মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে

, যুক্তিতর্ক

আনিসুর বুলবুল, গণমাধ্যমকর্মী | 2023-08-31 11:26:03

করোনাভাইরাসের টিকা নিতে গিয়ে দেখি প্রচণ্ড ভিড়। শত শত মানুষ এসেছেন টিকা নিতে। কেউ দাঁড়িয়ে আছেন, কেউ সিরিয়াল দিচ্ছেন, কেউবা ডেস্কের সামনে তথ্য জেনে নিচ্ছেন।

মাইকে বার বার ঘোষণা করা হচ্ছে শুধু আজকের তারিখের যারা মেসেজ পেয়েছেন শুধু তাদেরকেই টিকা দেওয়া হবে। প্রবাসী, নন প্রবাসী ও বিএমইটি— এই তিনটি ডেস্কের কর্মীরা মানুষদের ম্যানেজ করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন।

দশ জনের গ্রুপ করে করে ভেতরে ঢুকানো হচ্ছে। ভেতরে রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির তরুণ-তরুণীরা হেল্প করছেন। একজন তরুণ বার বার বলছেন, টিকা নেওয়ার স্থানে সাবান-তেল-লোশন লাগাবেন না, ঘষামাজা করবেন না। ব্যথা কিংবা জ্বর হলে প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খাবেন।

এটি রাজধানীর কুর্মিটোলা ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আজকের সকাল ৮টার চিত্র। ভিড় দেখে ভালোই লেগেছে; মানুষের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ টিকা নিচ্ছেন।

একজন ইন্ডিয়ান এসেছেন। তিনি কোথায় দাঁড়াবেন, কী করবেন? বুঝতে পারছেন না। হাতে টিকা রেজিস্ট্রেশনের কাগজ নিয়ে পায়চারি করছেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের একজন এগিয়ে এসে তাকে সোজা নিয়ে গেলেন ভেতরে। মিনিট পাঁচেক পর তিনি বের হলেন; মুখে অমলিন হাসি। তিনি জানালেন, প্রথমে তো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না! এতো ভিড়। কিন্তু সহজেই টিকা নিতে পেরে আমি অনেক খুশি। তিনি হাসপাতাল কর্তৃকপক্ষকে ধন্যবাদ জানালেন।

টিকা নিতে আসা এক তরুণী রেজিস্ট্রেশনের কাগজে মোবাইল নম্বর লেখেননি। তার কাছে কলমও নাই। এদিক ওদিক তাকাতাকি করছেন। এগিয়ে এলেন একজন বিজিবি সদস্য। তাকে কলম দিয়ে সাহায্য করলেন।

মাকে নিয়ে এসেছেন এক তরুণ। ভুল করে পাঁচ নম্বর দলে এসে বসেছেন। রেজিস্ট্রেশনের কাগজও জমা দেননি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কি করতে হবে বলে দিলেন। তরুণ তার মাকে নিয়ে ডেস্কের কাছে চলে গেলেন।

প্রবাসীদের অনেকেই ছিলেন খুব টেনশনে। একবার বিএমইটি ডেস্কে যাচ্ছেন আরেকবার সিরিয়ালে দাঁড়াচ্ছেন। তাদের রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা না নিয়ে দশ জন করে করে সরাসরি ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। একজন বিজিবি সদস্য বার বার হ্যান্ড মাইকে বলছেন, প্রবাসীরা তার সামনে গিয়ে যেন লাইনে দাঁড়ান।

এক দম্পতি ভুল করে প্রবাসীদের সিরিয়ালে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে বুঝিয়ে জেনারেল ডেস্কে পাঠান। সেখানে রেজিস্ট্রেশনের কাগজ জমা দেন। তার সিরিয়াল পরে ৮ নম্বর দলে।

কথা হয় টিকা নিতে আসা তসলিমের সঙ্গে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জব করেন তিনি। জানালেন, রেজিস্ট্রেশনের বয়স কমানোয় এখন টিকা নিতে পারছেন তিনি। হাসপাতালের পরিবেশে খুবই খুশি তিনি।

টিকা নিতে যারা এসেছেন তাদের অনেকই সিঙ্গেল মাস্ক পরেছেন, কেউ আবার ডাবল মাস্ক পরেছেন। একজনকে দেখলাম মাস্কের ওপরে ফেসশিল্ডও পরেছেন।

হাসপাতালে ঘণ্টাখানেক ছিলাম। এতো এতো মানুষ, এরপরও কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। ভিড়-ভাট্টা ঠেলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে— সবাই টিকা নিচ্ছেন। আমিও নিলাম। যারা এখনও নেননি। দ্রুত নিয়ে ফেলুন। আল্লাহ, আমাদের হেফাজত করুন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর