মাস্ক হয়ে উঠুক নিত্য প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র!

, যুক্তিতর্ক

মো. কামরুল ইসলাম | 2023-08-29 18:25:25

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ব জুড়েই মানুষের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এখন তো সারা বিশ্বেই কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনের তুলনায় ভ্যাকসিন এখনো পর্যাপ্ত নয়।

প্রায় ৮০০ কোটি জনসংখ্যার এই বিশ্বে ধীরে ধীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। করোনার আক্রমণও চলছে আবার সেই সঙ্গে ভ্যাকসিনেরও প্রয়োগ অব্যাহত আছে। কোনো ভ্যাকসিনই শতভাগ করোনা ভাইরাস নির্মূল করবে তা বলার কোন সুযোগ নেই।

মানব সভ্যতার শুরু থেকে পরিধেয় বস্ত্রের নানা সংযুক্তি দেখা গেছে। প্রয়োজনের তাগিদে নানা ধরনের পরিধেয় বস্ত্রের উপস্থিতি ঘটেছে। আধুনিক বিশ্বে নানা ধরনের হাল ফ্যাশনের জন্য নানা রকম বস্ত্র উৎপাদন অব্যাহত আছে। প্রয়োজনের তাগিদে বিভিন্ন ঋতুর জন্য বিভিন্ন রকমের ড্রেস তৈরি করা হয়। শীতকালের জন্য গরম ও আরামদায়ক পোশাক তৈরি করা হয় আবার গরমকালের জন্য হালকা সুতি কাপড়ের পোশাক তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। সেই সঙ্গে বর্ষাকালের জন্যও উপযোগী পোশাক তৈরি করা হয়। প্রতিটি পোশাকই ঋতুভেদে তৈরি করা হয়।

বর্তমানের করোনা ভাইরাসের কারণে মাস্ক একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বস্ত্র হিসেবে পরিগণিত হয়েছে সারা বিশ্বে। ঘরের বাহিরে গেলে যেমন শার্ট, প্যান্ট, স্যালোয়ার, কামিজ, শাড়ি কিংবা জুতা, স্যান্ডেল পরার বাধ্যবাধকতা থাকে তেমনি গত বছর থেকে প্রত্যেকটি দেশে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা দিয়েছে।

পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ঋতুভেদে বিভিন্ন পোষাক তৈরি করে রপ্তানি করে কিংবা বাজারজাত করে থাকে। সেখানে একমাত্র মাস্কই সবার জন্য সারাবছর সব ঋতুর জন্য একটি জরুরি পোশাক হিসেবে উৎপাদন করতে পারে। এতে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়ার ও সুযোগ থাকছে। শার্ট কিংবা প্যান্ট নির্দিষ্ট সংখ্যক পুরুষের জন্য উৎপাদন করা হয় আবার স্যালোয়ার, কামিজ কিংবা শাড়িও নিদির্ষ্ট সংখ্যক মহিলাদের জন্য উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পোষাক বিভিন্ন বয়সী পুরুষের জন্য কিংবা মহিলাদের জন্য কিংবা শিশুদের জন্য তৈরি করা হয় কিন্তু মাস্ক এমনই একটি জরুরি পণ্য হয়ে ওঠেছে যেখানে কোনো পুরুষ কিংবা মহিলার জন্য ভেদাভেদ নেই। এখন বয়স ও কোনো ফ্যাক্টর নয়। সারাবিশ্বের বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্যই প্রয়োজন মাস্ক। মাস্ক এর উপকারিতা কিংবা প্রয়োজনীয়তার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে জনগনের মাঝে।

মাস্ক এমনই একটি পন্য যা করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে এবং সেই সঙ্গে অন্যদেরও সুরক্ষা দিয়ে থাকে। আমাদের দেশে হাম, কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েডসহ নানা রোগের সৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভাইরাসের টিকা দিয়ে থাকে শিশুর জন্মের পরই। শৈশব কাল থেকেই যদি মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি করা যায় তাহলে শিশুটিও করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবে এবং সেই সঙ্গে বায়ু থেকে সৃষ্টিকারী নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে পারবে।

অধিক জনসংখ্যার বাংলাদেশে বায়ু দূষনের কারনে হাঁচি, কাশিযুক্ত নানা রকমের অসুখ বিসুখ হয়ে থাকে, ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে, শুধুমাত্র মাস্ক পরিধানে করোনা ভাইরাসসহ নানারকম রোগ ব্যাধি থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। পরিবারের বয়োঃবৃদ্ধরা যদি মাস্ক পরিধানের অভ্যাস করতে পারে তাহলে পরিবারের শিশুরা মাস্ক পরিধানে আগ্রহ দেখাবে। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষা কারযক্রম চালু করতে পারবে। সচেতনতা সৃষ্টি করে শিশুদের মাস্ক পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এতে শিশুর ভবিষ্যত সুরক্ষিত হবে, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে।

মাস্ক পরিধানের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে সবাইকে হাত ধোয়ার অভ্যাসও তৈরি করতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে, সামাজিক কিংবা শারিরীক দূরত্ব মেনে চললে, স্বাস্থ্যবিধি পরিপালন করলে মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা সম্ভব হবে, সাথে আপনার সংস্পর্শে যারা আসবে তারাও করোনা থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। মাস্ককে নিত্য প্রয়োজনীয় পরিধেয় বস্ত্র মনে করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বিস্তারে বাধা হয়ে দাঁড়ানোই হোক প্রত্যেক সচেতন মানুষের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য।

নিজে মাস্ক পরে অন্যদের মাস্ক পরতে উৎসাহিত করলেই মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে ওঠবে।

লেখকঃ মো. কামরুল ইসলাম, সভাপতি, সাস্ট ক্লাব লিমিটেড

এ সম্পর্কিত আরও খবর