সকল শিল্পের গতিশীলতা বজায় রাখতে এভিয়েশনকে বাঁচিয়ে রাখুন

, যুক্তিতর্ক

মোঃ কামরুল ইসলাম | 2023-08-26 21:17:37

বাংলাদেশের এভিয়েশন না হতে পারলো আমদানী নির্ভর আবার না হতে পারলো রপ্তানীমূখী শিল্প। কিন্তু রপ্তানী কিংবা আমদানী নির্ভর সকল শিল্পকে গতিশীলতা দিতে এয়ারলাইন্সগুলো সেবা দিয়ে যাচ্ছে। জাতীয় বিমান সংস্থাসহ বেসরকারী বিমান সংস্থাগুলো চরম ব্যবসা সংকটে ভুগছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর পাশে থেকে সরকার সকল ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে। বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনাসহ বিভিন্ন চার্জ প্রদানে সহায়তা করছে। সাথে জেট ফুয়েল প্রাপ্তিতে পরযাপ্ত সুযোগ পাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।

হাজার হাজার কোটি টাকা বকেয়া থাকার পরও সিভিল এভিয়েশন ও পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে সুবিধা প্রাপ্তি যা বেসরকারী এয়ারলাইন্স এর সাথে লেবেল প্লেয়িং ফিল্ডের পরিবর্তে উঁচু-নিচু গ্রাম্য মাটির রাস্তার কথাই মনে করিয়ে দেয়।

করোনাভাইরাসের বিস্তার লাভ করার পর থেকে সারা বিশ্বের আকাশ পথ আজ নিষেধাজ্ঞার কবলে। প্রায় ১৭ মাস হতে চললো বাংলাদেশের আকাশ পরিবহন অনেকটা বিপরযস্ত অবস্থায় রয়েছে। চীনের উহানে উৎপত্তি লাভের পর থেকে মানুষের কাঁধে ভর করে করোনাভাইরাস বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছে। যা আজও চলমান।

কোথাও কোথাও দু-তিনবার ভ্রমণ করে ফেলেছে। সর্বপ্রথম যে শিল্পটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা হচ্ছে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে বিশ্বের ট্যুরিজম আর হোটেল ইন্ডাস্ট্রি। যার খরগ থেকে এখনো বের হতে পারেনি।

প্রায় ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের প্রায় দেড় কোটি মানুষ প্রবাসী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করছে। বাংলাদেশে ইন্টারন্যাশনাল এভিয়েশন মার্কেটের প্রায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে জাতীয় বিমান সংস্থাসহ বেসরকারী এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে।

নানা চড়াই উৎরাই পার হয়ে বিভিন্ন সব নামীদামী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে বর্তমানে আন্তর্জাতিক রুটের মার্কেট শেয়ার দখল করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু করোনাকালে আকাশপথে সরকারের বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা আর বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন ধরনের নিয়ম কানুনের বেড়াজালে পরে যারপর নাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এয়ারলাইন্সগুলো। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত এয়ারলাইন্সও চরম সংকটের মধ্য দিয়ে দিনানিপাত করছে।

গত ২৫ বছরে বেসরকারী বিমান সংস্থার যাত্রা শুরুর পর থেকে বাংলাদেশে ৭ থেকে ৮ টি এয়ারলাইন্স বন্ধ হয়ে গেছে। টিকে আছে দু’টি এয়ারলাইন্স ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভো এয়ার। কাগজে কলমে না টিকিয়ে রেখে ব্যবসা করার মধ্য দিয়ে এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রাখলে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে যাবে।

জীবন ও জীবিকা উভয়কে প্রাধাণ্য দিয়ে সরকার রপ্তানীমূখী শিল্পকারখানাগুলো খুলে ব্যবসাকে সচল রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বর্তমান সময়ে সকল ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাজার হাজার শ্রমিক কর্মকর্তা-কর্মচারী একই শেডে কাজ করবে।

সবচেয়ে সুরক্ষিত করোনার শুরু থেকে অনেক বেশী স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে পরিচালিত এয়ারলাইন্স সেক্টরকেও ব্যবসা পরিচালনার সুযোগ দিলে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়তো না।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময়ই যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। জীবন বাঁচাতে তিনি যেমন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন কারযক্রম হাতে নিয়েছেন তেমনি তিনি জীবিকাকে প্রাধান্য দিয়ে শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত ও নিয়েছেন।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও নভোএয়ার আজ দেশের পতাকাকে সমুজ্জ্বল রাখতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এর সাথে বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে। দেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত প্রাইভেট এয়ারলাইন্সগুলো কাজ করছে।

উন্নয়নের সোপান বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। বাংলাদেশ বিনির্মানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। আকাশপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের ফলে দেশের শিল্প মালিকরা সারদেশে শিল্পকারখানা গড়ে তুলছেন।

দীর্ঘ সময়ের জন্য যদি আকাশ পথ অচল হয়ে পড়ে দেশের শিল্পকারখানাগুলোর স্বাভাবিক কারযক্রমও ব্যাহত হবে। স্বাস্থ্য সতর্কতামুলক সকল ধরনের বিধিনিষেধ প্রয়োগ করেও যদি আকাশপথকে উন্মুক্ত রাখা যায় তবে শুধু এয়ারলাইন্স নয় এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে যাবে। এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি বেঁচে থাকলে হাজার হাজার ট্রাভেল এজেন্সি, ট্যুর অপারেটর আর সেবা খাতের আরেকটি অপরিহারয হোটেল ইন্ডাস্ট্রি বেচে থাঁকবে।

সবাই গর্ব করে বলি আমাদের মাথাপিছু আয় দাড়িয়েছে ২২২৭ ইউএস ডলার। আজ যদি সবাই সঠিকভাবে জীবিকা নির্বাহ করতে না পারে তাহলে আমাদের মাথাপিছু আয় কোথায় গিয়ে দাড়াবে? দেশের জিডিপিতে যে কন্ট্রিবিউশন আছে এভিয়েশন, ট্যুরিজম আর হোটেল ইন্ডাস্ট্রির, সব কিছু বন্ধ করে রাখলে জিডিপিতে কন্ট্রিবিউশনও করা সম্ভব হবে না।

এয়ারলাইন্সগুলো চালু থাকলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের আয়ের পথও রুদ্ধ হবে না। এখাতের সাথে প্রায় ৪০ লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এখাতে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের কি হবে? এই বিশাল জনগোষ্টির আশ্রয় কোথায় হবে?

দেশীয় এয়ারলাইন্স কোম্পানীগুলো রপ্তানিমূখী শিল্প নয় কিন্তু রপ্তানিতে সহায়তা করছে আর বিশ্বের নামীদামী সব এয়ারলাইন্সগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে বৈদিশিক মূদ্রা অর্জন করছে। সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এই খাতকে বাচিয়ে রাখুন।

বন্ধ হওয়া এয়ারলাইন্সের মিছিলকে দীর্ঘায়িত না করে বর্তমানে পরিচালিত এয়ারলাইন্সগুলোকে টিকিয়ে রেখে বাংলাদেশের এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সকলের এগিয়ে আসা উচিত।

এ সম্পর্কিত আরও খবর