কার মুখে কালিমা লেপন?

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 09:56:39

গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনো দাবি নিয়ে আন্দোলন করার অধিকার সবারই আছে। দাবি ন্যায্য হোক আর অন্যায্য। কারণ ন্যায্য-অন্যায্য বিষয়টা আপেক্ষিক। কদিন আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোন্দোলন হয়েছে অনেকেই তাকে ন্যায্য মনে করেছেন। কিন্তু আমার কাছে সে আন্দোলনকে অন্যায্য মনে হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রতি আমার নৈতিক সমর্থন না থাকলেও তাদের আন্দোলন করার অধিকারের প্রতি আমার সম্পুর্ন শ্রদ্ধা ছিল।

আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ এবং সরকারি দলের হামলার নিন্দা জানিয়েছি। আন্দোলন করার অধিকার সবারই আছে। তবে তা হতে হবে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ। আপনার আন্দোলন করার অধিকার যেন অন্য কারো স্বাভাবিক চলাফেরায় বিঘ্ন সৃষ্টি না করে, কারো নিরাপত্তার জন্য হুমকির কারণ না হয়। এই যে নানা কারণে হুটহাট শাহবাগ চত্বর আটকে ফেলা হয়; এটা অন্যায়, অনুচিত। শাহবাগে দুটি বড় হাসপাতাল আছে। শাহবাগে রাস্তা আটকে আন্দোলন করলে রোগীদের অসুবিধা হয়। মানুষকে জিম্মি করা বা সরকারকে ব্ল্যাকমেইল করার ক্ষমতা আপনার দাবি আদায়ের হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়।

আপনার দাবি আদায় হবে দাবির যৌক্তিকতা দিয়ে। কিন্তু আমাদের দেশে ধারনাটা উল্টো। যে যত বেশি মানুষকে জিম্মি করতে পারে, তার দাবি তত দ্রুত পূরণ হয়।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে পরিবহণ শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আমার দৃষ্টিতে তাদের দাবি অন্যায্য। কিন্তু শ্রমিকদের দৃষ্টিতে নিশ্চয়ই তাদের দাবি ন্যায্য। কিন্তু ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করারও কিছু নিয়ম-কানুন আছে। পরিবহন শ্রমিকরা চাইলেও একদিনের নোটিশে সারাদেশ অচল করে, মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ে ধর্মঘট করতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখছি অন্যায্য দাবিতে অন্যায় এ আন্দোলন প্রতিহত করতে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ বিরোধী দল কোনো আন্দোলন করলে সরকার সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এই অবরোধ বিরোধী দলের ডাকা হলে এই পরিবহন শ্রমিকরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামতো।

২০১৪-১৫ সালে পরিবহন শ্রমিকরা সরকারের পক্ষে রাস্তায় ছিল। তার প্রতিদান হিসেবেই কি সরকার আজ পরিবহন শ্রমিকদের আন্দোলন দমনে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।

বিনা নোটিশে ধর্মঘট করায় পরিবহন শ্রমিকদের সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। কিন্তু সরকারের কোনো উদ্যোগই নেই। ৪৮ ঘণ্টা ধরে দেশ অচল, সরকার কি দেখতে পাচ্ছে না?

তারপরও আমি ধরে নিচ্ছি, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট ডাকার অধিকার আছে। কিন্তু সেই ডাকে কারো তো সাড়া না দেয়ারও অধিকার আছে। কিন্তু পরিবহন শ্রমিকরা যেভাবে রাস্তায় মাস্তানি করছে, আতঙ্ক ছড়াচ্ছে; তা অবশ্যই শাস্তিযোগ্য। যারা রাস্তায় নামা চালক বা যাত্রীদের মুখে পোড়া মবিল মাখিয়ে দিচ্ছে, তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।

পৃথিবীর সব কঠোর আন্দোলনেও অ্যাম্বুলেন্স, গণমাধ্যম, জরুরি সেবা আওতামুক্ত থাকে। কিন্তু এই প্রথম ব্যতিক্রম দেখলো বাংলাদেশ। পরিবহন শ্রমিকরা অ্যাম্বুলেন্সে মবিল মেরেছে, অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় মৌলভীবাজারে এক শিশুর মৃত্যুর খবর এসেছে পত্রিকায়। নারায়নগঞ্জে মহিলা কলেজের বাস আটকে দেয়া হয়েছে। প্রতিবাদ করায় এক ছাত্রীর স্কুল ড্রেসে মবিল মাখানো হয়েছে। এ কেমন আন্দোলন?

কয়েকদিন আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময়ও দেখেছি, অ্যাম্বুলেন্স দ্রুতগতিতে পার করে দিচ্ছে। আর এখন পরিবহন শ্রমিকরা মানুষ মারবেন, কিন্তু তাদের বিচার করা যাবে না; এই অন্যায় দাবির আন্দোলনে অ্যাম্বুলেন্স আটকে মানুস মারছে।

গায়ে পোড়া মবিল নিয়ে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছাত্রী বা মুখে মবিল মাখা সেই চালকের অসহায় দৃষ্টি কি আমাদের লজ্জিত করে না? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার সে দায়িত্ব পালনের চেষ্টাই করেনি। পুলিশকে কোথাও দেখা যায়নি। পরিবহন শ্রমিকরা বিনা বাধায় রাস্তায় নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। পরিবহন শ্রমিকরা কার মুখে কালিমা লেপন করলেন? শ্রমিকদের নেতা শাজাহান খান কি এই কালিমা লেপন করা মুখগুলো দেখেছেন? অবশ্য মানুষের মৃত্যুতে যিনি হাসেন, কালিমা তার মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে বলে মনে হয় না।

প্রভাষ আমিন: হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ

এ সম্পর্কিত আরও খবর