প্রসঙ্গ ছিলো করোনা। এই নিয়ে কথা বলতে বলতে এক পর্যায়ে আমি উচ্চারণ করে ছিলাম জ্ঞানপাপী। এই নিয়ে আজ দু'দিন ধরে আমার সাথে আমার ছেলের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। আমি বলছিলাম আমাদের দেশে যদি ভারতের মতো অবস্থা হয় তাহলে তো মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকবে না। কারণ চিকিৎসা সেবামূলক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা খুব একটা সন্তোষজনক নয়।
প্রসঙ্গক্রমে বললাম এসব কিছুর জন্য আমাদের দেশের জ্ঞানপাপীরা দায়ী। আমার এমএসসি (ফিজিক্স শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) পরীক্ষার্থী ছেলে তা মানতে রাজি নয়। তার কথা দেশের মূল চালিকাশক্তি যারা, তারা ততটা জ্ঞানী নন। জ্ঞানী মানুষরা দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারেন না।
তার কথায় মনটা খারাপ হয়ে গেলো। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা মানুষগুলো কি জ্ঞানী নন? আমি নিজে মাস্টার্স পাস। ছেলের বিবেচনায় তা হলে আমার কথাগুলো জ্ঞানপ্রসূত নয়!
ছেলের অনেক যুক্তি। কিছু মেনে নিলাম, কিছু মেনে নিতে পারলাম না। আমি মনে করি আমাদের দেশের সর্বস্তরের কর্মস্থলে জ্ঞানপাপী থাকার কারণে কথা ও কাজের স্বচ্ছতা নাই। কাজের স্বচ্ছতা ও সঠিক কাজ করার জন্য প্রয়োজন সৎ, যোগ্য, আদর্শ, সততা, নীতিবান লোক। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বস্তরে অসৎ কর্ম ও অসৎ অর্থ উপার্জন করার জন্য ব্যস্ত আছে সবাই। সরকারি অর্থ অপচয় করে অতিরিক্ত ভোগ বিলাসিতা করা মানুষগুলো জ্ঞানপাপী হয়ে যাচ্ছে। সরকারি টাকা পাওয়া যায় বলে অতিরিক্ত খরচ করা মোটেই সমীচীন নয়। অতিরিক্ত দামি গাড়ি-বাড়ি ব্যবহার করা, সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগতকাজে ব্যবহার করা কি ঠিক? সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে ভাল খাবার-দাবার খাওয়া যায় কি? এটা কি ঠিক? সরকারের কোন নিজস্ব অর্থ নাই, সব জনগণের অর্থ। জনগণের অর্থ নিয়মনীতি ভাবে খরচ করতে হবে। নিয়মনীতির বাইরে সরকারি অর্থ খরচকারী, ভোগ দখলকারীরা অবশ্যই জ্ঞান পাপী হয়ে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছাত্রছাত্রীদের অতিরিক্ত বেতন ও অন্যান্য ফিস ধার্য্য করা টাকা আদায় করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নামে বেনামে ভাউচার, দামি খাবার-দাবার অনিয়মে অর্থ খরচ অর্থ আত্মসাৎ করে নিজেরা ভাগবাটোয়ারা করে নিয়ে যাচ্ছে। এরা কি জ্ঞানপাপী না? এইজন্য এখন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতমানের পড়াশুনা নেই। ছাত্রছাত্রীদের মেধা নষ্ট হচ্ছে, আদর্শ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি ডাক্তাররা হাসপাতালে সঠিকভাবে চিকিৎসা করছে না। রোগীরা প্রাইভেট গিয়ে বেশি টাকা খরচা করে ভালো হওয়ার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালের চিকিৎসকরা নামে বেনামে প্রাইভেট ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে অর্থ কামাইয়ের ধান্ধা করছেন। এককথায় ‘অনিয়ম অনৈতিক ও অসৎ কর্ম করার সাথে জড়িত ডাক্তাররা কি জ্ঞানপাপী নন? জ্ঞানপাপী ডাক্তাররা কখনও উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে না। সরকারি অফিস আদালতে অনিয়ম কাজ করায় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জ্ঞানপাপী হয়ে যাচ্ছে। জ্ঞানপাপীরা দুনিয়াতে কোন কাজ সঠিকভাবে করতে পারবে না। জ্ঞানপাপীদের সংখ্যা বেশী থাকায় বাংলাদেশের সর্বস্তরের অনিয়ম, ঘুষ, দুর্নীতি, অসৎকর্ম ও অসৎ অর্থ উপার্জন করতে ব্যস্ত। বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা জ্ঞানপাপীরা। জ্ঞানপাপীদের কারণে সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কাজের মধ্যে অবক্ষয় হচ্ছে; অর্থাৎ সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।
এই সর্বশেষ আমরা কি দেখলাম! জ্ঞানপাপীদের দূর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প আশ্রয়হীনদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য নবনির্মিত পাকাঘর গুলো ভেঙে ভেঙে পড়লো। এইজন্য আমি মনে করি প্রধানমন্ত্রীকে আরো কঠোর হতে হবে। জ্ঞানপাপীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। সাধারণ মানুষ যখন দেখবে জ্ঞানপাপীরা তাদের পাপের জন্য সাজা ভোগ করছে। তখন মানুষের মনে ভরসা আসবে। কঠোরতার সাথে ব্যবস্থা নিলে এটা জোর দিয়ে বলা যায় এদেশ থেকে অনিয়ম, অব্যবস্থা দুর্নীতি দূর হবেই হবে।
লতিফা নিলুফার পাপড়ি : শিক্ষক, কবি, গল্পকার ও কলাম লেখক। ই-মেইল: lnpapri@gamil.com