মানবিক বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

, যুক্তিতর্ক

মো. কামরুল ইসলাম | 2023-09-01 22:37:39

করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর থেকে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশীয় এভিয়েশনে মানবিক এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়েছে। যাত্রীদের কষ্ট লাঘবে এগিয়ে এসে প্রশংসা কুড়িয়েছে বেসরকারি এই সংস্থা।

করোনাভাইরাস সারাবিশ্বে মহামারিতে রূপ ধারণ করায় ২০২০ সালের মার্চ থেকে সারাবিশ্বের আকাশপথ বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। বরাবরের মতোই ব্যবসার চেয়ে সেবাকেই প্রাধান্য দিয়ে করোনাকালে যাত্রীদের নানামুখী সেবায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউএস-বাংলা।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবে একের পর এক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্তিমিত হয়ে গিয়েছিলো। তখনও বাংলাদেশের একমাত্র ক্যারিয়ার হিসেবে ইউএস-বাংলা স্বল্প পরিসরে চীনের গুয়াংজুতে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

বিশ্বব্যাপী করোনার থাবায় চিকিৎসা ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। তখন দেশীয় স্বাস্থ্যখাতের পাশে থাকার চেষ্টা করেছে ইউএস-বাংলা। মহামারির শুরুর দিকে কোথাও আশানুরূপ চিকিৎসাসামগ্রী ছিলো না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকেও কিছু আমদানি করা যাচ্ছিল না। ঠিক তখন স্বাস্থ্যসেবা চলমান রাখতে অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের মতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউএস-বাংলা। এর অংশ হিসেবে চীন থেকে পিপিই, হ্যান্ড সানিটাইজার, হ্যান্ড গ্ল্যাভস, সার্জিক্যাল মাস্ক, ফেস শিল্ড, করোনার নমুনা পরীক্ষার বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস উপকরণের কাঁচামাল বিনা খরচে বাংলাদেশে আনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে এই এয়ারলাইন্স। এছাড়া চিকিৎসক ও নার্সসহ স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের হাজার হাজার চিকিৎসাসামগ্রী উপহার দিয়েছে ইউএস-বাংলা।

ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ নিজেদের সবশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে। প্রয়োজনে কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদেরও কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ প্রক্রিয়াসহ চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছে। সারাবিশ্ব যখন অবরুদ্ধ তখন গুয়াংজু রুটের যাত্রীদের বিনামূল্যে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা রেখেছে ইউএস-বাংলা।

করোনার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লকডাউন থাকায় বাংলাদেশি নাগরিকরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। দেশীয় পর্যটক, বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থী কিংবা চিকিৎসা নিতে যাওয়া বাংলাদেশিরা বিদেশে গিয়ে আটকা পড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছিলো। তখন মানবিকতা দেখিয়ে ব্যবসাকে প্রাধান্য না দিয়ে সেবার ওপর গুরুত্বারোপ করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ইউএস-বাংলা। বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনে দুবাই, আবুধাবি, চেন্নাই, দিল্লি, কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, হ্যানয় ও ফ্র্যান্সের প্যারিসে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

যাত্রী পরিবহন যখন বন্ধ ছিলো, কার্গো পরিবহনের অবস্থাও অনেকটা বেসামাল হয়ে পড়ে। তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স যাত্রীবহনের এয়ারক্রাফটকে বিশেষ ব্যবস্থায় কার্গো এয়ারক্রাফটে রূপান্তর করে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে দারুণ ভূমিকা রেখেছে। কলকাতা, ব্যাংকক, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করেছে।

করোনায় অনেক বাংলাদেশি বিভিন্ন দেশে মারা গেছে। তাদের মরদেহ বহনের জন্য বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করেছে ইউএস-বাংলা। চার ঘণ্টার নোটিশে এই সংস্থা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের মরদেহ থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে।

সারাবিশ্বের বিখ্যাত বিভিন্ন এয়ারলাইন্স করোনাকালীন স্বল্প সময়ের নোটিশে হাজার হাজার কর্মচারী, কর্মকর্তা, পাইলট, কেবিন ক্রুকে বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে কিংবা গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিতে বাধ্য হয়েছে। বাংলাদেশে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ গত বছর করোনার শুরুতে সব ধরনের ফ্লাইট কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে কর্মচারীদের বিনাবেতনে ছুটি দিয়েছে। কিন্তু ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স কর্মচারী ছাঁটাই প্রক্রিয়ায় না গিয়ে সব কর্মচারীদের চাকরিতে বহাল রেখেছে। করোনাকালীন কর্পোরেট জগতে এটি মানবিকতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।

করোনার প্রথম ধাপে সিভিল এভিয়েশন অথরিটি প্রায় দুই মাস পর স্বাস্থ্য সতর্কতা হিসেবে বিধিনিষেধ দিয়ে অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি প্রদান করে। তখন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতি জেনেও নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে। এর মাধ্যমে দেশের এভিয়েশন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সব ধরনের স্বাস্থ্য সতর্কতা মেনে যাত্রীদের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে ইউএস-বাংলা। যাত্রীদের এভিয়েশনমুখী করতে অভ্যন্তরীণ সব রুটে মাত্র ২০০০ টাকা ভাড়ায় ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। ব্যবসা নয়, সেবাকেই প্রাধান্য দিয়েছে ইউএস-বাংলা।

গত প্রায় একমাস ধরে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় শুধু বিদেশগামী কিংবা বিদেশফেরত যাত্রীদের সেবা দিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স নিশ্চিত ব্যবসায়িক ক্ষতির পরও ঢাকা থেকে প্রতিদিন চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর ও সৈয়দপুরে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ইউএস-বাংলা সবসময়ই চেয়েছে, যাত্রীরা যেন আস্থার সংকটে না পড়েন। মানুষের আস্থা ও ভালোবাসায় দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও একটি শক্ত ভিত তৈরির প্রচেষ্টায় মনোনিবেশ করেছে এই সংস্থা। বাংলাদেশি যাত্রীদের ওপর পূর্ণ আস্থা রেখেই ইউএস-বাংলা বিদেশে সুনামের সঙ্গে ফ্লাইট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

একটি দেশের আকাশপথ সচল থাকলে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি ত্বরানিত হয়- ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স এটি বিশ্বাস করে। একইসঙ্গে আকাশপথ সচল রাখতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখছে।

এয়ারলাইন্স শুধু একটি ব্যবসা নয়, এটি সেবার একটি দৃষ্টান্ত। এটি পরতে পরতে মেনে এগিয়ে যাচ্ছে ইউএস-বাংলা। যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশ পেরিয়ে বাংলাদেশি জনগণ ও প্রবাসীদের আস্থার প্রতীক হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এয়ারলাইন্সটি। আজ করোনা মহামারিতে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দেশ-বিদেশে যাত্রীদের কাছে একটি মানবিক এয়ারলাইন্সে।

লেখক: মো. কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

এ সম্পর্কিত আরও খবর