ইরানে নতুন নেতৃত্ব: চীন, পাকিস্তান, ভারতের সমীকরণ

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:39:00

সামনের আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে তেহরানের মসনদে বসবেন ইরানের নবনির্বাচিত এবং রক্ষণশীল ও কট্টরপন্থী রূপে পরিচিত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি। রাইসির ক্ষমতা গ্রহণে ইরানের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতিতে পালাবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। অনেকক্ষেত্রেই অতীতের পন্থা বর্জন করে ইরান নতুন মিত্র ও নতুন পদক্ষেপ নেবে বলেই মনে হচ্ছে।

কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পশ্চিম সীমান্তের বৈরী প্রতিবেশী তথা সৌদি আরব ও তুরস্কের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্বে ইরানের নতুন নেতৃত্ব কেমন আচরণ করে, সেটাই এখন সবার বিবেচনার বিষয়। পাশাপাশি, পূর্ব সীমান্তে তুলনামূলক মিত্র ভাবাপন্ন প্রতিবেশী চীন, পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টিও নজরে রাখা জরুরি।

ইরান-ভারত সম্পর্ক

ইরানের নয়া কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট  ইব্রাহিম রাইসি শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান আগামী ৫ আগস্ট। সেই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতীয় প্রতিনিধিকেও অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ তথ্য সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে প্রকাশ করেছে ভারতীয় মিডিয়া দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে আগামী ৫ আগস্ট আবার কাশ্মীরে অনুচ্ছেদ ৩৭০ বিলোপের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি। অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভূমিপুজার প্রথম বর্ষপূর্তি। এই দুটি ঐতিহাসিক বিষয় ভারতের কট্টরপন্থী শাসক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-এর কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেইদিনই তেহরানে নয়াদিল্লির প্রতিনিধি যাবেন কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বলেও সংবাদমাধ্যমের খবরে প্রকাশ।

ইরান-ভারত সম্পর্ক শুধু এশিয়ায় নয়, পুরো বিশ্বের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও অবরোধেও যে গুটিকতক দেশ ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ও লেনদেন অব্যাহত রেখেছে, ভারত তার অন্যতম। ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি ও জ্বালানি খাত ছাড়াও আঞ্চলিক সংঘাত নিরসনে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইরান ও ভারত এক সুরে কথা বলে। বিশেষত, আফগানিস্তানের সংকটে দুই দেশই সরব এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার ফর্মুলার বিষয়ে অভিন্ন মনোভাবের পরিচয় দিচ্ছে।

ইরানের সঙ্গে ভারতের গভীর সম্পর্ক ও বন্ধুত্বের অনেক নজিরের মধ্যে গেল সপ্তাহে স্থাপিত হয়েছে আরেক দৃষ্টান্ত। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্কর প্রথম কোনও বিদেশি প্রতিনিধি রূপে তেহরানে হাজির হয়ে মিলিত হন নবনির্বাচিত ইরানি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ঘটনাটিকে 'অভূতপূর্ব' (unprecedented) বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

কারণ, কূটনৈতিক নিয়মে শপথ গ্রহণের আগে কোনও রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিদের সাক্ষাতের রেওয়াজ নেই। ভারতের জন্যে এই রেওয়াজ ভাঙলো ইরান। আবার ইরান হলো সেই দেশ, যেখানে রেওয়াজ ভেঙে হাজির হলো ভারত।

বিভিন্ন সংবাদ সূত্রের খবরে জানা গেছে, ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস. জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ইব্রাহিম  রাইসি। গত বুধবার (৭ জুলাই) নির্ধারিত সফরে রাশিয়া যাওয়ার পথে তেহরানে কিছুক্ষণের জন্য নামেন জয়শঙ্কর। তখনই প্রথম বিদেশি কূটনীতিক হিসাবে প্রেসিডেন্সি রাইসির সাক্ষাৎ পেয়ে আলোচনায় মিলিত হন জয়শঙ্কর। সেই সাক্ষাতে শপথ অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ বার্তা জয়শঙ্করকে দেন স্বয়ং রাইসি। পাল্টা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তরফে বিশেষ বার্তা প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট রাইসিকে দেন জয়শঙ্কর।

তাছাড়া, জয়শঙ্কর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের সঙ্গে আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে ইন্দো-ইরান সম্পর্ককে মজবুত করার বিষয়ে আলোচনা করেন। ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ও চাবাহার বন্দর নিয়েও দুই মন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে সংবাদমাধ্যমের সূত্রে জানা যায়।

অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নেতৃত্বে ইরানের নীতি ও পদক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট উৎসুক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকগণ। বিশেষ করে, যখন ইরানে নতুন নেতৃত্বে নতুন জমানা শুরু হচ্ছে, তখন তার গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সবারই নজর থাকা স্বাভাবিক। মার্কিন প্রভাবাধীন পশ্চিমা দেশগুলো, যাদের সঙ্গে ইরানের বিভিন্ন টানাপোড়ন ও স্নায়ুগত দ্বন্দ্ব চলছে, তারা গভীর নজরে রাখছে ইরানের সামগ্রিক পরিস্থিতি। নতুন নেতৃত্বে ইরান তার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক অব্যাহত রাখে এবং নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টিতে কিরূপ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেসব নিয়েও চলছে পর্যবেক্ষণ। এমনতাবস্থায়, ইরান-ভারতের মধ্যকার উষ্ণ সম্পর্ক আরও গভীরতর হওয়ার বার্তা দিল জয়শঙ্করের সঙ্গে ইব্রাহিম রাইসির আন্তরিক সাক্ষাতের ঘটনা।

ইরান ও ভারত পরস্পরকে যে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়, তার আরও বহু প্রমাণ রয়েছে। ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সফরকালে ভারত সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করে। তখন  ভারত ও ইরানের মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তি ও ৮টি সমঝোতা হয়, যা নানা দিক থেকে তাৎপর্যবাহী। আর সম্প্রতি রাশিয়া যাওয়ার পথে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তেহরানে যাত্রা বিরতির মতোই অতীতে আরেকবার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং তেহরানে নামেন মস্কোতে সাংহাই সহযোগিতা জোটের বৈঠকে যোগ দিতে যাওযার পথে। এই সফর নিয়ে সরকারীভাবে রিফুয়েলিং অর্থাৎ বিমানে তেল ভরার যুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ভারতের মন্ত্রী সেই তেল দুবাই বা আবুধাবিতে না ভরে তেহরানে কেন নামলেন, তা নিয়েও তখন বিশ্লেষণ হয়। পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কোনও দ্বিমত নেই যে চিরশত্রু চীন এবং পুরনো শত্রু পাকিস্তানের সাথে ইরান যেভাবে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, ভারত তাতে গভীর উদ্বিগ্ন। চীনের সাথে ইরানের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত যে সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে, তা নিয়ে ভারতের মাথাব্যথা বাড়ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের কাছে ইরানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত গুরুত্ব অপরিসীম। ভারত কোনোভাবেই তা খোয়াতে চায়না। আফগানিস্তান এবং মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার বাজারে ঢোকার জন্য ভারতের কাছে ইরানের গুরুত্ব বিশাল। সে কারণেই ইরানের চাবাহার বন্দরের উন্নয়নে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত হয়েছিল ভারত।জ্বালানির জন্য এবং কাশ্মীর ইস্যুতে ইরানের মত প্রভাবশালী একটি মুসলিম দেশের কাছ থেকে রাজনৈতিক সমর্থনের জন্যেও ভারত উদগ্রীব। ফলে ইরানের বিষয়ে সব সময়ই তৎপরতা ও আগ্রহ প্রদর্শনে ভারত এগিয়ে।

ইরানও নানা ঐতিহাসিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কৌশলগত কারণে ভারতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়। তুর্কি-ইরানি শাসকদের অধীনে ভারত তথা সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া অর্ধ-সহস্র বছর শাসিত হওয়ার সময় ইরানি ভাষা ফারসি ছিল এই বিশাল অঞ্চলের রাষ্ট্রভাষা। আর বর্তমানে ইরানের পর বিশ্বের সবচেয়ে বেশি শিয়া মুসলিম বসবাস করে ভারতে। পাকিস্তানে শিয়া সম্প্রদায় বিভিন্ন সময়ে নিগৃহীত হলেও ভারতে তেমন হয়নি। মুসলিম সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ উঠলেও শিয়া নির্যাতনের রেকর্ড নেই ভারতে। ফলে ভারতের বিষয়ে ইরানও উদার এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ মনোভাবের পরিচয় দিয়ে চলেছে।

ইরান-চীন সম্পর্ক

ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকলেও এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে দ্রুত পরিবর্তনশীল ভূ-রাজনীতির কারণে ইরান নিজস্ব কৌশলপূর্ণ নীতি নিয়ে চলছে এবং চীনকে কাছে টেনে নিয়েছে। যে দেশটি এখন ভারতের সবচেয়ে শত্রু দেশে পরিণত হয়েছে, সেই চীনের সাথে ইরানের যে ব্যাপক অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে, তা ভারতের কাছে দুঃস্বপ্ন।

ইরান ও ভারতের মধ্যে দূরত্বের সুযোগে চীনের গুরুত্ব বৃদ্ধির ঘটনা একদিনে তৈরি হয়নি। বিগত ১৫ বছরে ভারতের মোদি সরকারের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভারতের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা যত বেড়েছে, ইরানের সাথে ততই দূরত্ব বেড়েছে। সেই শূন্যতা পূরণে ঝড়ের মত ঢুকে পড়ে চীন।

চীন এবং ইরান তাদের মধ্যে ২৫ বছরের একটি ‘কৌশলগত সহযোগিতার‘ চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া চূড়ান্ত করে ফেলেছে বলে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশিত নানা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, এই চুক্তিতে ইরানের তেল-গ্যাস, ব্যাংকিং, টেলিকম, বন্দর উন্নয়ন, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং আরও কয়েক ডজন খানেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীন আগামী ২৫ বছরে কমপক্ষে ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।

কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইরানের যে বন্দরটির উন্নয়নের শুরু ভারতের হাতে হয়েছে, সেই চাবাহার বন্দরের সম্প্রসারণ এবং ঐ বন্দরের সাথে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন শহরের রেল যোগাযোগের কাজ এখন চীনের হাতে তুলে দেওয়ার কথা সরকারিভাবে ঘোষণা করেছে ইরান।

শুধু তাই নয়, জানা গেছে চীন এখন চাবাহার বন্দরটিকে চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপেক) অংশ করতে উদগ্রীব।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কায় চাবাহার বন্দর উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি পূরণে ভারতের গড়িমসিতে ইরান ক্ষুব্ধ। সেই সাথে যোগ হয়েছে এশিয়ায় জোট রাজনীতির আমূল পরিবর্তনের প্রভাব। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে রাশিয়া এবং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি এখন একইরকম। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্ক। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে যে সব দেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে, যেমন ইউএই এবং সৌদি আরব, তারা ইরানের বড় শত্রু।

চীন বিশ্বব্যাপী যে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এবং অর্থনৈতিক প্রভূত প্রতিষ্ঠায় তৎপর, তাতে পার্শ্ববর্তী ইরানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইরানের মাধ্যমে চীনের সামনে মধ্যপ্রাচ্য, পশ্চিম এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকা তথা বিশ্বের সর্বত্র যাওয়ার পথ উন্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। আবার মার্কিন বিরোধিতায় শক্তিশালী চীনকে সুহৃদ রূপে পাশে পাওয়া ইরানের জন্যেও জরুরি। ফলে ইরান ও চীনের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হওয়ার লক্ষণ স্পষ্ট।

ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক

মূলত চীনের আগ্রহে পাকিস্তানের সাথে ইরানের যেভাবে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হচ্ছে তা ভারতের জন্য বাড়তি মাথাব্যথার বিষয়। কারণ, ভবিষ্যতে আফগানিস্তানে ভারত তাদের প্রভাব কতটা ধরে রাখতে পারবে তা অনেকটাই নির্ভর করছে ইরান-পাকিস্তান সম্পর্কের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান উড্রো উইলসন সেন্টারের আয়োজনে পাকিস্তান নিয়ে এক অনলাইন আলোচনায় সেদেশের প্রখ্যাত নিরাপত্তা বিশ্লেষক আয়েশা সিদ্দিকা মন্তব্য করেছেন, প্রধানত অর্থনৈতিক স্বার্থে ইরানের সাথে নতুন সম্পর্ক স্থাপন নিয়ে পাকিস্তানের ভেতর আগ্রহ বাড়ছে। তিনি বলেন, সৌদি আরব দক্ষিণ এশিয়ায় তাদের স্বার্থকে নতুন করে পর্যালোচনা করছে এবং পাকিস্তানের চাইতে ভারত তাদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। সেই কারণে ইরান এখন পাকিস্তানের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এমন প্রশ্নও উঠেছে যে, ভারত কি তাদের এক সময়কার ঘনিষ্ঠ এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু দেশ ইরানকে একেবারেই হারিয়ে ফেলছে?

বিষয়টি ভারতও গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হবে তা জেনেও প্রভাবশালী মন্ত্রীকে তেহরানে পাঠিয়ে ভারত বোঝাতে চেয়েছে যে ইরানের সাথে সম্পর্ককে তারা কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে। ভারত বার্তা দিতে চাইছে যে, পররাষ্ট্র নীতি এবং কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে দিল্লী তেহরানকে পাশে চায়। আবার, ভারতের মত বড় একটি বাজার সবসময়েই ইরানের জন্য লোভনীয় এবং ইরান নিশ্চয়ই জানে যে তাদের জ্বালানি তেলের পুরোটাই চীন কিনবে না।

কিন্তু আমেরিকা এবং চীনের রেষারেষিকে কেন্দ্র করে এশিয়ায়, বিশেষত মধ্য ও পশ্চিম এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে যে দলাদলি শুরু হয়েছে, তাতে ইরানের নতুন নেতৃত্ব কেমন পদক্ষেপ নেয়, সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইরানে নতুন নেতৃত্বের অধীনে চীন, পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সমীকরণ কেমন হবে, সেটাও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের বিষয়। ইরান পুরনো পথে চলবে, নাকি নতুন বিন্যাসে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সাজাবে, সেটাই সবচেয়ে দামী প্রশ্ন। ইরানের নতুন নেতাকে অভিনন্দিত করতে ভারতের আগবাড়ানো পদক্ষেপের পর চীন ও পাকিস্তানের ভূমিকাও সতর্কতার সঙ্গে দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ইরানের নতুন নেতৃত্বের সামনে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক রাজনীতির মেরুকরণের কারণে পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যে ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, তা বিলক্ষণ টের পাওয়া যাচ্ছে।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম

এ সম্পর্কিত আরও খবর