লিটন দাসে কেন মুগ্ধ হবেন না?

, যুক্তিতর্ক

মনোয়ার রুবেল | 2023-08-31 19:58:36

ক্রিকেটারদের উচিৎ সমালোচনা কানে না নেয়া। এটা সব খেলোয়াড়ই মেনে চলেন। কিন্তু ইদানীং বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা খেলা ছেড়ে সমালোচনা নিয়েই বেশি ব্যস্ত। তারা বারবার দর্শকদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দিন শেষে তারাও মানুষ৷ যদিও কখনো কাউকে বলতে শুনিনি, তারা রোবট বা তারা লোহার সিন্ধুক। তবু তারা বারবার মানুষ পরিচয় তুলে ধরছেন। তারা বোঝাতে চাইছেন তারা সমালোচনা নিতে পারছেন না। সমালোচনা নেয়া বা না নেয়ার বিষয় তখনই আসে যখন তারা সমালোচনা পড়ছেন বা শুনছেন৷

অনলাইনের দুনিয়া যে যা ইচ্ছা লিখে দেয়৷ কোন সেন্সর নাই সম্মান নাই। অসম্মানজনক লেখাগুলো মুশফিক লিটনরা কোথায় পড়ে? নিশ্চয়ই ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে। খেলার ব্যস্ত শিডিউলে তারা ফেসবুকিং করার সময় ও অনুমতি কিভাবে পায়? সেতো অত্যাশ্চর্য প্রশ্ন। ফুটবল ক্রিকেট যাই হোক, এক সময়তো সাংবাদিকও বিধিনিষিধের মধ্যে খেলোয়াড়দের সাথে অন্তরঙ্গ মিশতে পারত না। কারণ, বিশ্বকাপ চলাকালে সাংবাদিকের প্রশ্নে খেলোয়াড় মনস্তত্বে চাপ পড়ে। ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে দুর্বল চিত্তের পরিচিত বাংলাদেশী ক্রিকেটাররা কিভাবে ফেসবুক ইনস্টাগ্রাম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছে? তা এক অত্যাশ্চর্য প্রশ্ন। এসব মাধ্যমের জাঙ্ক কমেন্টগুলো মুশফিকদের মগজে যে কতটা ঢুকেছে ইংল্যান্ডের সাথে বিক্ষিপ্ত খেলাই তার প্রমাণ।

মুশফিক বলেছেন সমালোচকরা যেন তাদের চেহারা আয়নায় দেখেন। এটি অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও অমানবিক মন্তব্য৷ দর্শক যখন উচ্ছ্বসিত হয় তাদের ভালোবাসা দুহাতে ঢেলে দেয়। তখন তারা বলে না, মুশফিক তুমি চেহারা আয়নায় দেখো। যখন সমালোচনা হয় তখন মুশফিকের নিশ্চয়ই এই কথা বলা অনধিকার জবরদস্তি। প্রসঙ্গত উঠে আসে মুশফিক সম্ভবত বোর্ডের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট কারো কথায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলেন৷ নিশ্চয়ই তিনি বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শ্রীলঙ্কার সাথে অবিবেচকের মতো হারের পর তিনি ক্রিকেটারদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে সমালোচনা করেছেন৷

তিনিও হয়তো যুক্তি দিবেন দিনশেষে তিনিও মানুষ। আমরা সবাই যে মানুষ এটাই মনে হয় এই মুহূর্তের খাঁটি সত্য। মানুষ বলেই আমরা খুশিতে ভেসে যাই, আবেগে ভেঙে পড়ি৷ মানুষ বলে আমরা দীর্ঘ কুড়ি বছরের বেশি সময় কোন ইভেন্টে কাপ না জিতেও ক্রিকেটারদের সমর্থন দিয়ে যাই৷ প্রতিবারই আমরা হতাশ হই, প্রতিবারই আমরা পরের বারের আশায় বুক বাঁধি। দুর্বল দলের বিরুদ্ধে ও ঘরের মাঠে সাজানো পিচে কয়েকটি জয় ছাড়া দুই দশকে দর্শক কী পেয়েছে? বাঙালি অতি আবেগী বলেই ক্রিকেটারদের অসামর্থতাকে ক্ষমা করে দেয়। 

কিন্তু ক্রিকেটাররা ইদানীং যেন বেশীই আবেগী হয়ে পড়েছেন৷ বেশিই পরকথা শুনছেন। দর্শক আবেগী, বোর্ড আবেগী, সভাপতি আবেগী, ক্রিকেটার আবেগী। এত আবেগ দিয়ে চলছে কিভাবে?

ক্রিকেটার হলে আবেগ থাকা যাবে না। সমালোচনা গায়ে মাখা যাবে না। কানকথা শোনা যাবে না৷ বাংলাদেশ দলে একমাত্র লিটনদাসকে ক্রিকেটার মনে হয়। তাকে নিয়ে এত হইচই, এত কথা। তিনি চুপচাপ৷ তিনি তার মত প্রতি ম্যাচে খেলছেন। আউট হচ্ছেন ক্যাচ ছাড়ছেন। তিনি আবেগে ভেসে যাচ্ছেন না, কে কী বললো তাতেও কিছু তার যায় আসছে না। দল হারলো জিতলো তাতেও ভেঙে পড়েছে মনে হলো না।

লিটনের প্রতি এমন ধারণাকে আপনি সমালোচনাও বলতে পারেন, মুগ্ধতাও বলতে পারেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর