নয়া মেরুকরণ: যুক্তরাষ্ট্র বনাম চীন!

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 12:20:30

মেরুকরণ একটি পরিচিত শব্দ এবং রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত। রাজনৈতিক মেরুকরণ বলতে বিভিন্ন গোষ্ঠী, ধর্ম, স্তরের লোকের এক এক রাজনৈতিক দলের দিকে ধাবিত হওয়াকে চিহ্নিত করা হয়। আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের দিকে ঝুঁকে যাওয়াকে মেরুকরণ বলে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে বিশ্ব রাজনীতি ছিল দ্বিমেরুতে বিভক্ত। একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগী দেশগুলো এবং বিপরীত দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার পক্ষের দেশগুলো।

বিশ্বের সেই মেরুকরণ আমূল পরিবর্তন ঘটেছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের একক শক্তি রূপে আবির্ভূত হয়। সূচিত হয় এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থা। কিন্তু তিরিশ বছর পর বিশ্ব এখন নতুন মেরুকরণের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে। নতুন এই মেরুকরণের পেছনে প্রধান শক্তি হচ্ছে চীন, যদিও বিশ্বশক্তির শীর্ষ স্থান এখনও যুক্তরাষ্ট্রের দখলে।

সর্বশেষ এক সমীক্ষায় সিডনির বিশ্ববিখ্যাত লোই ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, এশীয় দেশগুলোর মধ্যে আর্থিক, রাজনৈতিক, সামাজিক প্রভাবের ক্ষেত্রে আমেরিকা এই প্যান্ডেমিক-উত্তর সময়ে পিছিয়ে দিয়েছে চীনকে। এক নম্বরে আছে আমেরিকা। প্যান্ডেমিকের সময় ভারত এবং চীন তাদের সার্বিক প্রভাব অনেকটা হারিয়েছে এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে।  দ্বিতীয় স্থানটি চীনের, তৃতীয় জাপান ও চতুর্থ স্থানে আছে ভারত।

১৯৪৯ সালে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশকারী নয়া চীন নতুন উৎপাদন ব্যবস্থার আলোকে পরিচালিত হয়ে বিগত ৭০ বছরে এগিয়েছে অনেক। প্রথম ৪০ বছর তেমন কোনো সফলতা দেখাতে না পারলেও নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে চীন ক্রমান্বয়ে বিশ্ববাণিজ্যে প্রবেশ করতে থাকে। অবশেষে চীন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মার্কিন অর্থনীতির প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছে।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, বিশ্বের সকল পণ্য উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে চীন। বিশ্ব অর্থনীতিতে চীনের এই অবস্থান সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেনে নিতে পারেনি। নিজ দেশে জাতীয়তাবাদী ধারণা উসকে দিয়ে চীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বাণিজ্য অবরোধ আরোপ শুরু করেন তিনি। এমন পরিস্থিতিতে শুরু হয় বৈশ্বিক মহামারি। কিন্তু চরম করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ের বেশকিছু ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নয়া মেরুকরণের বিষয়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য জি-৭, ন্যাটো সম্মেলন এবং গণতন্ত্র সন্মেলন।

বিগত জি-৭, ন্যাটো সম্মেলন ছিল অন্যান্য বারের চেয়ে আলাদা বৈশিষ্ট্যের। কারণ দুই সম্মেলনেই গুরুত্ব পেয়েছে চীন। বিশ্বে চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলায় জি-৭ বৈঠকে ‘বিল্ড ব্যাক বেটার ওয়ার্ল্ড (বিথ্রিডব্লিউ)’ নামক একটি উদ্যোগ প্রস্তাব করেন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এর মাধ্যমে স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে অবকাঠামো খাতে ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে, যেটি স্পষ্টতই চীনের ‘ওয়ান বেল্ড ওয়ান রুট’ প্রকল্পের পাল্টা প্রকল্প। অন্যদিকে সামরিক হুমকির কথা উল্লেখ করে চীনকে ‘সিস্টেমেটিক চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে অ্যাখ্যা দিয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো। স্পষ্টতই জি-৭ ও ন্যাটোর এমন অবস্থান চীনকে প্রতিপক্ষ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েই গৃহীত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই দুই জোটের পদক্ষেপ, নীতি-কৌশলের মূলে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক তথা ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি। আর এই নীতির অধীনেই ভারত, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র একটি চার দেশের জোট গঠন করেছে, যাকে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে ‘কোয়াড’। আফগানিস্তান থেকে সৈন্য সরিয়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্যাসিফিকে চীনের আরও কাছাকাছি নিজেকে সুসংহত করছে। কারণ, দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা বিশ্বেই চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব মোকাবিলা করা ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির লক্ষ্য, যা বাস্তবায়নে কাজ করছে ‘কোয়াড’ও। ফলে দক্ষিণ এশিয়া তথা ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে এক ধরনের ঠান্ডা লড়াই বা মেরুকরণ ক্রমেই দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ নীতির এজেন্ডায় ইন্দো-প্যাসিফিক ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার বিষয়টিও সুস্পষ্ট।  কারণ, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় ইন্দো-প্যাসিফিক নীতি বাস্তবায়নে ধীরগতি ছিল। ট্রাম্পের আমলে যার শুরু হয় ন্যাটোকে কেন্দ্র করে। ন্যাটো জোটভুক্ত ৩০টি দেশের চেয়ে বেশি ব্যয় করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাই ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে ন্যাটোতে এককভাবে বেশি অর্থ ব্যয়ের বিপক্ষে অবস্থান নেন এবং মিত্র দেশগুলোকেও অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। এতে জার্মানি, ফ্রান্স ও ইতালিসহ সবার সঙ্গে মার্কিন প্রশাসনের মতোবিরোধ দেখা দেয়। এরই প্রভাব পড়ে ইন্দো-প্যাসিফিক নীতিতে।

কিন্তু জো বাইডেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মিত্র দেশগুলোর মধ্যকার টানাপোড়ন দূর করে একত্রিতভাবে চীনকে মোকাবিলা করার কৌশল নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। চীনকে মোকাবিলা করতে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে পার্টনারশিপ বাড়ানোর পথে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। কারণ,  করোনা মহামারি ও অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে আবর্তিত ইউরোপ ন্যাটোকে শক্তিশালী করার বিষয়ে উৎসাহী নয়। তদুপরি, চীনের সঙ্গে সরাসরি ন্যাটোর মোকাবিলার বিষয়টি যতটা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের, ততটা ইউরোপের নয়। সেক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিকে পার্টনারশিপ মার্কিনিদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় বাইডেন কোয়াডের মাধ্যমে ভারত, জাপান, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে জোট করার চেষ্টা করেছেন। অন্যদিকে, জি-৭-এর সাতটি দেশের মধ্যে সবগুলোই পশ্চিমা। একমাত্র ব্যতিক্রম ও এশিয়ান দেশ জাপান। এই সাতটি দেশ মিলে চীনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে এক হয়ে।

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সর্বশেষ যে উদ্যোগটি সামনে এসেছে, তা হলো গত ৯ ও ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে 'দ্য সামিট ফর ডেমোক্রেসি' বা 'গণতন্ত্র সম্মেলন', যাতে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিশ্বের ১১০ দেশকে। বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ইতিবাচক কর্মসূচি হাতে নেয়া এবং যে সকল স্থানে গণতন্ত্র হুমকির মুখে রয়েছে সেগুলো মোকাবিলার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নেয়াই ছিল এই সম্মেলনের লক্ষ্য।

ভার্চ্যুয়াল প্লাটফরমে সম্মেলন উদ্বোধনের সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে লড়াইয়ের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র হঠাৎ করে আসেনি। দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের ফসল গণতন্ত্র।' উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো আয়োজিত এতো বড় আকারের  সন্মেলনে বিশ্বের ১১০ দেশকে আমন্ত্রণ জানালেও রাশিয়া ও চীনের কাউকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র। এর পাল্টা হিসাবে চীনও একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সেখানে বিশ্বের ১২০টি দেশ থেকে গবেষক, অধ্যাপকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট বাইডেনের 'গণতন্ত্র সন্মেলন'-এ যে দেশগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে দুর্বল গণতন্ত্র, এমনকি কিছু কর্তৃত্ববাদী চরিত্রের দেশও। চীনকে আমন্ত্রণ না জানালেও বাইডেন প্রশাসন এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তাইওয়ানকে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে কড়া ভাষায় নিন্দা জানিয়েছে চীন। এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে বিভক্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ বেইজিংয়ের। এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেয়েছেন ব্রাজিলের কঠিন ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জইর বলসোনারো। আবার ন্যাটো সদস্য রাষ্ট্র তুরস্ককে উপেক্ষা করা হয়েছে। 

'ফ্রিডম হাউজ ডেমোক্রেসি'র মতে আমন্ত্রিত ১১০ দেশের মধ্যে ৭৭ দেশ মুক্ত বা সম্পূর্ণভাবে গণতান্ত্রিক। তবে এরমধ্যে ৩১টি দেশ আংশিকভাবে মুক্ত এবং তিনটি দেশ একেবারেই মুক্ত নয়। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ইরাক, অ্যাঙ্গোলা এবং ডিআর কঙ্গো মুক্ত গণতন্ত্রের দেশ নয়। পাকিস্তানের স্কোর ৩৭ হলেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে, কিন্তু শ্রীলঙ্কার স্কোর ৫৬ হওয়ার পরও আমন্ত্রণ পায়নি। যদিও এই শীর্ষ সম্মেলন এড়িয়ে গেছে পাকিস্তান।

গণতন্ত্র সম্মেলন বিশ্বের জন্য তো বটেই, খোদ আমেরিকার জন্য নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত সদ্য-বিগত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একগুঁয়েমির নীতির কারণে সারা বিশ্বেই একঘরে হয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের পররাষ্ট্রনীতির সাফল্য বলতে সে আমলে বিশেষ কিছুই উল্লেখ করার মতো নেই। সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চীন বার বার আমেরিকাকে  টেক্কা দিয়েছে। বিশ্বে আমেরিকার কৌশলজনক উপস্থিতিও সঙ্কুচিত হয়েছে। ফলে প্রবীণ ও বয়েসী প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে মিত্র বাড়ানোর কাজ করতে হচ্ছে।

উল্লেখ্য করা প্রয়োজন যে, ক্ষমতায় আসার আগেই জো বাইডেন এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করছিলেন। তাঁর নির্বাচন-পূর্ব প্রতিশ্রুতি ছিল গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে মৈত্রী প্রতিষ্ঠার। সেই প্রতিশ্রুতির ধারাবাহিকতায় এ উদ্যোগকে দেখা যেতে পারে। এতে যারা কর্তৃত্ববাদের বিরোধিতা করছেন, যারা দুর্নীতি মোকাবিলার চেষ্টা করছেন এবং যারা মানবাধিকার রক্ষণ করছেন কিংবা যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরোধিতা করছেন, এমন মোট ১১০টি দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, এইসব ঘোষিত নীতিমালা উপেক্ষা করেও কোনো কোনো দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যেমন, পাকিস্তান, যেখানে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে সেনাবাহিনীই সরকার চালায় এবং  ভারত, যেখানে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন, সুশাসনের অভাব, মৌলিক নাগরিক অধিকার হননের জন্য দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ ও চরমভাবে সমালোচিত।

নানা প্রশ্ন এবং অসঙ্গতির পরেও বৈশ্বিক পরিসরে এই সন্মেলনের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। আন্তর্জাতিক মেরুকরণ ও বিশ্ব ক্ষমতার বিন্যাসের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের এই উদ্যোগের নানামুখী গুরুত্ব রয়েছে। আফগানিস্তান থেকে হটে গিয়ে দক্ষিণ চীন সাগর ও এশিয়া-প্যাসিফিককে সামনে রেখে সামরিক শক্তি জোট 'কোয়ার্ড' গঠনের পর পরই ১১০টি দেশকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের এই সন্মেলন যে কেবল শুভেচ্ছামূলক নয়, সে কথাও জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টে। সম্মেলন উপলক্ষে যারা দুর্নীতি, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত এবং যে সকল ব্যক্তি দেশে দেশে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে এমন ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। এটাই সন্মেলনের মূল হাতিয়ার। যার প্রমাণও তাৎক্ষণিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে উপস্থাপিত হয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, চীন যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রের তরফে নেয়া কোয়ার্ড ও অন্যান্য সামরিক তৎপরতার বিরোধিতা করছে, তেমনিভাবে এই রাজনৈতিক উদ্যোগ 'গণতন্ত্র সন্মেলন'-এর বিরুদ্ধেও দাঁড়িয়েছে। প্রয়োজনে পাল্টা জোটের পথেও এগুতে পারে চীন। সেক্ষেত্রে চীন রাজনৈতিক মতাদর্শের বদলে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের পথকেই বরাবরের মতো প্রাধান্য দিয়ে সবাইকে ডাকবে। কারণ, চীন গণতন্ত্র বা জনগণের অংশগ্রহণমূলক কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার চেয়ে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধি ও সাফল্য অর্জন করাকেই গুরুত্ব দেয়। আর গণতন্ত্র বা জনগণের অংশগ্রহণহীন রাজনৈতিক ব্যবস্থার কোনো অভাব নেই বর্তমান পৃথিবীতে।

ফলে বিশ্বব্যাপী সামরিক প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের মতোই রাজনৈতিক মতাদর্শিক বিবেচনায় গণতান্ত্রিক শাসন বনাম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব-সংঘাতের বিষয়গুলোও সামনে চলে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে, যা বিশ্ব পরিস্থিতির চলমান মেরুকরণকে আরও তীব্র এবং স্নায়ুযুদ্ধের মতো উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সঞ্চার করতে পারে।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর