দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশই নতুন বছরের প্রত্যাশা

, যুক্তিতর্ক

মহিউদ্দিন আহমেদ | 2023-09-01 19:38:13

কোন দেশ কতটা সভ্য তা বিচারের অনেক মানদণ্ড থাকতে পারে কিন্তু সবচেয়ে বড় পার্থক্য গড়ে দেয় দুর্নীতিমুক্ত পরায়নতার বিষয়টিই। কোন দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় যখন দুর্নীতি স্থায়ী আসন গেড়ে বসে তখন সেটা ওই দেশের জন্য মাথার ভিতর বিষ ফোঁড়ার মত হয়ে দাড়ায়। বিচার হীনতার সংস্কৃতি যেন দুর্নীতির আগুনে ঘি ঢালার ব্যবস্থা করে দেয়। দুর্নীতি প্রতিরোধের প্রথম দুটি ধাপই হলো, সচেতনা এবং সংগঠিত দুর্নীতির সঠিক বিচারের ব্যবস্থা করা। বর্তমানে বাংলাদেশে এই দুটো ব্যাপারেই আমরা খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছি তাতে কোন সন্দেহ নেই।

দুর্নীতির শুরুটা কিভাবে হয় সে বিষয় নিয়ে আপনাদেরকে একটা কৌতুক শোনাই।

এক ছোট্ট মেয়ে তার বাবাকে বলছে,বাবা দুর্নীতি কি জিনিস?

তখন বাবা বললো যাও তো মামুনি আমার জন্য একটি বিয়ার নিয়ে এসো, তারপর তোমাকে বলছি দুর্নীতি কাকে বলে।

কিন্তু আম্মু তো তোমাকে ড্রিংক করতে বারণ করেছে আব্বু, মেয়ে বললো।

শোন মামুনি আমার জন্য বিয়ার নিয়ে আসার সময় তুমি তোমার জন্য একটি আইসক্রিমও নিয়ে এসো।

ঠিক আছে আব্বু আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি বলে দৌড়ে চলে গেল মেয়ে।

আপাতত দৃষ্টিতে দেখতে নিরীহ ছোট ছোট উৎকোচ দেয়া বা নেয়ার সংস্কৃতি থেকে যে দুর্নীতির ছোট্ট বীজটির অঙ্কুরোদগম ঘটেছিলো, স্বাধীনতার ৫০ বছরে আজ তা বিশাল মহীরুহের আকার পেয়েছে। আমরা যদি সভ্য আর উন্নত একটি দেশের কাতারে যেতে চাই তবে আমাদেরকে ধীরে ধীরে এই বিশাল বিষ বৃক্ষের ডাল-পালা ছাঁটতে হবে। ধরেই নিয়েছি যেহেতু বিশাল গাছটি কাটা সম্ভব নয় তাই সময় নিয়ে এর বিনাশ ঘটাতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশ থেকেই দুর্নীতিকে সমূলে বিনাশ করা যায়নি, তাই বাংলাদেশ থেকেও এটা করা যাবেনা। কিন্তু এটাকে এমন একটি সহণীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে যেন মানুষ দুর্নীতি করতে ভয় পায় কিংবা করার আগে হাজার বার চিন্তা করে।

বার্লিনভিত্তিক ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) কর্তৃক পরিচালিত ‘দুর্নীতির ধারণা সূচক (সিপিআই) ২০২০’ এর বৈশ্বিক সূচকে ১৮০টি দেশের মধ্যে তালিকার নীচের দিক থেকে বাংলাদেশ ১২তম অবস্থানে আছে। ২০১৯ সালে নিম্নক্রম অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৪ তম। যদিও এই ব্যাখ্যাকে কোনভাবেই মানতে রাজি নয় দুর্নীতি দমন কমিশন। সত্য হলো অন্ধ হলেই তো আর প্রলয় বন্ধ থাকেনা। তাই দুর্নীতি বন্ধে প্রথমেই প্রয়োজন সদিচ্ছার। কারন বিচারব্যবস্থা থেকে আমলাতন্ত্র, ব্যবসা–বাণিজ্য থেকে শিক্ষাক্ষেত্র, সর্বত্রই দুর্নীতির কথা শোনা যায়।

গত বছরের শেষ দিনটিতে অর্থাৎ ৩১শে ডিসেম্বর ২০২১ এ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘৬১৯ কোটি টাকার সরকারি সার গায়েব’। জাগোনিউজ২৪ এ ২৯ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ‘সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এতিমের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ’।জার্মান ভিত্তিক ডয়েছে ভেলেতে ডিসেম্বর ৯ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘দুর্নীতিবাজ ধরবে দুদক, দুদক ধরবে কে’। অনলাইন আর ছাপানো পত্রিকায় প্রতিনিয়ত, প্রতিদিন এমন বহু শিরোনাম চোঁখে পরে, যার বিষয় বস্তু হলো দুর্নীতি।

দুর্নীতি রোধে আমরা কতটা আশাবাদী এ নিয়ে ঈষৎ পরিমার্জিত একটি কৌতুক আপনাদের সাথে শেয়ার করি। একবার ৩জন বৃদ্ধ মানুষ ঈশ্বরের সাথে দেখা করতে গেলেন।

১ম বৃদ্ধ যিনি একজন আমেরিকান তিনি ঈশ্বরকে প্রশ্ন করলেন, প্রভু আমার দেশে থেকে বর্ণ বৈষম্য কবে দূর হবে?

১০০ বছর লাগবে, ঈশ্বর বললেন।

শুনে বৃদ্ধ কাঁদতে শুরু করলেন আর বলতে লাগলেন, আমি তো সেটা দেখার জন্য তাহলে বেঁচে থাকবো না।

২য় বৃদ্ধ যিনি একজন রাশিয়ান তিনি ইশ্বরকে বললেন, প্রভু আমার দেশে আমেরিকার মত গনতন্ত্র কবে আসবে?

৫০ বছর লাগবে, ঈশ্বর উত্তর দিলেন।

শুনে বৃদ্ধ হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ইশ আমি তো তখন থাকবো এটা দেখার জন্য।

এবার ৩য় বৃদ্ধ যিনি একজন বাংলাদেশি তিনি ঈশ্বরকে শুধালেন, বাংলাদেশ কবে দুর্নীতিমক্ত হবে?

প্রশ্ন শুনে এবার ঈশ্বর নিজেই কাঁদতে শুরু করলেন আর বলতে লাগলেন, সেটা দেখার জন্য হয়ত আমি থাকবো না।

কৌতুক তো কৌতুকই হয়। আমরা আশাবাদী কারন আমরা বাঙ্গালী। আমরা স্বাধীনতার ৫০ বছরে অনেক অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছি। এখন একটি দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। আশা করি আমি বেঁচে থাকতেই হয়ত এমন বাংলাদেশ দেখে যেতে পারবো।

লেখক: সাংবাদিক ও সংগঠক

এ সম্পর্কিত আরও খবর