জনগোষ্ঠীর (বিশেষত কোচ ও রাজবংশীদের) মধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার প্রবণতা তৈরি হয়েছিল ত্রয়োদশ শতকে। তাবাকাত-ই-নাসিরিতে ‘আলি মেচ’ এর কথা উল্লেখিত হলেও রায়ডাক অববাহিকায় কোন মেচ মুসলমান পরিবারকে এখনও আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে কুমারগ্রাম দূয়ার থেকে দুধকুমার-ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গমস্থল পর্যন্ত রায়ডাকের দুই ধারে রাজবংশী মুসলমান বা নস্য শেখদের বসতি রয়েছে। ইসলাম ধর্মের অনুসারী নস্য শেখগণ জীবন-জীবিকার স্বার্থেই রায়ডাক নদীকে তাঁদের সংস্কৃতির অঙ্গে পরিণত করেছেন। স্বাভাবিকভাবেই রায়ডাক নদীর বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠিত অষ্টমী স্নানের মেলায় হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সকলেই অংশগ্রহণ করেন।

ভুটানের মত ভারত-বাংলাদেশের রায়ডাক অববাহিকার ভাষাগত বৈশিষ্ট্যও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। রায়ডাকের চা বাগিচা অঞ্চলে ছোট নাগপুরী, হিন্দি, নেপালি ও বাংলার সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে ‘শাদরি’ নামের এক মিশ্র ভাষা/উপভাষা। তবে মেচ ও নেপালী ভাষীগণ তাঁদের নিজস্ব ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশে সর্বদায় যত্নশীল। এমনকি নেপালী ও বড়ো (মেচ) ভারতের সংবিধানের অষ্টম তপশিলেও স্থান করে নিয়েছে। তবে ভাষার চর্চা ও স্বীকৃতির দাবিতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় হল রাজবংশী (কামতাপুরি) ভাষা প্রসঙ্গ। রায়ডাক তীরের কুমারগ্রাম ও তুফানগঞ্জ রাজবংশী ভাষা আন্দোলন এবং রাজবংশী সাহিত্য ও ব্যাকরণের বিকাশে সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ভাওয়াইয়া লোকসঙ্গীতের প্রবাদপ্রতিম শিল্পী টগর অধিকারী ও আব্বাসউদ্দীন রায়ডাক তীরের তুফানগঞ্জ থেকেই সঙ্গীত চর্চা করেছিলেন, যা পরবর্তীকালে রাজবংশী (কামতাপুরি) ভাষার বিকাশের সহায়ক হয়েছে। ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজবংশী ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়ে কোচবিহারে যে রাজবংশী ভাষা একাডেমি তৈরি করেছে তার জন্য রায়ডাক অববাহিকার ভূমিকাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না।

১৯৪৭ সালের পরবর্তীকালে পূর্ববাংলার (পূর্ব পাকিস্তান/বাংলাদেশ) ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে দুধকুমার অববাহিকার অবদান কোন অংশেই কম নয়। ভুরুঙ্গামারি ও সোনাহাট বিশেষ করে সোনাহাট রেলসেতু মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। স্বাভাবিক ভাবেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্কৃতির সঙ্গে দুধকুমার অববাহিকা নিজেকে যুক্ত করে রাষ্ট্র গঠনে রায়ডাক নদীর সাংস্কৃতিক ভূমিকাকে সমৃদ্ধ করেছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, ওয়াং-চু-রায়ডাক-দুধকুমার শুধুই একটি নদীর তিনটি নাম নয়। এই নদী দক্ষিণ এশিয়ার তিনটি রাষ্ট্রের ভাষা ও সংস্কৃতির ধারার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। ভুটান ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বা ভারতের কয়েকটি সংবিধান স্বীকৃতি ভাষা (বাংলা, নেপালি, বড়ো) ছাড়াও বিভিন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর (বিরমি, দায়া, কোচ, রাভা, সাদরি ও রাজবংশী) ভাষা সংস্কৃতির ধারা বাহক রূপে রায়ডাক নদী থিম্পু থেকে ব্রহ্মপুত্র পর্যন্ত বয়ে চলেছে।

লেখক: ড. রূপ কুমার বর্মণ, অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ ও কোওর্ডিনেটর, আম্বেদকর চর্চা কেন্দ্র, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর