ওয়ানস এ ফরেনার অলওয়েজ এ ফরেনার!

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

রহমান মৃধা | 2023-08-31 12:26:56

জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত দেশের সংখ্যা ১৯৬টি। এ ছাড়াও রয়েছ অনেক দেশ যারা সংগ্রাম করে চলছে স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য। মানবজাতি হাজারও বাধা বিঘ্ন সত্ত্বেও ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর সর্বত্র ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ ছাড়া। তাই একটি দেশে বিভিন্ন দেশের লোক আমরা দেখতে পাই। কিন্তু আজ বলবো একটি ছোট্ট শহরের কথা, যে শহর স্টকহোম সিটি থেকে মাত্র ১৫ মিনিট দূরে এবং খুবই ছোট্ট একটি শহর। অথচ সারা বিশ্বের লোকের বাস সেখানে। শুধুমাত্র ১৯৬টি দেশের নয়, তারও বেশি দেশের মানুষের ছোঁয়া রয়েছে এই শহরে। শহরের নাম রিনকেবি।

আজ গিয়েছিলাম সেখানে আমার গাড়ি ওয়াস করাতে। সারা জীবন মেসিন দিয়ে গাড়ি ওয়াস করি। হঠাৎ এক বন্ধু বলল যে রিনকেবিতে গাড়ি ওয়াস করে ভিতরে ও বাইরে মাত্র ৩০০ ক্রোনারে যা মেশিনে ওয়াস করলে ১৫০০ ক্রোনার সঙ্গে গাড়ি রেখে আসতে হবে এবং পরের দিন আনতে হবে। এখানে বুকিং ছাড়াই চলে গেলাম। ঢুকতেই তারা আমার গাড়ি নিয়ে গেল এবং চার জনে মিলে ধোওয়া-মোছার কাজ শুরু করল। চারজনের মধ্যে রয়েছে আফগান, মেক্সিকান, আফ্রিকান ও উজবেক।বেশ কৌতুহলী হয়ে পড়লাম!

এত বছর স্টকহোমে আছি, অথচ দেখা বা জানা হয়নি চক্ষু মেলিয়া। কী জাদু রয়েছে এ রিনকেবিতে যে সব দেশের লোকের বসবাস এখানে! এখানে খাদ্য দ্রব্য থেকে শুরু করে সব কিছু তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ঘর-বাড়ির অবস্থাও খুব আধুনিক নয়। বিভিন্ন দেশের দোকানপাট এখানে অবস্থিত, যেমন বাংলাদেশি শাকসবজি বা ফ্রোজেন মাছ এখানে পাওয়া যায়।

এখানে সবাই একসঙ্গে বসবাস করে চলছে কোনো রকম সমস্যা ছাড়া। এখানকার সবাই রিনকেবি সুইডিস ভাষায় কথা বলে। ১০০% সুইডিস এক্সেন্ট নয়। বিদেশি মিশ্রণ এর জন্য দায়ী। স্কুল বাস এসে হাজির, হঠাৎ নজরে পড়ে গেল এক মজার দৃশ্য! ছেলেরা আগে বাসে উঠল পরে মেয়েরা এবং শুধু কি তাই মেয়েরা বাসের পিছনে গিয়ে বসল। আমি তো অবাক! জিজ্ঞেস করতেই তারা বলে এখানে স্পেশাল স্কুল রয়েছে যেখানে ধর্মীয় কারণে আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে।এখানে প্রত্যেকেই যার যার ধর্ম ও সংস্কৃতি শক্ত করে ধরে রাখতে চেষ্ঠা করছে যার কারণে অতি কাছে বসবাস করা সত্ত্বেও একে অপরের থেকে দুরে বসবাস করছে মনের রাজ্যে।

ছোট্ট একটি শহর রিনকেবি যেখানে কমপক্ষে দু’শোরও বেশি দেশের লোকের বাস সত্ত্বেও মনে হলো দু’শোটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ। নানা কারণে এসব লোক তাদের নিজেদের স্বদেশ ছেড়ে পাড়ি দিয়েছে সুইডেনে। মনে হচ্ছে সবাই অর্থের কারণে এখানে পাড়ি জমিয়েছে। এরা এখানে না করছে ভোগ তাদের নিজেদের দেশের সবকিছু, না সুইডেনের। তবে অর্থনৈতিকভাবে সব সুযোগ সুবিধে আছে তাদের। টাকা পয়সা রোজগার করতে করতে হঠাৎ জীবনের সময় শেষ হয়ে যাবে। অর্থের বড়লোক হতে পারে তারা, জানিনে মনের বড়লোক কতখানি এরা! সব দেখে মনে হলো -আশা আছে, ভাষা নেই, সুখ আছে,শান্তি নেই, - ওয়ানস এ ফরেনার অলওয়েজ এ ফরেনার।

দেখেছি এমনটি লন্ডনের মত শহরে, নিউইয়র্কে, মঘ্যপ্রাচ্যে, ইটালিতে, প্যারিসে, স্পেনে আরো অনেক শহরে। আমার ভাবনা থেকে একটি কথাই বলতে ইচ্ছে হয় জীবনের মূল্য কী? কিসের জন্য বেঁচে থাকা? কেনই বা সব ছেড়ে এই দূরপরবাসে নির্জনতায় ঘর বাধা? আমাদের নিশ্বাস নিতে, বিশ্বাস, দর্শন,স্পন্দন পেতে, যদি অন্ন,বস্ত্র, বাসস্থানের মত সংগ্রাম করতে হতো, তাহলে কি হতো আমাদের জীবনের? হতো কি সামর্থ তখন এমনটি করে বেঁচে থাকার! সামান্য অন্ন,বস্ত্র ও বাসস্থানের সংগ্রামে ভালোবাসার স্বদেশ বিসর্জন দিয়ে আজ এত দূরে, বহু দূরে! স্রষ্টার শ্রেষ্ট মানব জাতির জন্মে এবং মৃত্যুতে নেই কোনো ভেদাভেদ, তবে কেন মাঝখানের সময়ের মধ্যে এত ব্যবধান? আর কবেই বা হবে এর সমাধান!

রহমান মৃধা: সুইডেন প্রবাসী।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর