চলুন নিজেদের কথার লাগাম টেনে ধরি!

, যুক্তিতর্ক

মো. কামরুল ইসলাম | 2023-08-31 07:42:28

বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের এক মহান চরিত্র। কথা বলার অধিকার রয়েছে আপনার, আমার। কথার মাধ্যমে আপনি হাজার হাজার মানুষকে খুশি করতে পারেন। আবার কথার মাধ্যমে আপনি হাজার হাজার মানুষের কষ্টের কারণ হতে পারেন। কথা যেহেতু আপনি বলবেন, তাই আপনাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- আপনি হাজার হাজার মানুষকে খুশি রাখবেন নাকি তাদের কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিবেন।

সোস্যাল মিডিয়ায় আপনি খুব সহজেই ভাইরাল হয়ে যেতে পারেন। একটি সুন্দর সাবলিল কথায় দেশের মানুষ আপনাকে অনেক আপন করে নিতে পারেন আবার আপনার একটি হাসি বিদ্রুপের বীজ বপন করে দিতে পারে, দেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠতে পারে। আপনার অনেক চিন্তা চেতনা যা আপনার কাছে অনেক মূল্যবান মনে হতে পারে কিন্তু অন্যের কাছে তা নাও মনে হতে পারে, সেখানে অন্যের ওপর আপনার মতামত চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। হিতে বিপরীত হতে পারে।

অনেকেই ভাষণ দিতে পছন্দ করেন এমনকি একসাথে অনেক মানুষের উপস্থিতি দেখলেই নিজের উপস্থিতি জানান দিতেই ভাষণ দেয়া শুরু করে দেন। সেই সঙ্গে ইদানিং ফেসবুক, টুইটারে আপনার যদি অধিক সংখ্যক ফলোয়ার থাকে তখন নিজের বক্তব্যগুলো অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে থাকেন, অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। এমনকি ধর্মীয় কোনো মজলিসে কোনো বিষয়ে নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিতেও দেখা গেছে। তাতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পরেন। দেশে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। যেখানেই আপনি বক্তব্য দেন না কেনো, বক্তব্য দেয়ার আগে দশবার ভাবুন, আপনি ঠিক বলছেন কিনা? নাকি বিভ্রান্তিকর কিছু বলছেন। আপনার বক্তব্য অনেক সময়ে ইতিহাস বিকৃতি হওয়ার মতো বক্তব্যও হয়ে যেতে পারে।

বাংলাদেশ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি গণতান্ত্রিক দেশ। একটি স্বাধীন দেশ। অনেক মত-পথের সম্মিলন আছে এই দেশে। অনেক আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আপনার আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এই দেশ এই মাতৃকার পটভূমি নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন নানামূখী বক্তব্য দিয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মূল স্রোত সঠিক পথেই বহমান। দেশ নানাভাবে অগ্রসরমান। দেশের অর্থনীতি অনেক বেশি স্থিতিশীল। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ আর এখন নেই। আমরা শুধু এখন সাহায্য প্রার্থী নই, বিভিন্ন ভাবে সাহায্যও দিয়ে থাকি। এই দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরা গর্বিত।

ভুল স্বীকার করার মধ্যেও অনেক মহত্ব আছে। আমাদের চলার পথে অনেকেই ভুল করে থাকি। কেউ কেউ ভুল স্বীকার না করে উল্টো পেশী শক্তির জোরে সেই ভুলকে আরও বেশি স্থায়িত্ব দেওয়ার অপচেষ্টা করে থাকেন। পৃথিবীর আদিকাল থেকেই বর্তমান সময়ের প্রয়োজনে অনেক কিছুই সামঞ্জস্য রেখে অনেক ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সময়ের পরিক্রমায় সিদ্ধান্তগুলো অবস্থা বিবেচনায় পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়ে পরে। বর্তমানের চাহিদা অনুযায়ী পূর্বের সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। দেশের জনগনের স্বার্থে আমাদের পবিত্র সংবিধানেও কয়েকবার সংশোধনী আনার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে, সংশোধিত হয়েছে।

আজ দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। দেশের উৎপাদিত পণ্যের ওপর, পণ্যের ব্যবহারের ওপর ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) একটি বড় ভূমিকা রাখছে। ভ্যাটের প্রচলন করতেও এই দেশে সরকারগুলোকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। আয়কর প্রক্রিয়া কোনো সহজলভ্য ছিলো না কোনো সরকারের জন্যই। ভবিষ্যত বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য বাস্তবমূখী কর্মসূচীর রূপরেখা প্রনয়ণ করে জনগনের আস্থা অর্জন করতে হয়েছে। পদ্মা সেতুর মতো অনেক উন্নয়নমূলক কাজের অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে। দেশের জনগনের ট্যাক্সের ওপর সরকার ৬ লক্ষ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে পেরেছে। চাপ সৃষ্টি না করে জনগনের প্রতি ভালোবাসার মন্ত্রই এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস, গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়সম রাজনীতিবিদদের হাত ধরেই বাংলাদেশের সৃষ্টি। ছাত্র রাজনীতির ইতিহাসের সাথে ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আস্টেপৃষ্টে মিশে আছে। ছাত্র-যুবক, কৃষক, শ্রমিক সবাই ছিলো রাজনীতিবিদদের মূল শক্তি। আজ এক শ্রেণির রাজনীতিবিদ রাজনীতিটাকে নিজেদের পেশীশক্তির অস্র হিসেবে ব্যবহার করছে। পদ-পদবীগুলো অস্র হিসেবে ব্যবহার করছে। আমরা রাজনীতিকে সেই স্বচ্ছ পরিচ্ছন্ন সত্তর দশকের রাজনীতি ভাবতে চাই, যে রাজনীতির কারণে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এই দেশ স্বাধীন হয়েছিলো, পেয়েছিলাম লাল-সবুজের পতাকা বেষ্টিত পৃথিবীর মানচিত্রে আঁকা বাংলাদেশ।

বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে কেমন জানি নিজেদের সর্বসেরা ভাবনায় পেয়ে বসেছে। সবারই অভিব্যক্তি আমাদের ছাড়া দেশই অচল হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে পেশী শক্তির প্রয়োগও দেখতে পাওয়া যায়। যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। অতিউৎসাহী কিছু ব্যক্তিবর্গের কারণে পুরো পেশার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর বাংলায় জনগনই সকল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। কোনো ব্যক্তি কিংবা কোনো পেশার মানুষ সুউচ্চে অবস্থান করার কিছু নেই।

সহজ ভাবনায়, জীবনটাই সহজ হয়ে যাবে। আর জটিল ভাবনায়, জীবনটা কঠিন হয়ে ওঠবে। পছন্দ আপনার সহজ না কঠিন জীবন। বক্তব্যে যত সাবধানী হবেন আপনার চারপাশ তত সুন্দর সাবলীল থাকবে। অসাবধানতায় আপনিসহ আপনার চারপাশ অস্থিরতায় পর্যুদস্ত হবে।

লেখক মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

এ সম্পর্কিত আরও খবর